ডিআইজির পর এবার অতিরিক্ত ডিআইজি আলোচনায় কারা?

প্রকাশ | ২৯ মে ২০২২, ১৭:২৫

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক—ডিআইজি হিসেবে ৩২ কর্মকর্তার পদোন্নতির পর এবার অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন ১২৩ পুলিশ সুপার—এসপি। আর এজন্য পুলিশ ক্যাডারের চারটি ব্যাচের ৩৮০ কর্মকর্তার নাম এরইমধ্যে পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

যাদের নাম পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে ঘুরেফিরে আসছে বেশ কিছু কর্মকর্তার নাম। পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আছেন। এ বিষয়ে সোমবার (৩০ মে) বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন কমিটি বা ডিপিসির বৈঠক হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তরের একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছে।

অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে কারা পদোন্নতি পাচ্ছেন তা নিয়ে পুলিশের ভেতরে ও বাইরে নানা কৌতুহল ও আলোচনা আছে। নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২০তম এরপর ২১তম, ২২তম ও ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। এই চারটি ব্যাচ থেকে ৩৮০ জন পুলিশ সুপারের নাম সদরদপ্তর থেকে তালিকা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি সংক্রান্ত বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কমিটির সদস্যদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, অতিরিক্ত ডিআইজির পদ খালি আছে ১২৩টি। এর মধ্যে নবসৃষ্ট পদ ৮৮টি। আর আগে থেকে কিছু পদ খালি আছে। ফলে এবার অতিরিক্ত ডিআইজি পদে বড় পদোন্নতি হতে যাচ্ছে। তবে সব কটি পদে একসঙ্গে নাকি কয়েক ধাপে পদোন্নতি দেওয়া হবে সেটি সোমবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। তারপরই পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

অতিরিক্ত ডিআইজি হতে যেসব শর্ত

পুলিশের ১৭৮টি নতুন পদের গ্রেড ও বেতন নির্ধারণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির পর সেসময় গ্রেডসহ বেশ কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। এতে অতিরিক্ত ডিআইজির ৮৮টি পদ নির্ধারণ করা হয় চতুর্থ গ্রেডে।

নিয়োগ যোগ্যতায় বলা হয়েছে, এসপি অথবা এআইজি পদে কমপক্ষে দুই বছর এবং নবম গ্রেড বা তার ওপরের গ্রেডে ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই পদে বেতন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৭১ হাজার ২০০ টাকা।

আলোচনায় যাদের নাম

অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার আলোচনায় আছেন ২০তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে রয়েছেন—গাজীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, সিআইডির জেসমিন বেগম, মোহাম্মদ সাইদুর রহমান খান, এসবির মো. আসাদ উল্লাহ চৌধুরী, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজিদ হোসেন, সিআইডির খান মোহাম্মদ রেজওয়ান, কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি) হাসিনা রহমান। এছাড়া এই ব্যাচের আরো কয়েকজন মেধাবী, দক্ষ কর্মকর্তা নামও আসছে পদোন্নতির আলোচনায়।

২১তম ব্যাচ

২১তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ঢাকার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার, রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান, ডিএমপির ডিসি শ্যামল কুমার মুখার্জী, নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ডিসি আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, পুলিশ সুপার (এসপি) জয়দেব চৌধুরী, ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহামার উজ্জামান, পুলিশ সুপার (এসপি) দেলোয়ার হোসেন, ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম, কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা, রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন, মাদারীপুরের সাবেক পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারসহ বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।

২২তম ব্যাচ

২২তম ব্যাচ থেকে পিরোজপুরের সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির, ফেনীর সাবেক পুলিশ সুপার খন্দকার নুরুন্নবী, পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান, সিআইডির পুলিশ সুপার মাসুদ আহমেদ, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান, কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানের নাম আলোচনায় আছে। পাশাপাশি এই ব্যাচের বেশ কয়েকজন দক্ষ কর্মকর্তার নামও আসছে  আলোচনায়।

২৪তম ব্যাচ

এই ব্যাচ থেকেও বেশ কিছু কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে। তাদের মধ্যে নাম আসছে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শহিদুল্লাহ, শরীয়তপুরে পুলিশ সুপার এস. এম. আশরাফুজ্জামান, যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, মানিকগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান, ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল, বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর। এছাড়া এই ব্যাচ থেকে মেধাবী, দক্ষ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম শোনা যাচ্ছে।

পদোন্নতির বিষয়ে যা বলছেন সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি

সাবেক অতিরিক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. মোখলেসুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পুলিশে একজন অফিসারের পদোন্নতির বিষয়গুলো মূলত তার চাকরির অতীত ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে একজন কর্মকর্তা কতটুকু ভালো কাজ করেছেন, কত বড় বড় অ্যাচিভমেন্ট (অর্জন) আছে তার, সেগুলি বিবেচনা করা হয়।

‘তাছাড়া প্রতিবছর তাদের নিয়ে ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তারা বাৎসরিক যে রিপোর্ট দেন সেখানে কোনো নেগেটিভ রিমার্ক থাকলে সেটা পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। অনেক সময় অফিসাররা চেষ্টা করেন নিজেদের বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করার; এজন্য দৌড়াদৌড়িও করেন। তবে এটা কতটুকু কাজ করে আমার জানা নেই’—যোগ করেন সাবেক এই অতিরিক্ত আইজিপি।

এক প্রশ্নের জবাবে মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘পদবঞ্চিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। কারণ পদ সীমিত। কিন্তু পদের জন্য প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। কাজেই কিছু মানুষ পদবঞ্চিত হবেন, এটা ধরেই নেওয়া হয়। যতই প্রমোশনের বিষয়টি স্বচ্ছ করা হোক কিছু অফিসার পদবঞ্চিত হবেনই। আর যারা মেধাবী তারাই তো পদোন্নতি পান।’

(ঢাকাটাইমস/২৯মে/ডিএম)