হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কী দাহ্য পদার্থ?

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ১৪:৫১ | প্রকাশিত : ০৬ জুন ২০২২, ১০:৪৬

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড দেশজুড়ে উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে তিন দফা বিকট বিস্ফোরণও হয়েছে। ডিপোটির কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণেই এমন বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

মূলত বিদেশ থেকে আমদানি করা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডই ছিল এসব কনটেইনারে। রপ্তানির জন্য হাটহাজারীর ঠাণ্ডাছড়ি কারখানায় উৎপাদিত এই রাসায়নিক কনটেইনারে করে এ ডিপোতে রাখা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

কন্টেইনার ডিপোর পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নীল রঙের বেশ কিছু জার, ফেটে বা গলে যাওয়া এসব জারের গায়ে লেখা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড; তাপ পেলে সেগুলো বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে- সে সতর্কবাণীও রয়েছে।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড এই রাসায়নিক পদার্থটিকে নিয়ে অনেকের মনেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তারা জানতে চান কেন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিস্ফোরিত হলো? এই রাসায়নিকের আগুন কেন পানি দিয়ে কেন নেভানো যাচ্ছে না? জানুন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের আদ্যোপান্ত।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল। পানির সাথে অক্সিজেনের অতিরিক্ত অণু যোগ করেই তৈরি করা হয় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড। নানা ধরনের সংক্রমণ নাশক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে H2O2 নামে পরিচিত। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড শক্তিশালী অক্সিডাইজারের মতো দ্রব্যের সংস্পর্শে আসলে ভয়ংকর আগুন লাগতে পারে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। এটি রকেটের জ্বালানিতে প্রোপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উত্তপ্ত হলে তাপীয় বিয়োজনে বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে। তাই এটাকে কম তাপে নিরাপদে স্থানান্তর করা হয়।

গৃহস্থলির কাজে এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ৩% ঘনত্বের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দ্রবণ ঔষধ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তবে এটি হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক বিপদের কারণ।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দাহ্য পদার্থ নয়, তবে কিছুক্ষেত্রে এটি আগুনের তীব্রতা ঘটাতে পারে। এটি নিজ থেকে আগুন জ্বালাবে না, তবে অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে মিলিত হলে আগুনের ঝুঁকি হতে পারে। বিশেষ করে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড যদি বিশুদ্ধ বা মিশ্রিত আকারে হয় তাহলে বিভিন্ন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে, প্রধানটি হলো এটি জৈব যৌগের সংস্পর্শে বিস্ফোরক মিশ্রণ তৈরি করে।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিজে আগুনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে না কিন্তু এটি আগুনকে তীব্র করে তুলতে পারে।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডকে সরাসরি বিস্ফোরক তালিকায় রাখা না হলেও ক্ষতি করার অসীম ক্ষমতা রয়েছে এর। মূলত ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে এর প্রতিক্রিয়া খুব ভিন্ন হতে পারে। উচ্চ ঘনত্বে, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের প্রকৃতপক্ষে বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কারণে লাগা আগুন কেন পানি দিয়ে নেভানো যায় না?

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কারণে লাগা আগুন পানি দিয়ে নেভানো যায় না। বরং এতে আগুনের মাত্রা আরও বাড়ে। রাসায়নিকের কারণে লাগা আগুন নেভাতে হয় ফগ সিস্টেমে। কিংবা ব্যবহার করা হয় ফোম কিংবা ড্রাই পাউডার জাতীয় অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র। এ কারণে পানির সাহায্যে এই আগুন নেভানো সম্ভব নয়।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের সংস্পর্শে যে ক্ষতি হয়

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড মূলত দাঁতের চিকিৎসকরা ব্যবহার করেন। কারণ তাঁরা ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য এই কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। শরীরের ভিতরে গ্রহণ করার জন্য এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। খুবই হালকা ঘনত্বের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড আপনার বাথরুম পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে, কাপড় থেকে দাগ দূর করা, আপনার দাঁত সাদা করা সবকিছুর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। নানা কাজে এই রাসায়নিক ব্যবহার হয়ে থাকলেও, সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে এটি বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে, এর উচ্চ ঘনত্ব বিপজ্জনক।

রংহীন তরল তেতো স্বাদের এই পদার্থটি গিলে ফেললে বা শ্বাসের সাথে গ্রহণ করলে বিচ্ছিন্নভাবে জ্বালাতন করতে পারে। আরও হতে পারে বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, অবশ, ফুসফুস সংকুচিত হওয়া, কম্পন, মানসিক আঘাত।

স্বল্প মেয়াদী ফলাফলগুলো প্রকট হতে পারে এবং সেগুলো ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে।

শক্তিশালী অক্সিডাইজার অন্যান্য দ্রব্যের সংস্পর্শে আসলে আগুন লাগতে পারে।

উচ্চ তাপমাত্রায় পাত্রটি তীব্র ভাবে ভেঙ্গে যেতে পারে যা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনবে।

চোখে লাগলে স্বল্প মেয়াদী জ্বালাতন করতে পারে। ফলাফলগুলো ভয়ঙ্কর রুপ নিতে পারে আবার অন্ধত্বের কারণ ও হতে পারে।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড এতটাই শক্তিশালী কেমিক্যাল যে এটি ফুসফুসে পৌঁছলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমতে পারে। এমনকী লং টার্ম ড্যামেজ হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/৬ জুন/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :