স্যাটেলাইট ক্যামেরা বসানো কচ্ছপ ধরা পড়ল জেলের জালে

ফিচার প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ জুন ২০২২, ১২:৩৫ | প্রকাশিত : ০৮ জুন ২০২২, ০৯:৫৮

আজব আমাদের প্রকৃতির প্রাণীকূল। অনেক প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রকৃতি থেকে। হারিয়ে যাওয়া এসব প্রাণীদের খুঁজে পেতে বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা চালিয়েছেন৷ আমাদের প্রকৃতিতে একসময় বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে কচ্ছপ পাওয়া গেলেও বর্তমানে প্রাণীটি প্রায় বিলুপ্ত। তবে অবাক করার মতো ঘটনা ঘটেছে আমাদের প্রকৃতিতে। সম্প্রতি পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জসংলগ্ন খোলপেটুয়া নদী থেকে পিঠে স্যাটেলাইট ক্যামেরাযুক্ত বিশাল আকৃতির একটি কচ্ছপ ধরা পড়েছে স্থানীয় জেলেদের জালে। জেলেদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বনকর্মীরা কচ্ছপটি সুন্দরবনে অবমুক্ত করেন।

মাছ ধরার সময় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের হারুন নামে এক জেলের জালে কচ্ছপটি ধরা পড়ে। এরপর বনকর্মীরা কচ্ছপটি সুন্দরবনে অবমুক্ত করার জন্য নিয়ে যায়।

বনবিভাগসহ স্থানীয়দের ধারণা, স্যাটেলাইট ক্যামেরাযুক্ত অবস্থায় থাকা ওই কচ্ছপের মাধ্যমে সুন্দরবন অঞ্চলের প্রাণীকুলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করা হতো।

জেলে রাকিবুল ইসলাম বলেন, খোলপেটুয়া নদীতে মাছ ধরার সময় হারুণ গাজীর জালে কচ্ছপটি ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে পশ্চিম সুন্দরবনের কোবাদক স্টেশন অফিসার ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে বনকর্মীরা সেখানে পৌঁছে কচ্ছপটিকে নিজেদের জিম্মায় নেয়।

স্টেশন অফিসার ফারুক হোসেন জানান, প্রায় ৩০ কেজি ওজনের কচ্ছটির পিঠে বিশেষ ব্যবস্থায় ক্যামেরাযুক্ত ছিল, পরবর্তীতে কচ্ছপটিকে উদ্ধার করে নিয়ে সুন্দরবনের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জেলে আবুল হোসেন জানান, বড় আকৃতির কচ্ছপটি তাদের সহযোগী জেলের জালে উঠতেই তারা বনবিভাগকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরবর্তীতে সুন্দরবনের মধ্যে ছেড়ে দেয়ার জন্য বনকর্মীরা সে কচ্ছপ নিয়ে যায়। তিনি বলেন, জাল তুলতেই বিশাল ওজনের কচ্ছপ আটকে থাকতে দেখে তিনি বিস্মিত হন। পরবর্তীতে পিঠে ক্যামেরা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলে কিছুটা ভড়কে যান। বিশেষ কাজে ব্যবহৃত কচ্ছপটিকে বনবিভাগের হাতে তুলে দিতে পারায় তিনি খুশি বলেও দাবি করেন।

পশ্চিম সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান জানান, পিঠে ক্যামেরা থাকা কচ্ছপের সহায়তায় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজ করা হতো কিছুদিন আগেও। তবে আটকের পর অবমুক্ত কচ্ছপের পিঠের ক্যামেরা কার্যকর রয়েছে কিনা সে বিষয়ে তারা অবগত নন।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে বিলুপ্ত প্রায় বাটাগুরবাস্কা প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণ, প্রজনন, গতি ও আচরণ বিধি, বিচরণ ক্ষেত্র, পানিতে ডুবে ও ভেসে থাকার সময় নির্ণয়সহ নানা কার্যক্রম জানতে বাংলাদেশ বনবিভাগ, অস্ট্রিয়ার ভিজুয়েনা, আমেরিকার টিএসএ ও ঢাকার প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে কাজ করছে।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে এ প্রকল্পের অবকাঠামোর কাজ শুরু হয়। এরপর ২০১৮ সালে প্রকল্পের কাজ চালু হয়। ২০১৮, ১৯ ও ২০ সালে দফায় দফায় ১৫টি স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার সমৃদ্ধ কচ্ছপ সুন্দরবন ও সাগর মোহনায় অবমুক্ত করা হয়।

কচ্ছপের পিঠে বসানো স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারের কার্যক্ষমতা এক বছরের। এরপর এমনিতেই এটি খসে পড়ে যায়। এক বছরেই এর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। আর এসে সংগ্রহ করে থাকেন অস্ট্রিয়ার ভিজুয়েনা ও আমেরিকার টিএসএ'র গবেষকেরা। তবে এ প্রজেক্টে ব্যাপক সফলতা এসেছে বলেও জানান গবেষকরা। মোট ১৫টি কচ্ছপ নিয়ে কাজ শুরু হলেও এখন করমজলে এর সংখ্যা সাড়ে ৪শ।

দীর্ঘায়ু কচ্ছপ পৃথিবীতে এখনও বর্তমান এমন প্রাচীন প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে কচ্ছপের প্রায় ৩০০ প্রজাতি পৃথিবীতে রয়েছে, এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি মারাত্মকভাবে বিলুপ্তির পথে রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৮ জুন/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :