মেডিকেল ও ফিজিক্যাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে কোমর ব্যথার প্রতিকার সম্ভব

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২২, ১৪:২৫ | আপডেট: ১২ জুন ২০২২, ১৪:২৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘লো ব্যাক পেইন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনারের অধীনে ফিজিক্যাল মেডিসিন, রিউমাটোলজি বিভাগ ও  নিউরোসার্জারি বিভাগ যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে।

সেমিনারে ওঠে আসে, বেশির ভাগ কোমরের ব্যথা সাধারণ ব্যথা। কোমর ব্যথার শতকরা ৯০ ভাগ রোগীই যদি রেস্টে দেওয়া যায়, ফিজিক্যাল এক্টিভিশন করলে ভালো হয়ে যায়। অধিকাংশ কোমর ব্যথা নিয়ম কানুন মানার মাধ্যমে প্রতিকার করা সম্ভব। এর বাইরে মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্ট ও ফিজিক্যাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমেও অধিকাংশ কোমর ব্যথার প্রতিকার সম্ভব। ব্যথা নিরাময়ে স্টোরয়েড প্রয়োগ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। স্টোরয়েড শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও  ক্লুরোসকপি ও আলট্রাসাউড গাইডেড ইন্টারভেনশন করা  হয়। এর ফলে  অপারেশন এড়ানো যায় এবং রোগীরা আর্থিক দিক থেকেও লাভবান হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকে হাঁটতে গেলে চলতে গেলে ব্যথা হয়, কারো পিঠে ব্যথা, কোমরে ব্যথা হয়। কেউ নিচু হয়ে কিছু তুলতে গেলে এমন  ব্যথা হয় যাতে তাকে সারাদিন শুয়ে থাকতে হয়। ব্যথার কারণে অনেকে মাসখানিক শক্ত বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। চেয়ারে বসে কাজ করতে গেলে অনেকে পিঠে ব্যথা অনুভব করেন। এসব ব্যথা তিনটি কারণে হয়ে থাকে। পিএলআইডি বা লাম্বার ইন্টার ভার্টিব্রাল ডিস্ক প্রল্যাপস, স্পাইনাল স্টোনোসিস, হার্নিয়েশন অব লাম্বার ডিস্কে  ইনজুরি হলে এসব মিলে লো ব্যক পেইন  হতে পারে। এছাড়াও  কোমরসহ মাসলে আঘাত লাগলেও ব্যথা হতে পারে। এমন ব্যথা নিরাময়ে নিচু হয়ে  ভারি কিছু না তুলা, ওজন যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে খেয়াল রাখা, শক্ত বিছানায় শোয়ার অভ্যাস করা। এসব মানলে কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ব্যথা নিরাময়ের জন্য এলোমোলোভাবে ওষধু খাওয়া যাবে না। খেয়ালখুশিমত ব্যথার ওষুধ খেলে  কিডনিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। ব্যথার ওষুধে অনেক পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ ছাড়াও ব্যথা নিরাময়ে রেডিয়েশন, হিট থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। শেষে অপারেশেনের মাধ্যমে এ ব্যথা দূর করা হয়। অর্থাৎ  কোমর ব্যথা নিরাময়ে শরীর চর্চা, নির্দিষ্টমাত্রার ওষুধ প্রয়োগ এবং সর্বশেষ অপারেশন করে লো ব্যাক পেইন প্রতিকার করা যায়। তবে নিয়ম কানুন মেনে ব্যথা নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। ফিজিক্যাল মেডিসিন, রিউমাটোলজি ও নিউরো সার্জারির মতো বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজনে মতামত নিতে হবে। প্রয়োজন হলে এমআর আই, সিটিস্ক্যান করে কোনো ধরণের চিকিৎসা লাগবে সেটি নির্ধারণ করা যায়।

নিউজরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা.  মোহাম্মদ হোসেন, রিউমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আরিফুল ইসলাম, ফিসিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তরিকুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারের প্যানেল এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশররফ হোসেন, ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু সালেক, নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী ও সেন্ট্রাল সাব কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিক।

নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।

সেমিনারে কিনোট স্পিকার হিসেবে নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন,  বেশির ভাগ কোমরের ব্যথা মূলত সাধারণ ব্যথা। কোমর ব্যথার শতকরা ৯০ ভাগ রোগীই যদি রেস্টে দেওয়া যায়, ফিজিক্যাল  এক্টিভিশন করলে ভালো হয়ে যায়। যখন কোমরের ব্যথার সঙ্গে পায়ের ব্যথা থাকে, পায়ের শক্তি কমে যাবে, প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায় তখন এটিকে বলি আমরা রেড ব্লাক সাইন। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোমরের ব্যথার অধিকাংশই ডিস্ক প্রল্যাপসই হয়ে থাকে।

এছাড়াও কোমরে আঘাত পাওয়া, টিউমরার বা বয়স্ক লোকদের কোমরে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হতে পার। কোমর ব্যথা নির্ণয়ের জন্য রেডিওলজি বিভাগে এমআরআই, সিটি স্ক্যান করে যদি দেখা যায়, নার্ভে চাপ দিয়ে আছে, স্পাইনাল কর্ডে চাপ দিয়ে আছে সেটি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোস্পাইনাল সার্জারি বিভাগে যোগাযোগ করতে হবে। মেরুদ-রে যেকোনো ধরণের অপারেশনের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলেই এর সমাধান করা সম্ভব।

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/এসকেএস)