মানুষ

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২২, ০৮:৩১

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

প্রতিটা মানুষের দিকে আমি অপলকে তাকিয়ে ভাবি,

এই যে মানবদেহ; এর  মাঝে মানুষটা  কোথায়?

তালগাছের তাল থাকে গাছের আগায়; ডালের  ফাঁকে।

তিলগাছের তিল থাকে কাণ্ডের চার পাশ ঘেঁষে, পাতার ফাঁকে।

গোলআলু বেড়ে ওঠে লতার শেকড়ে,মাটির নীচে।

মোমআলু ঝুলে থাকে হাওয়ায় দোলা লতায় লতায়।

তা হলে,এই  যে মানবদেহ; এর  মাঝে  মানুষটা  কোথায়?

 

কুন্তল অলক চুল কেশ; সেই বেশ পশুদেরও থাকে;

বনের রাজা সিংহের কেশরের সুখ্যাতি  তো  জগতজোড়া।

মুণ্ডু মগজ  মস্তিষ্ক ; ওসব  তো জন্তু  জানোয়ারদেরও আছে;

শেয়ালের  চালাকির  চালে  বাঘে-মহিষে  এক ঘাটে জল  খায়।

চোখ কান নাক  মুখ  হাত পা দাঁত  চিবুক

হাড়গোড়  জিহ্বা   অস্থি মজ্জা ত্বক থাবা নখ নখর

বুক পিঠ নাভি লিঙ্গ  কুচ  নিতম্ব যোনি জানু জঙ্ঘা--

এ সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ,

নানান জীব জানোয়ার কীট পতঙ্গ বিহঙ্গেরও থাকে।

তাহলে  কোথায়  মানুষ; কোথায় সেই  আশরাফুল  মাখলুকাত?

মানবদেহ আর মানুষের মাঝে তাহলে কি  আছে কোন সূক্ষ্ম তফাত?

খুঁজতে  খুঁজতে বুঝতেও চাই,  

কিন্তু এ রহস্যের কোন কূল-কিনারা নাই।  

তবুও মানুষ  খুঁজতে আমাকে তো  যেতে  হবে  মানুষেরই  কাছে।

কারণ, মানুষইতো  জগতের  প্রভাবশালী জীব।

কিন্তু মানবদেহের  ঠিক  কোন  অংশটাকে  মানুষ থাকে,

সেই অনুসন্ধানে আমি কাটিয়েছি তিন লক্ষ বছর;

তবুও তাকে পাইনি খুঁজে কোন তল্লাটে।  

মানব শরীরের ঠিক কোন সন্ধিস্থলে রয়েছে মানুষের ঘর;

মানুষ-পরিবারের সদস্যরা  আনন্দের ফল্গুধারায়

কোন  বটমূলের  স্নিগ্ধছায়ায়  সঙ্গীত  মূর্ছনায়  জমায়

প্রাণে  প্রাণে সহমর্মের কোলাকোলির স্বর্গীয়  আসর!

হতাশ হয়ে আমি মানুষ খুঁজেছি সেঁতসেঁতে ফুটপাতে,

সভ্যতার  কলঙ্ক  আধুনিকতার  আস্তাকুঁড়  বস্তিতে,

মজুরের ঘামে,  ক্যাসিনো-বোর্ডে, মদিরার বোতলে,

নাচঘরের মজলিশে, পাঁচতারা  হোটেলের বালিশে,

বেশ্যাপাড়ার ফরমায়েশি শীৎকারে, পাপিয়ার পায়েলে, 

বাইজির  ঘুঙ্ঘুরে, জরিনার  আলতায়, তাঁতির মাকুতে,

কামের  তরঙ্গে, কামারের  হাতুড়িতে, নাপিতের খুরে,

প্রিন্সেস লাকি খানের লিপস্টিকে,  কর্পোরেট অফিসে,

রাজ-সিংহাসনে,  উজিরের  কূটচালে, দাবার ঘুঁটিতে,

রিভলভিং  চেয়ারে,  বীমার দালালের হাত ব্যাগে, শেয়ার বাজারে।

হাকিম আর হেকিমের দাওয়ায়,পীরের হুজরায়, তেলের খনিতে,    

ফেরিঅলার পসরায়, রিক্সার প্যাডেলে, কারখানার  চাকায়,

মাঝির বৈঠায়, নাইট গার্ডের হুইসেলে, বই ও  বারুদে, সম্পর্কের  পারদে,

প্রাণঘাতী বোমারু বিমানে, রণাঙ্গনের রক্তাক্ত তরোয়ালে।

অবসন্ন  হয়ে যখন আমের ছায়ায় ঝিমুতে থাকি,  

শুনতে পাই ভেতর থেকে ভেসে আসা সেই দৈববাণি;

“মানবদেহের মানবতাবোধের নামই মানুষ;

হৃদয়ের গহনে তার অদৃশ্য বসবাস,

সেটাই তার আজন্ম নিবাস,

সহমর্মের সেচে সেই মাঠেভরে হয় পারিজাত চাষ,

সেখানেই ঘটে তার নান্দনিক ঐশ্বরিক বিকাশ।”