কবিতা

যোগ্য পুরস্কার

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২২, ১৪:১৬

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

আমার বিশ্বাসের বৃত্ত এখন অণুবীক্ষণি বিন্দুতে

নিয়েছে যে ঠাঁই,

তাই এই পৃথিবীর কাছে আমার আর কোনো প্রত্যাশা নাই।

আমার জুড়িদাররা চোখে আঙ্গুল দিয়ে

আমাকে পুরাদস্তুর বুঝিয়ে দিয়েছে;

সারল্য,আস্থা,সহমর্মিতা,জ্ঞানমনস্কতা আর নির্ভরতা —

এ সবি আমার ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা;

হোঁচট খেয়ে চিৎ হয়ে যাওয়া ছটফট করা তেলাপোকার মতো ওদের বদান্যতায় চিৎপটাং হয়ে আমি-যে শেষতক আমাকে বুঝেছি,

আহত পাখির মতো ডানা ভেঙে ধড়ফড় করতে করতে

 মর্মে মর্মে আমি-যে নিজেকে চিনেছি;

এই আবিষ্কারই আমার জীবনের পরম সার্থকতা।

আমি-যে কী এক নিরেট নির্বোধ,

আমাকে আমার বিবেক নিত্য দংশন করে সেই দোষে,

আমার মতো আত্ম-সম্মান সচেতন মানুষ

কেমন করে পরিণত হলাম

ওদের পাদুকার ময়লা মুছবার মোলায়েম  পাপোশে!

 

উচিত শিক্ষা হয়েছে আমার,

অকালকুষ্মাণ্ডের সঙ্গে এমনটাই বাস্তবতার কাঙ্খিত ব্যবহার।

অভিজাত বাহিনীর নিগ্রহ,শেকলে বাঁধা হাতকড়া,

হাকিমের খেয়ালি স্বেচ্ছাচার, পেশকারের কলমের বাহাদুরি,

আদালতের চৌকাঠে মাথা কুটে মরা,

চৌকিতে চৌকিতে জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় লজ্জিত মুখ নিচু করে দাগি আসামীর মতো ক্লান্ত পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা,

উকিল-মোক্তারের আলখাল্লার লেজ ধরে বছরের পর বছর হেঁটে হেঁটে জুতোর তলি ক্ষয় করা,

চকিদারের ধিকৃত অনাচার,দ্বারে দ্বারে কুৎসিত ব্যবহার,

সামাজিক ধিক্কার,নির্জন কারাগার,

এ সবই আমার অর্জিত প্রসন্ন পুরস্কার;

বীর পুরুষের বাহবা কুড়াবার মোক্ষম হাতিয়ার।

এমন সৌভাগ্য ক’জনার কপালে রাজটিকা হয়ে ভাসে ?

এমন অনন্য সুযোগ ক’জনার ক্ষুদ্র জীবনে আসে?

পাকিস্তানের ‘কায়েদে আজম’, যার আরেক খেতাব ‘বাবায়ে কওম’,

তিনিও কিন্তু ভূষিত হতে পরেনি এমন মর্যাদার উপহারে।

আমার সতীর্থদের উদার দরদ কতো যে প্রশংসার দাবিদার!

এক জীবনের সাধ্যি নেই তাদের এই ঋণ শুধবার।

তারা দিন-দিনান্তের চেষ্টায়,সমবেত প্রাণান্ত কসরতে,

তাদের দলপতির জন্য ছিনিয়ে এনেছে সশ্রদ্ধ প্রীতির

এমন অমূল্য অতুল-নিরূপম স্বীকৃতি।

আমার জুটেছে এই সোনার মেডেল,

মুকুটে যুক্ত হয়েছে চকমকে সোনার পালক,

অঙ্গে চড়েছে সুকীর্তির ভূষণ,আত্মতুষ্টির অহংকার;

কন্ঠে ঝুলছে হীরা-চূণি-পান্নার ঈর্ষণীয় অলংকার।

 

এই আত্মমগ্ন সুখেবোধের স্রোতে ভেসে ভেসে

আমার এই প্রতারিত জীবন করে দেবো পার,

আমি আর হবো না পাত্র কারো করুণার।

আমি নিশ্চিত জানি —

একদিন কোনো এক মহানায়ক ত্রাণকর্তা

মাটির মায়ার টানে মর্ত্যে এসে করবেই

এই তল্লাটের বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিকার,

কিংবা উচ্ছেদ করবে কদর্য স্বার্থপরতার;                 

ঘটাবে প্রতারণা-সংস্কৃতির আমূল সংস্কার।