রাজধানীর কেতাদুরস্ত চা-ওয়ালা হান্নানের কপালে চিন্তার ভাঁজ

আকিবুর রহমান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৯:১৮ | প্রকাশিত : ১৬ জুন ২০২২, ১৯:১৩

গায়ে হালকা নীল শার্ট, ছাই রঙা প্যান্ট। কালো জুতো পায়। কোমরের বন্ধনীটাও কালো। পরিপাটি সাজগোজ দেখে মনে হবে করপোরেট জগতের মানুষ। কিন্তু না, হান্নান মিয়া তা নন। এই পরিচ্ছদেই তিনি রাজধানীর গ্রিনরোডে চায়ের পসরা সাজিয়ে বসেন প্রতিদিন।’

নগরীতে এমন চা বিক্রেতা বিরলই প্রায়। ক্রেতারাও এমনটা দেখে অভ্যস্ত নন। তবে হান্নান মিয়া বেশ মানিয়ে গেছেন ক্রেতাদের সঙ্গে। সাবলীল-স্বচ্ছন্দে নানা ধরনের চা বানিয়ে তুলে দিচ্ছেন ক্রেতাদের হাতে।

পানি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটির এই পেশায় এমন কেতাদুরস্ত পোশাকে থাকার কী কারণ? ৩৯ বছর বয়সী হান্নানের জবাব, ‘ছোটবেলা থেকেই ফিটফাট থাকতে পছন্দ করি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি।’ হাসিমুখে বললেন, ‘চা বিক্রি করলেই যে পরিপাটি থাকা যাবে না, এটা আমি মনে করি না। দৃষ্টান্ত রাখার চেষ্টাও বলতে পারেন।’

হান্নানের সংসার আছে ঢাকায়। ভাড়া থাকেন কাঁঠালবাগান ঢালের একটি বাসায়। স্ত্রী ও একটি সন্তান তার। হান্নানরা তিন ভাই। বোন আছে একজন। আছেন বাবা-মাও। বাবা, মা, দুই ভাই ও বোনও থাকেন তার সঙ্গে। তাদের নিয়ে সংসার একেবারে ছোট নয়। একাই টানছেন ঘানি।

কেমন কাটছে দিন? একটু মলিন মুখেই বললেন, ‘ভালোই চলছিল। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে বেশ হিমশিম খাচ্ছি। দ্রব্যমূল্য হু হু করে বাড়ছে। চা বানাতে যা লাগে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। আগের মতো খুব বেশি লাভ হয় না। তার ওপর দুজন কর্মচারী খাটে দোকানে। তাদের বেতন দিতে হয়।’

হান্নান জানান, ফুটপাতে দোকান করলেও তার খরচ কম নয়। বলেন, ‘চিনির দাম আগের চেয়ে কেজিতে বেড়েছে প্রায় চল্লিশ টাকা। এখন ৯০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়। আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা। চা তৈরির জন্য কনডেন্সড মিল্কের দাম ছিল ৪৮ টাকা। এখন কিনতে হয় ৮০ টাকায়। এখন আর আগের মতো পোষায় না।’

কী কী ধরনের চা বিক্রি করেন? হান্নান বলেন, ‘বেশ কয়েক ধরনের চা আছে। রং চা, মাসালা চা, ওভালটিন চা ইত্যাদি। এর মধ্যে রং চা বেশি চলে।’

হান্নান জানান, চা বানানোর মতো কাজটাও তিনি খুব মন দিয়ে করেন। বলেন, ‘এই কাজ দিয়েই আমার সংসার চলে। তাই অবহেলা করার সুযোগ নেই।’

জানালেন, তার দোকানের চা অন্যদের চেয়ে কিছুটা হলেও আলাদা। কারণ, তিনি পানিটা বেশি সময় ধরে ফোটান। অনেক ধরনের মসলা ব্যবহার করেন। যেমন-কাগজি লেবু, পুদিনা পাতা, আদা, লং অনেক কিছু থাকে তাতে।

অনেক কিছু করার স্বপ্ন হান্নানের। এই চা দোকানকে আরও বড় করতে চান তিনি। কিন্তু তার দুশ্চিন্তা চায়ের বিভিন্ন সামগ্রীর উচ্চমূল্য নিয়ে। বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের যে যাতাকল, তার থেকে রক্ষা পাওয়া না গেলে কী হবে ভবিষ্যতে বুঝতে পারছি না।’

(ঢাকাটাইমস/১৬জুন/এইচএফ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :