এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহক ছাড়াল দেড় কোটি

বীর সাহাবী, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৯:৪৯ | প্রকাশিত : ১৬ জুন ২০২২, ১৯:২০

দিন দিন দেশে বেড়ে চলেছে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের এই সেবার গ্রাহক সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা এক কোটি ৫১ লাখ ৯৩ হাজার ১৪৬। গ্রাহক বাড়ার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা, আমানত ও ঋণের পরিমাণও বেড়েছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকের প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ আমানত রেখেছেন ইসলামী ব্যাংকে। বেশি ঋণ নিয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংকের আউটলেটগুলো থেকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরের তুলনায় ৮৬ দশমিক ০১ শতাংশ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখা বেড়েছে গ্রামাঞ্চলে। গ্রামের অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে ৪৯ শতাংশ নারী। চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে ডিপোজিটের পরিমাণ বেড়েছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট শাখাগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ছয় হাজার ৪২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। জানুয়ারি-মার্চ’২২ প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৬১ কোটি টাকা (৬৩.২৪ শতাংশ) বিতরণ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক।

একই সময়ে গ্রাহকরা ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলোতে আমানত রেখেছে ৯ হাজার ৭২২ কোটি টাকা (৩৮.৬৩ শতাংশ)। এছাড়া রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সও এনেছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকটির এজেন্ট শাখাগুলোতে ৪৪ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গ্রামীণ পর্যায়ে যারা ব্যাংকিং সেবার বাইরে ছিলেন এজেন্ট শাখাগুলোর মাধ্যমে তারাও ব্যাংক সেবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বলা যায় ঘরের কাছেই ব্যাংকিং হচ্ছে। রেমিট্যান্সও আসছে সহজে। আর প্রয়োজনে ঋণও পাওয়া যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী সম্প্রতি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্ট, ঋণ, আমানত ও রেমিট্যান্স সংগ্রহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।

গত এক বছরে এজেন্ট শাখাগুলোতে গ্রাহক বেড়েছে ৪১ লাখ ৭০ হাজার। তিন মাসে বেড়েছে ১১ লাখেরও বেশি। এখন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ছাড়িয়েছে এক কোটি ৫১ লাখ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এজেন্ট শাখাগুলোতে আমানত হিসেবে জমা আছে ২৫ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এই শাখাগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৬ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। এছাড়া, মার্চ পর্যন্ত এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৪ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা।

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং। প্রযুক্তিনির্ভর ও সাশ্রয়ী এ সেবায় গ্রাহকরা এজেন্ট আউটলেটে আঙুলের স্পর্শেই হিসাব পরিচালনা করতে পারছেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এখন ২৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ১৪ হাজার ১৬৬টি এজেন্টের আওতায় ১৯ হাজার ৫৩০টি আউটলেটে এ সেবা দিচ্ছে। ২০২১ সালের মার্চ শেষে আউটলেট ছিল ১৬ হাজার ৪২১টি। এক বছরে বেড়েছে ৩ হাজার ১০৯টি। ২০২১ সালের মার্চে আমানত ছিল ১৭ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ৭ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।

আবার মার্চ শেষে ৬৪২ কোটি ১৪ লাখ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে এজেন্ট আউটলেট থেকে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ঋণ দেওয়া হয়েছিল ৫৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে ১০৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য আরও বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আউটলেট রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের। সবচেয়ে বেশি একাউন্ট রয়েছে ব্যাংক এশিয়ার।

এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংক এশিয়া গ্রামীণ জনপদের মানুষের পাশে দাঁড়াতে ২০১৪ সাল থেকে কাজ করছে। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে ভূমিকা রাখছে এজেন্ট শাখাগুলো। সামনের দিনে আরও পরিসর বাড়বে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের জানুয়ারি-মার্চ’২২ প্রান্তিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকগুলোতে জমা হয়েছে ২৫ হাজার ১৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি। এজেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে মোট ৬ হাজার ৪২১ কোটি এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৪ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা।

এজেন্ট ব্যাংকগুলোতে জমা:

এজেন্ট ব্যাংকগুলোতে জমা হয়েছে মোট ২৫ হাজার ১৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ৩৮ লাখ, সেভিংস ১১ হাজার ৩২৩ কোটি এবং অন্যান্য ১২ হাজার ২৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

এজেন্ট ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকদের ঋণ:

এজেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে মোট ৬ হাজার ৪২১ কোটি। এর মধ্যে শহরে ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, গ্রামে ৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা, নারীরা পেয়েছে ৫১৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং পুরুষরা পেয়েছে ৫ হাজার ১৬৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৭৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স:

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৪ হাজার ৭১৫ কোটি টাকার। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে আট হাজার ১৩ কোটি টাকা এবং ৭৬ হাজার ৭০১ কোটি টাকা গ্রামীন অঞ্চলে রেমিটেন্স এসেছে।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা বাংলাদেশে চালু হয় ২০১৪ সালে। ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসেবে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুন/বিএস/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :