কার লাভ কার ক্ষতি

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২২, ০০:৫৮ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২২, ০১:১২

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস

কুমিল্লায় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে হেরেছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। দায়িত্ব গ্রহণের পর আউয়াল কমিশনের জন্য প্রথম নির্বাচন হিসেবে কুমিল্লা ছিল এসিড টেস্ট। এই পরীক্ষায় কি উৎরাতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন? ভোটের পর প্রার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ—সবাই হিসাব কষছে—কুমিল্লার ভোটে কার লাভ আর কার ক্ষতি হলো?

বিএনপি কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে তাদের প্রার্থী দেয়নি। উল্টো মনিরুল হক সাক্কু দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে গিয়ে দল থেকে ‘আজীবনের জন্য’ বহিষ্কৃত হয়েছেন। আরেক মেয়র পদপ্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সারও বহিষ্কার হয়েছেন।

দল হারানো সাক্কুকে পরাজিত করে অল্প ভোটের ব্যবধানে কুমিল্লা শহরের হাল ধরতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। কুমিল্লা সিটি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো মেয়র পেল আওয়ামী লীগ।

জয় পেয়ে অবশ্যই আওয়ামী লীগের লাভ হয়েছে বলে মনে করছে সচেতন মহল। আর পরাজিত হয়ে মনিরুল হক সাক্কুর ক্ষতিটাই বেশি হলো। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে তাদেরও ক্ষতি হয়েছে। কারণ ভোটের ফল বলছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে একক প্রার্থী দিলে তাদেরই জয়ের সম্ভাবনা ছিল।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের সঙ্গে মাত্র ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে হারেন ২০০৫ থেকে কুমিল্লার মসনদে বসে থাকা মনিরুল হক সাক্কু। রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। আর সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।

যদিও প্রাথমিক ফল ঘোষণার পরপরই সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ ফলকে প্রত্যাখ্যান করেন সাক্কু। পাশাপাশি তিনি আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন।

সাক্কু বলেন, ‘আমি পুরোপুরিভাবে এ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি। এ বিষয়ে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব। আমার হিসাবে ৯৮০ ভোটে এগিয়ে ছিলাম। শেষ মুহূর্তে ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে।’

অভিযোগ করে কুমিল্লার দুইবারের সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘ইভিএমে যেহেতু নির্বাচন হয়েছে, ফলাফল ঘোষণায় তাহলে এত দেরি কেন করল? এতেই প্রমাণিত হয় ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে হেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিটা সাক্কুরই হয়েছে। ২০০৫ সালে তিনি ছিলেন কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিলেন পৌর মেয়র। ২০১২ এবং ২০১৭ দুই দফায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র হন। চলতি বছরের ১৬ মে পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

এবার কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে প্রথমবারের মতো হারলেন সাক্কু। দলীয় পদ গেল। বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কার হলেন। যুবদল সভাপতি থেকে ধাপে ধাপে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পরে কেন্দ্রীয় সম্পাদক হয়েছিলেন এই নেতা।

সেটা হারিয়ে দলীয় ছাতাটাও চলে গেল। অসম্ভব ভালো সম্পর্ক ছিল এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেই সম্পর্কেও বড়সড় চিড় ধরেছে। ভোটে হেরে গিয়ে কি সবই হারালেন মনিরুল হক সাক্কু?

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি। তাই দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ ভোটে দাঁড়ালে তাকে বহিষ্কার করছে দলটি। তাই সাক্কুর পরাজয়, তিল তিল করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়া সবই যেন শেষ হয়ে গেল!

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কুমিল্লায় নির্বাচন কমিশন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বিএনপি নেতারা এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অবাস্তব, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরূপ মন্তব্য করছেন।

ভোটের দিন বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ বুধবার অনুষ্ঠিত পাঁচটি পৌরসভা ও ১৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।’

এদিকে সাক্কু নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ অভিযোগ আনলেও স্বচ্ছতার সঙ্গে এই সিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন।

অন্যদিকে কুমিল্লা সিটিতে জয়ী আরফানুল হক রিফাত জানিয়েছেন, তাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে তার সঙ্গে শুক্রবার গণভবনে যাবেন।

এছাড়া কুমিল্লা নগরীর উন্নয়নে মনিরুল হক সাক্কুর সহায়তাও চেয়েছেন রিফাত। সবাইকে নিয়ে আধুনিক কুমিল্লা নগরী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/ডিএম)