ঢাকা টাইমস সরেজমিন

হৃদরোগ হাসপাতাল: ভোগান্তিতে ম্লান হচ্ছে সুস্থ হয়ে ফেরার গল্প

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০২২, ০৭:৪৮

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। ঢাকার শেরেবাংলা নগরের বিশেষায়িত এই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে শয়ে শয়ে রোগীর। আছে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ফেরার গল্প। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী ভোগান্তি আর অনিয়ম সেই গল্পকে ম্লান করে দিচ্ছে।

গেল বুধবার ঢাকাটাইমস প্রতিবেদক সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখেন হাসপাতালটির বিভিন্ন চিত্র। তার চোখে ধরা পড়া প্রায় পাঁচ ঘণ্টার সেই চিত্র তুলে ধরা হলো পাঠকের সমীপে।

সকাল ৯টা ৩০ মিনিট:

টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা ভিড়। কাঁচের ওপাশ থেকে টাকা নিয়ে টিকিট দিচ্ছেন হাসপাতালের একজন কর্মী। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত ৭০ বছরের আইনাল হক। বললেন, ‘আমরা বুড়া মানুষ। দাঁড়াইয়া থাকলে পা ব্যাথা হইয়া যায়। আমাগো লাইগা কোনো ব্যবস্থা যদি করতো, তাহলে ভালো হইতো। এইভাবে লাইনে দাঁড়ানো কষ্টকর।’

সকাল ১০টা ১০ মিনিট:

মেডিসিন বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড়। চেম্বারে ডাক্তার এখনো আসেননি। অপেক্ষারত রোগীদের মধ্যে গুঞ্জন। তবে ততোক্ষনে ডাক্তার আসতেই মৃদু হুড়োহুড়ি পড়ে গেলো। একসময় তা গড়ালো চিৎকারে। কারন এক রোগী অন্য রোগীর আগেই ঢুকে পড়েছেন। পরে একজন আনসার সদ্স্য এসে ঝামেলা মিটমাট করে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বেলা ১১টা ১৫ মিনিট:

হঠাৎ জরুরি বিভাগের সামনে কান্নার রোল। ছুটে যেতেই গা-মাথা কাপড়ে ঢাকা একটি মরদেহ উঁকি দিল জরুরি বিভাগের ভেতর থেকে। স্বজনদের আহাজারি।

জানা গেল, রাতে হঠাৎ বুকের ব্যথা অনুভব করেন পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সিদ্দিক মিয়া। ভোরে হাসপাতালে আনতে আনতেই মৃত্যু হয় তার। কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, কার্ডিয়াক এ্যারেস্টে মারা গেছেন তিনি।

বেলা ১২টা ৪০ মিনিট:

হাসপাতালের প্রবেশমুখে ৮০ বছর বয়সী মাকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামলেন বেসরকারী চাকরিজীবী ইব্রাহিম ভুঁইয়া। ঢোকার মুখেই হুইলচেয়ার নিয়ে এগিয়ে এলো দুই-তিনজন ব্যক্তি।

জানা গেল, বৃদ্ধ বা চলাচলে অক্ষম রোগীদের তারা হুইলচেয়ার সহযোগে নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যান। বিনিময়ে কিছু অর্থ দিতে হয় তাদের। ইব্রাহিম সাহেব উপযোগিতা বুঝে আর কথা বাড়ালেন না। মাকে বসিয়ে দিলেন হুইলচেয়ারে।

দুপুর ১টা ০৩ মিনিট

বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে বের হচ্ছিলেন আরমানুল হক। ডাক্তার জানিয়েছেন হার্ট ভালো নেই, প্রেসার হাই। এখন থেকে থাকতে হবে সাবধানে। পাশাপাশি প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়েছেন বেশ কিছু ওষুধ।

সেটা হাতে নিয়ে গেট দিয়ে বের হতেই আরমানুল হককে ছেঁকে ধরলো একদল মেডিকেল রিপ্রেজেনটিটিভ। তার হাত থেকে প্রেসক্রিপশনটা প্রায় টেনে নিয়ে খটাখট ছবি তুলে নিলেন তারা।

দুপুর ১টা ৫৫ মিনিট:

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের বাসিন্দা মেছের আলী। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। গত সপ্তাহে হঠাৎ করে তীব্র বুকে ব্যাথা উঠেছিলো তার। স্থানীয় হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই সবার পরামর্শে তিনি সরকারী খরচে চিকিৎসার জন্য এসেছেন হৃদরোগ হাসপাতালে।

কিন্তু হাসপাতালে আসার তিন দিন হয়ে গেলেও পাননি পেয়িং বেড (ভাড়া বিছানা)। তাই চাদর বিছিয়ে শুয়ে আছেন হাসপাতালের বারান্দাতেই। সেখান থেকেই নিচ্ছেন চিকিৎসা। তার মতো আরো অনেকেই এভাবে বেড পেতেছেন বারান্দায়।

সময় ২টা ১২ মিনিট:

কলেজশিক্ষক বাবাকে নিয়ে ধীরেধীরে সিঁড়ি বেয়ে নামছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তারিন জামান। এক মাসের কঠিন যাত্রা শেষ করে ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। হার্টে ব্লক ধরা পড়েছিলো তার বাবার। ডাক্তার সার্জারি করার প্রস্ততি নিলেও সেটা সহসাই করা যাচ্ছিলো না।

তারিন বলছিলেন, ‘বাবার ডায়াবেটিকসের মাত্রা ছিলো বেশী। সব সামলে সার্জারি শেষ হয়েছে দিন পাঁচেক আগে। রিলিজ অর্ডারসহ বাবাকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরছি।’ তারিনের মুখের হাসিই বলে দেয় বাবাকে সুস্থ করে ফিরতে পেরে তার অন্তহীন খুশি।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :