পদ্মা সেতু সাতক্ষীরার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আনবে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ১৯:৫৫ | প্রকাশিত : ১৭ জুন ২০২২, ১৯:২৭

সুন্দরবনের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা কৃষিতে সমৃদ্ধ জেলা সাতক্ষীরা। জেলায় উৎপাদিত পণ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ও বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এছাড়াও দেশের দ্বিতীয় চিংড়ি উৎপাদনকারী জেলা হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে এই জেলা। এছাড়াও ভারত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় পণ্য পরিবহনে সাতক্ষীরার ভোমড়াস্থল বন্দর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

এখন সাতক্ষীরা থেকে রাজধানীতে পণ্য আনতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাট বা মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটে এসে ফেরি পার হতে হয় পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে। এতে অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। আর যানজটের সৃষ্টি হলে সময় বেড়ে আরও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শুধু তাই নয়, ঘাটে গিয়েই ফেরিতে ওঠার নিশ্চয়তা নেই। সময় মতো ফেরি না পাওয়ায় এই নদীর পাড়েই কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ঝড়, বর্ষা, নদীর প্রবল স্রোত কিংবা ঘন কুয়াশায় পদ্মার পাড়েই কেটে যায় দিন-রাত। এতে পচনশীল দব্য নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টাতেই সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় পণ্য আনা যাবে।

আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। আর এই সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এই জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।

সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটনসহ শিল্পসমৃদ্ধ সাতক্ষীরার অর্থনীতিকে অনন্য স্থানে নিয়েছে দেশের বৃহৎতম ভোমরা স্থলবন্দর।

ভোমরা স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। প্রতিষ্ঠার ২৬ বছরের বিভিন্ন সময়ে অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন হয়েছে বন্দরটিতে। বর্তমানে বন্দরটি দিয়ে প্রতিদিন চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। আমদানি ও রপ্তানি কাজে জড়িত রয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। ভোমরা বন্দরে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। এই রাজস্ব আদায় বছর শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ১১০০ কোটি টাকায়।

তবে বন্দর প্রতিষ্ঠা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বন্দরটিতে নানা ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকায় আমদানিকৃত পচনশীল কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে পণ্যের উপযুক্ত দাম থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হন এখানকার ব্যবসায়ীরা। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সাথে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভোমরা স্থলবন্দরের মাধ্যমে দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে বলে ধারণা বন্দর কর্তৃপক্ষের।

এ ব্যাপারে ভোমরা স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনয়িনের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পণ্য আমদানির পর এখান থেকে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। ফেরিতে অনেকসময় এর চেয়েও বেশি সময় লাগে। দুর্যোগকালীন সময়ে ফেরি না পাওয়ায় এই নদীর পাড়েই কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে ভারত থেকে আমদানিকৃত পচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা।

তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেই দুর্ভোগ লাঘব হবে জানিয়ে এই শ্রমিক নেতা বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ভারত থেকে পণ্য আমদানির পর রাজধানীতে পৌঁছে যাবে ৫-৬ ঘণ্টায়। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমদানি-রপ্তানিতে খরচও কমে আসবে বহুলাংশে। এতে পাল্টে যাবে ভোমরা স্থল বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যের অতীত প্রেক্ষাপট।

পরিবহণ শ্রমিক ঈমান আলী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ভোমরা স্থল বন্দর থেকে ঢাকায় যাতায়াতের সময় ৫-৬ ঘণ্টা কমে আসবে। তখন পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৫-৬ ঘণ্টা। এতে একদিকে যেমন ভোগান্তি কমবে, তেমনি যাত্রাও সহজ হবে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিরাপদ ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, প্রতিদিন ভারত থেকে ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পদ্মা সেতু চালু হলে এসমস্ত আমদানিকৃত পণ্য ৫-৬ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যাবে। যেখানে এখন ফেরিতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। ফেরিতে কখনো এর চেয়েও বেশি সময় লাগে। কাঁচামাল পচে যায়। এতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেই দুর্ভোগ লাঘব হবে।

ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভোমরা স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবাধ কার্যক্রম শুরু হবে। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে। ভোমরা বন্দরের কিছু উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। এখানে একটি কাস্টমস হাউস প্রয়োজন। সেটি হলে সকল পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে রাজস্ব আদায়ও দ্বিগুণ হবে।

সাতক্ষীরা চেম্বর অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠ বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে এই অঞ্চলের ব্যবসায়-বাণিজ্য বাড়বে। ভোমরা স্থলাবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে সরকার রাজস্ব পাবে কয়েকগুণ।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসান সিআইপি বলেন, দক্ষিণের এই জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই জেলার কৃষি ও পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। পদ্মা সেতু সাতক্ষীরার অর্থনীতিতে যুগন্তরি পরিবর্তন আনবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কমবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ইতোমধ্যে সাতক্ষীরায় একটি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা হতে যাচ্ছে। ফলে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/১৭জুন/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :