হাশেম ফুডসে অগ্নিকাণ্ড: নিহত শ্রমিকরা এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি!

আবদুল হামিদ
| আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ২০:৩২ | প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০২২, ০৮:৪০

নারাণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা জুলাই মাসেই এক বছর পূর্ণ হবে। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা ৫১টি মামলা চলছে। অধিদপ্তর বলছে, হাশেম ফুডসের অবহেলায় এই অগ্নিকাণ্ড। এছাড়া নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ না দেয়ায় শ্রম আদালতে সবগুলো মামলা চলমান।

গত বছর ৮ জুলাই বিকালে নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ছাদ থেকে লাফ দিয়ে বাঁচতে গিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরের দিন ৯ জুলাই ছয় তলা ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃত্যু হয় ৫২ জন শ্রমিকের।

হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় আগুনে অর্ধশতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস, নারাণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও কলকারখানা অধিদপ্তর। আর ঘটনার চার দিন পর ১২ জুলাই শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হুমায়ুন কবিরকে আহ্বায়ক করে জুসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের কমিটি করা হয়।

যুগ্মসচিব হুমায়ুন কবির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি এ বিষয়ে তথ্য অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে তথ্য অফিসারও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।

ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন বলেন, ওই কারখানায় কেমিক্যালসহ প্রচুর দাহ্য পদার্থ ছিল। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। প্লাস্টিক, ফয়েল, কাগজ, রেজিন, ঘিসহ প্রক্রিয়াজাত করা মালামালসহ বিভিন্ন পদার্থ ছিল বলেও জানান তিনি।

ওই বছরের ১০ জুলাই সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও এমডি সজীবসহ আটজনকে আটক করে পুলিশ। পরে ওই ঘটনায় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তবে এই ঘটনায় মোট মামলা হয় ৫২টি। এর মধ্যে ৫১টি শ্রম আদালতে।

ওই মামলায় আসামিরা হলেন- হাসেম ফুড বেভারেজের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম, সহ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিব বিন হাসেম (সজীব), পরিচালক তারেক ইব্রাহিম সতেজ, পরিচালক তাওসিফ ইব্রাহিম শীতল, পরিচালক তানজিম ইব্রাহিম, কোম্পানির সিইও শাহান শাহ আজাদ, ডিজিএম মামুনুর রশিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখান হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে চেয়ারম্যানের দুই ছেলে তাওসিফ ইব্রাহিম শীতল ও তানজিম ইব্রাহিমকে জামিন দেন আদালত। এছাড়া বাকি ছয় আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।

ওই ঘটনায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক নেছার উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে একটি মামলা করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৫ জুলাই অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক নেছার উদ্দিন আহমেদ ও সৈকত মাহমুদ বাদী হয়ে শ্রম আইনে শ্রম আদালতে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম ও উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ৫১টি ক্ষতিপূরণের মামলা করে। তারা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন।

উপ-মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রম আইন অনুযায়ী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রত্যেক ভুক্তভোগীকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তবে আজ এক বছর হতে চলল, সেই ক্ষতিপূরণ দেয়নি বলে জানা যায়।

কিন্তু হাশেম ফুডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে অর্থ দিয়েছে। শ্রম আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। কিন্তু হাশেম ফুড কর্তৃপক্ষ সেটা করেনি। আর আদালতও এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।

এছাড়া কোনো কলকারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে একটি নিদিষ্ট ফর্মের মাধ্যমে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কাছে জমা দিতে হয়। আজ পর্যন্ত তারা সেই রিপোর্ট জমা দেননি।

নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাশেম ফুডের আগুন লাগার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। এই মাসেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। মামলার তদন্ত চলা অবস্থায় এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, এই ঘটনায় মরদেহ বেশি থাকায় মামলার তদন্তে একটু বেশি সময় লেগেছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই জজ কোর্ট থেকে জামিনে আছে। এ ঘটনায় কার কী অবহেলা আছে সেটা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে।

মামলাটি সেনসেটিভ (সংবেদনশীল) হওয়ায় গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে একটু সময় লেগেছে বলে জানান বিশেষ পুলিশ সুপার। ওই সময় যেসব আলামত জব্দ করা হয় সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। মামলাটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তদন্তের জন্য সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/এএইচ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফর স্থগিত

বিশ্ব বাজারে কমলেও দেশে সোনার দাম বেড়ে রেকর্ড

চলচ্চিত্র খাতে বাংলাদেশ-ভারত অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ঈদের ছুটিতে শব্দদূষণে বিরক্ত হয়ে ৯৯৯-এ ১১৭৫ অভিযোগ

মানসিকতার পরিবর্তন না হলে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠন কঠিন হয়ে যাবে: শিক্ষামন্ত্রী

বাংলাদেশে দূতাবাস খুলতে যাচ্ছে গ্রিস

ঢাকায় চালু হলো চীনা ভিসা সেন্টার

যেভাবেই হোক স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন সংসদে পাস করবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সিজারিয়ান প্রসবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ চায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

মিয়ানমার সংকট সমাধানে একজনের খুশির জন্য বাকিদের নারাজ করবে না বাংলাদেশ: সেনা প্রধান

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :