কবিতা
মারের সাগর
প্রকাশ | ১৮ জুন ২০২২, ১১:২১
যে জলে আগুন জ্বলে সেই জলও প্রিয় ছিল নিযুত বসন্তে
কুহুর কূজনে,ফুলের ব্রজকুঞ্জে,রঙের বিচিত্র বাহারে
প্রিতমের ঠোঁট জুড়ে লেপটে থাকা
নাদুস-নুদুস শিমুল ফুলের টকটকে লাল লাল হাসি
মাঠে ময়দানে ছড়িয়ে দিতো দখিনার ভালোবাসাবাসি।
আলতো পায়ে ছন্দ দোলায় হয়তো হারিয়ে যেতো
রূপবান,কপিলা,গোলাপি,সারেং বউ, বেহুলা,সাজু
কিংবা বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না;
একদিন বসন্তবনেই ছিলো তাদের মনের গোপন আস্তানা।
ওদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে, তেমন বুকের পাটা
আছে নাকি সুমেরু কিংবা কুমেরুর নস্যি শৈত্যের দস্যিপনার!
চৈত্রের দাবদাহে, কাঠফাটা মধ্যদুপুরে,বৈশাখী ঘূর্ণি ঝঞ্ঝায়,
শ্রাবণের লাগাতার বর্ষণে,আষাঢ়ের বজ্রগর্জনে,
উত্তাল উন্মত্ত সাগরে
কুবেরের সকল সহযাত্রি তখনো নির্ভীক লড়াকু।
তখনো প্রতিটা শরীর এক একটা অজেয় উপত্যকা
মাটির ঢিবি নয়,পাথুরে পাহাড়
যেখানে আছাড় খেয়ে খড়-কুটোর মতো মিলিয়ে যায়
কামানের গোলা-বারুদের বিস্ফোরণের প্রহার।
দেহের উত্তাপে গলে যায় হিমালয়ের হিম,
মনে হয় সেই ভালো, চিরকাল দখলি স্বত্ব জারি রাখুক
ঢুলু ঢুলু ঘোরাচ্ছন্ন নেশার আফিম;
চিবুকে চিবুক ঘষে বাহুর উপর মাথা রেখে আরামে ঘুমিয়ে থাক উষ্ণতার আদিম উৎস; প্রজন্ম রক্ষার স্বপ্নের ডিম।
এইতো সেদিনও আমরা দুজনে ভরা পূর্ণিমা রাতে গেছি
পথভোলা অভিসারে
চরকা কাঁটা চাঁদের বুড়ির দেশে পুষ্পক রথে চড়ে।
বিশাল নীল চাঁদোয়া তারার ফুলে সাজিয়ে
আমাদের জানালো কী-যে এক রাজকীয় হার্দিক অভ্যর্থনা!
আমাদের জন্যেই যেনো গ্রহ গ্রহান্তরে এত্তোসব ছান্দসিক প্রবর্তনা।
জ্যোৎস্নার রূপালি খেয়ায় ভেসে সাগর সৈকতে এসে
সুতোকাটা বাউন্ডুলে ইচ্ছেঘুড়ির মতো আমরা ধূলোকেলি করেছি ভ্রষ্ট লোকাচারের নিকুচি করে;
অত:পর সমুদ্রস্নান--
সাগরের জীবন্ত ঢেউয়ের উত্তাল দোলায় দুটি প্রাণ যেনো তৃণের সমান।
হৃষ্টপুষ্ট কষ্টের বেসাতিতে আমাদের পাকা হাত,
আমরা আজন্ম দু:খের দয়িতা-
ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ ভয়ঙ্কর সাগরের বিরুদ্ধস্রোতে
আমরা বুক উঁচিয়ে সাঁতরাতে জানি
সহাস্যে সহযাত্রি হয়ে যাই ঘাত-প্রতিঘাত,সমস্যা-সঙ্কট,বিচ্ছেদ-বিরহ আর বঞ্চনা-বেদনার।
আর মৃত্যু ! সে তো জীবনের সঙ্গে খেলে ডাংগুলি খেলা।
ওকেতো হাতের মুঠোয় রাখি পায়রার ঝাঁকে ছিটিয়ে দেয়ার শস্যদানার মতো
কিংবা বুক পকেটে সযত্নে রাখা সাতটা জোনাক পোকার মতো
যারা পকেটের বলয়ে সোনার কণায় আঁকে সপ্তর্ষি মণ্ডল।
অনাদি স্বর্গোদ্যানে যেমন ছিনালি করে আপ্তভাষ্যের প্রতারক ইবলিশ,
বেহুলার লোহার বাসরে যেমন সিঁদ কাটে সুতানালি সাপ
আমার সেই মারের সাগরকে তেমনি জবর দখলে নিয়েছে
ঈর্ষাতুর লেলিহান মারীর সাগর,
যেখানে নিধনের বিকৃত আনন্দে মেতে আছে
রাহুর ইয়ার, মানুষখেকো মারীর হাঙ্গর।