একাত্তরের এই দিনে চিতলমারীতে হত্যা করা হয় অর্ধশত বাঙালিকে

চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৯ জুন ২০২২, ১১:২২

আজ পাঁচ আষাঢ়, রবিবার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই দিনে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামে একটি মাঠের মধ্যে প্রায় অর্ধশত নিরস্ত্র বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা। সেদিনের সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কাহিনী ২০১৭ সালে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আসলে স্থানীয় প্রশাসন খলিশাখালী গ্রামে ‘খলিশাখালী বধ্যভূমি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তখন থেকেই প্রতি বছর ২৬ মার্চ নিহতের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের বাংলা ৫ আষাঢ় রবিবার বেলা ১১টার দিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা মিলে এলাকায় হামলা চালায়। বলেশ্বর নদী দিয়ে গানবোটযোগে তারা প্রবেশ করার পথে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় গুলির আওয়াজে লোকজন প্রাণভয়ে এদিক-ওদিক পালাতে থাকে।

আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশ্রয় নিতে আসা লোকজন এবং অনেক গ্রামবাসী চরবানিয়ারী ইউনিয়ন তথা দশমহল এলাকাকে নিরাপদ আশ্রস্থল মনে করে ভারত যাবার পথে খলিশাখালী ও পূর্ব খড়মখালী গ্রামের মাঠের মধ্যে হোগলা ও নলবনে লুকিয়ে থাকার জন্য আশ্রয় নেয়।

এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখতে পেয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য নিরীহ লোকজনকে হত্যা করে। যাদের মধ্যে অনেকের বাড়ি পিরোজপুর, নাজিরপুর, উজিরপুর, ও কচুয়াসহ আশপাশের এলাকায় বলে জানা যায়।

পূর্ব খড়মখালী গ্রামের প্রবীণ সমাজ সেবক গৌর চন্দ্র মজুমদার সেদিনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা তুলে ধরে জানান, সেদিন বলেশ্বর নদী দিয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা আক্রমণ চালায়। গুলির শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। অনেকে খলিশাখালী ও পূর্ব খড়মখালী গ্রামের মাঠের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখে গুলি চালিয়ে খড়মখালী গ্রামের বিমল কান্তি হীরা, ভদ্র কান্ত হীরা, রাজদেব হীরা, যোগেন্দ্র নাথ মজুমদার, মহেন্দ্র নাথ মন্ডল, আদিত্য মজুমদার, নীল কমল মন্ডল, জিতেন মজুমদার, খগেন মন্ডল (খোকা), অমীয় চৌকিদারের ভাইসহ আশপাশের এলাকা থেকে আশ্রয় নেয়া অসংখ্য লোককে সেখানে হত্যা করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিমোহন হীরা জানান, এই দিন আমার বাবা ও বড় ভাইকে খান সেনা ও রাজাকাররা হত্যা করে। একই সাথে তারা আমার কাকাসহ প্রায় অর্ধশত লোককে হত্যা করে। পরে আমি সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিলে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। এখানে সকল নিহতদের স্মরণে ২০১৭ সালে বদ্ধভূমি ঘোষণা হয়েছে। আমরা দাবি করি এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে ‘চিতলমারী গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফায়েজুন্নেসা বলেন, ২০১৭ সাল থেকে ২৬ মার্চ খলিশাখালী বধ্যভূমিতে নিহতের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। আগামীতে ৫ আষাঢ়কে চিতলমারী গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য উধ্র্বতন কর্তৃপক্ষকের কাছে দাবি জানানো হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :