স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’ বদলে দিচ্ছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য
‘পদ্মা সেতু’ দক্ষিণাঞ্চলে বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে। ঘুরে দাঁড়াবে স্থবির হয়ে থাকা নামি-দামি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি পায়রা সমুদ্র বন্দর সহ শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এ পদ্মা সেতু।
শুধু মাত্র স্বপ্ন নয়। এবার বাস্তবেই গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বদলে যাচ্ছে। এরইমধ্যে ব্যবসায়ীরা তাদের বাণিজ্যিক প্রসার ঘটাতে নতুন পরিকল্পনা শুরু করেছেন।
এছাড়া এ জনপদের অন্যতম আলীপুর মহিপুর মৎস্যবন্দরের ব্যবসায়ীরা সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্তের প্রহর গুণছে। স্বপ্নের এ সেতুটি উদ্বোধনের পর সর্বদক্ষিণের উপকূলীয় এলাকায় সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দুয়ার খুলে যাবে।
আগামী ২৫ জুন সেই কাঙ্খিত মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় সাগর পাড়ের মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, সমুদ্রবন্দর পায়রাসহ অপার সৌন্দর্যের বিস্তীর্ণ উপকূল।
গত দুই দশকের বেশি সময়ে কুয়াকাটায় আগমন ঘটে দেশী বিদেশি হাজারও পর্যটকের। কিন্তু প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে সেই অবসান ঘটবে। আর পর্যটকদের সেবার মান বাড়াবে আগের থেকে কয়েকগুণ। একই সঙ্গে দ্বার খুলবে অর্থনীতির চাকা। নদীবেষ্টিত এলাকার উন্নয়নে থাকছেনা বাধার দেয়াল। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্যন্ননে তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পায়ন। চাহিদা মতো গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেলে গতি ফিরবে অর্থনীতিতে এমনটাই জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
আগত কয়েকজন পর্যটক জানান, পদ্মা সেতুর দ্বার খুলে দেওয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যে কুয়াকাটায় পৌঁছানো যাবে। দূর্ভোগও থাকবেনা। আগমন ঘটবে দেশি বিদেশে পর্যটকের। তাই এখানে আরও হোটেল মোটেলের প্রয়োজন হবে।
জল তরনী ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান জানান, কুয়াকাটাকে নতুন দিগন্তে উন্মোচিত করে দিবে পদ্মা সেতু। ইকো-ট্যুরিজমের প্রসার বাড়বে। সারাবছর পর্যটকে মুখর থাকবে কুয়াকাটার সৈকত।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড এসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে কয়েকগুন পর্যটক বাড়বে কুয়াকাটায়। সেজন্য আমরা ট্যুর গাইডদের পরিধি বাড়াচ্ছি। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। এছাড়া সৈকতকে আরও সৌন্দর্য করার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছি।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা টোয়াকের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে কুয়াকাটার একটি আমূল পরিবর্তন হবে। ঢাকা-কুয়াকাটার দূরত্বটা কমে যাওয়ার কারণে ১০-১২ ঘন্টার পথ ৫-৬ ঘন্টায় পৌঁছানো যাবে। এর ফলে কয়েকগুণ পর্যটক বেশি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
কুয়াকাটা ও আলীপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনছার উদ্দন মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর গভীর সমুদ্র থেকে আহরনকৃত মাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে পারবে জেলেরা।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো.আনোয়ার হাওলাদার জানান, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের প্রধান ভূমিকা রাখবে এই পদ্মা সেতু। উদ্বোধনের পর কুয়াকাটায় দ্বিগুণ নয় শত গুণ বেড়ে যাবে পর্যটক। এছাড়া এ অঞ্চলের মৎস্য খাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে এই পদ্মা সেতু। একই সঙ্গে বাড়বে বিনিয়োগ এমনটাই আশাবাদব্যক্ত করেছেন তিনি।
কুয়াকাটা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেয় এই পদ্মা সেতু। শুধুমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান। এর সুফল ভোগ করবে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সাগর পারের মানুষ। আর সচল হবে অর্থনীতির চাকা। তাই প্রধানমন্ত্রীকে কুয়াকাটাসহ নদী বেষ্টিত উপকূলের মানুষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এসএ)