নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হাওরাঞ্চলের লাখ লাখ বন্যাদুর্গত মানুষ

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২২, ২০:০৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি চরম অবনতি হওয়ার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে চলছে হাওরাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বসত ঘরে কোমর পানি থাকায় কোনো রকমে রাত কাটিয়ে আবার অনেকেই রাতেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে উঁচু বসত ঘরে, হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা কবলিত কয়েক লাখ মানুষ। 

শুকনো খাবার কলা, বিস্কুট, লোফ, কেক খেয়ে অবস্থান করছেন তারা। জেলার সুরমা নদীর পানি নিম্নাঞ্চলের দিকে নামছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। রবিবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি।

জেলা শহরে রিকশাচালক ইকবাল মিয়া বলেন, নিচু এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকি। বাড়িটি বন্যায় ডুবে গেছে। বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন সালেহা মঞ্জিল দোতলা বাড়ির ছাদে উঠেছি। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে কষ্ট করে সময় পার করছি। সড়কে কোমর পানি। রিকশা নিয়ে চলা তো দূরের কথা, জীবন বাঁচানোই দায়। এমন কোনো বাসা নেই যে বন্যার পানি কোমর পর্যন্ত নেই। অনেকে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

জেলার পৌর শহরের জামতলা এলাকার বাবুল মিয়া জানান, চোখের পলকেই বসত ঘরে পানি প্রবেশ করে হাঁটু পানি হয়ে গেছে। পরে জিনিসপত্র কোনো রকমে রেখে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে উপরে তিন তলায় পরিবার পরিজন নিয়ে উঠেছে। এই এলাকা শুধু নয় ষোলগর, আরপিন নগর, নবীনগর, হাসননগর, হাজিপাড়াসহ জেলা শহরের প্রতিটি এলাকায় একেই অবস্থা।

ষোলগর পবন কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছে আলা উদ্দিন তিনি জানান, নবী নগর এলাকায় প্রতিটি বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।বাড়ি ঘরে থাকার কোনো উপায় নাই। যে বন্যা হয়েছে তা সকল রেকর্ড কে পিছনে ফেলে দিয়েছে। খুবেই দুরবস্থার মধ্যে আছি।

হাওর পাড়ের তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণকুল গ্রামের বাসিন্দা সাকিব আহমেদ জানান,এত বড় বন্যা আমার জীবনে প্রথম দেখলাম। চারদিকে পানি আর পানি। যাদুকাটা নদী দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঘরের ভেতরেও পানি প্রবেশ করছে, ঘর থেকে বের হবারও উপাই নেই। 

হাওর বেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, বন্যার চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে হাওরাঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ। আমার ইউনিয়নটি হাওর বেষ্টিত হওয়ার বন্যার পানি প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশ করছে। অনেক মাটির বাড়ি-ঘর ভেঙে হাওরেই মিশেছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি কঠোর নজরদারি মধ্যে রাখা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণক্ষ ও আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার সহায়তা বিতরণ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তারা শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। 

 

(ঢাকাটাইমস/১৯জুন/এআর)