বাংলাদেশ ব্যাংকে আগুন, এসব কিসের আলামত?

প্রকাশ | ২০ জুন ২০২২, ২২:৫১

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংক। স্পর্শকাতর এই প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার বিকালেও ব্যাংকটির চতুর্থ তলার (উত্তর-পূর্ব পাশে অবস্থিত) চিকিৎসা কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় স্টোররুমে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিটের প্রায় আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ওই চিকিৎসা কেন্দ্রে চারটি ফ্রিজ, বিপুল পরিমাণ ওষুধ ছিল। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে, তাও জানা যায়নি।

গত ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে ১৫ থেকে ২০টি কন্টেইনারে বিস্ফোরণ ঘটে। সেসময় প্রতিটি কন্টেইনার একেকটি শক্তিশালী বোমায় পরিণত হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক ব্যক্তি।

এ ঘটনার সাত দিন পর গত ১১ জুন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে আগুন লাগে। ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগের দিন রাজধানীর প্রগতি সরণিতে তুরাগ পরিবহণের একটি বাসে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

এ ছাড়া ১১ জুন ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে যাওয়ার সময় ফেরিতে আগুন লাগে। রোকেয়া নামে ফেরিটি শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি ঘাটের দিকে যাচ্ছিল।

এর আগে ৫ জুন পাবনার বেড়ায় কিউলিন ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি পাটকাঠির কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটে। এক দিন পর ৭ জুন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় একটি জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়।

পরের দিন (৮ জুন) ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার মালুম মসজিদ এলাকার জুতার কারখানায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। ৯ জুন রাজধানীর পোস্তগোলায় একটি চিপস কারখানায় লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে।

এসব আগুনের ঘটনার সব কটিই ঘটেছে হয় কারখানায়, নয়তো যানবাহনে। বাস থেকে শুরু করে বাদ যায়নি ট্রেন ও ফেরি। প্রশ্ন উঠছে— একের পর এক এসব অগ্নিকাণ্ড কি কেবলই অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা, নাকি এতে নাশকতার যোগসূত্র রয়েছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনা তুচ্ছ করে দেখার সুযোগ নেই। নাশকতার সন্দেহ প্রকাশ করছেন তারা। এগুলো নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। নাশকতা আলামত পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আর পুলিশ বলছে, এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে তাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছে। অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

সাম্প্রতিক এসব ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। গত ১৫ জুন এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে সরকারের কাছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

সরকার-প্রধান বলেন, ‘২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান যেন করতে না পারি, সেজন্য একটা নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা চলছে। আমরা তথ্য পেয়েছি যারা পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল, তারাই এ ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করছে। তারা কী করবে তা জানি না। তবে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নজর রাখতে হবে।’

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সম্প্রতি যেসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এতে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশি করে সতর্ক থাকা উচিত। আর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার প্রয়োজন। অগ্নিনির্বাপণে কোনো ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করা উচিত। সবাইকে চোখ, কান খোলা রাখতে হবে।’

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সবগুলো ঘটনায় পুলিশের নজরদারি ও গোয়েন্দা নজরদারি সার্বক্ষণিক রয়েছে বলে জানান সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, এসব ঘটনা তদন্তকালে যদি অন্য কোনো বিষয় বেরিয়ে আসে বা অশুভ চক্রের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বা ২৫ জুন বড় অনুষ্ঠান (পদ্মা সেতুর উদ্বোধন) ঘিরে কোনো কুচক্রিমহল যাতে কিছু করতে না পারে সেজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।’

একের পর এক আগুন লাগার ঘটনা নেহাত দুর্ঘটনা নয় বলে মনে করেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি নিশ্চিত এসব ঘটনায় নাশকতা আছে। এর পেছনে ষড়যন্ত্র কাজ করছে।

বিচারপতি শামসুদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, `আমরা তো জানি, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনটা অনেকে ভালো চোখে দেখছে না। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে উদ্বোধন না হয়। সীতাকুণ্ডের ঘটনা অনেকটা ষড়যন্ত্রের ফল বলে মনে করা হচ্ছে। এটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা না, বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ। সবাই জানে পদ্মাসেতু খুললে বাংলাদেশের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে। এটা বিরোধীরা সহ্য করতে পারছে না।’ এসব ঘটনায় অবশ্যই তদন্তের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) এ কে এম শাকিল নেওয়াজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেশে আগুন তিনভাবে লেগে থাকে। একটি ন্যাচারাল বা বজ্রপাতে। অপরগুলো হলো- নেগলেন্সি বা অসাবধানতা এবং শত্রুতাবশত।

সম্প্রতি যেসব আগুনের ঘটনা ঘটেছে এসব বিষয় যারা অভিজ্ঞ তাদের নিয়ে তদন্ত করার তাগিদ দিয়ে এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘তাহলে বেরিয়ে আসবে কে কোন মোটিভ নিয়ে এই ধরনের কাজ করছে।’

(ঢাকাটাইমস/২০জুন/এসএস/মোআ)