অবশেষে সেই সেলিম খানের জমিতেই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ জুন ২০২২, ১৫:০৭

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২ একর জায়গা অধিগ্রহণ হলেও ২০ গুণ বেশি টাকা চেয়ে সেই বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান হাইকোর্টের আপিল বিভাগে রিট মামলা দায়ের করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে। আদালতে চলমান এ মামলাটি ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। সেই মামলাটি উচ্চ আদালতে চলমান অবস্থায় আদালত তা খারিজ করে দেয়।

এতে করে সেলিম খানের কপাল খুলে যায়। তিনি সংখ্যালঘুদেরসহ বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে অল্পমূলে ও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় টাকা না দিয়ে বাকিতে হতদরিদ্র মানুষের জায়গা তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও প্রভাব বিস্তার করে পেশী শক্তি ব্যবহার করে ৬২ একর জায়গার দলিল সৃষ্টি করে নিজেরা ৬২ একর জায়গার মালিক হয়ে যান।

অবশেষে আইনের ফাঁকফোকোরে সেলিমখানের মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। তার পরও সেলিমের দখলীয় মানুষের কাছ থেকে জোর প্রয়োগ করে নেওয়া ৬২টি একর জায়গা, সেই জায়গাটি চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া প্রাককলন মোতাবেক জায়গার মূল্য ৩গুণ বেশি দরে উচ্চ মূল্য যথাযথ মন্ত্রণালয়ে ও আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

সে মোতাবেক আদালতের নির্দেশে সেলিম খান এ ২০২২ সালের জুন মাসেই সেই ৬২ একর জায়গার মূল্য পাচ্ছেন, প্রায় ২শত কোটি টাকা।

এ ছাড়া আদালতের রায় মোতাবেক সেই সেলিম খানের মালিকীয় ভূমিতে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অচিরেই ভর্তিসহ এর পাঠদান চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ভাড়া ভবনে শুরু হবে।

তবে ভাড়া ভবনে হলেও চলতি বছরেই শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাছিম আখতার।

এর আগে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে ৬০ একর জায়গায় বিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জমির মালিকপক্ষ ও সরকারপক্ষের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে জমির মালিক পক্ষ হাইকোর্টে একটি রিট করে। যা গত ৯ জুন শুনানি ও খারিজ করেছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায়ে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১৯৩ কোটি টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে জমির মালিক স্থানীয় চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ তিনজনকে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯ এর খসড়ার চুড়ান্ত অনুমোদন হলেও ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে এখনো বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার মতো তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে চাঁদপুরবাসীর দাবি সব প্রতিকুলতার সমাধান করে যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হয়।

সংসদে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। পরে অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতারকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে এবং ভূমি অধিগ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম বছর ভাড়া ভবনে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে। মূলত অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ভাড়া ভবনেই প্রথম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে নিজস্ব ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চালু হয়।

এর আগে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে উপাচার্যদের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দেশের ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়। ২০২২ সালে ভর্তি পরীক্ষায় নতুন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিষয়ে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাছিম আখতার বলেন, আমরা এ বছরই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা চাই কোনোভাবেই যেন কার্যক্রম পিছিয়ে না যায়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ জুলাই কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (সিএসই) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১৩ আগস্ট ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) এবং ২০ আগস্ট ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) অনুষদে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম বছর আমরা তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিও চিন্তা করছি। তিনটি বিভাগে ৩০ জন করে মোট ৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। শিক্ষার্থী ভর্তিও জন্য গুচ্ছতে আছি।

শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, কার্যক্রম চালুর জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। জনবল নিয়োগের বিষয়টি ইউজিসির ওপর ছেড়ে দিয়েছি। ভর্তি কার্যক্রম চলাকালেই চাঁদপুরসহ অন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একত্রে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে বলে কমিশন থেকে জানানো হয়েছে।

ড. নাছিম আখতার বলেন, ইউজিসি থেকে ভবন নির্মাণের জন্য পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত একটি বরাদ্দ দেয়। সে টাকা পেলে মোটামুটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণ হলেই একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, ল্যাব ও গবেষণা কেন্দ্রের কাজ শুর হবে। তবে কবে নাগাদ ভবনের কাজ শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য ও শিক্ষার গুণগতমান বজায় রাখতে নিজস্ব ভবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একাডেমিক ভবন নির্মাণের বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বলেন, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চাঁদপুরবাসীর অহংকার। সারাদেশ থেকে এখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার জন্য আসবে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বেও বিষয়।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রথমেই সব অবকাঠামো তৈরি করে যে চালু করতে হবে তা কিন্তু নয়। এছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। এটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সব জটিলতার সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান ঠিক রাখতে অবশ্যই একাডেমিক ভবনের প্রয়োজন। যদিও প্রথম বছর ভাড়া ভবনেই পাঠদান চালু করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২১জুন/ এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :