যমুনার থাবায় বসত-ভিটা হারিয়ে দিশেহারা জরিনা!

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
| আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৬:২৭ | প্রকাশিত : ২২ জুন ২০২২, ১৬:১৮

জরিনা বেগম। বয়স ৭২। যমুনা নদীর ভয়াবহ থাবায় কমপক্ষে পাঁচ বারের মতো ভাঙনের শিকারে নিঃস্ব হয়েছেন। এখন তিনি সব হারিয়ে দিশেহারা। আগের বন্যায় বসত-ভিটে না ভাঙলেও চরাঞ্চলে বিঘাখানেক জমি ছিল সেটা গেল বছর নদীর পেটে চলে গেছে। এবার জমি হারানোর পর বসত-ভিটে হারানোর পথে বসেছি। ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বাড়িটাও এবার শেষ রক্ষা পাবে না। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এদিকে, বন্যার কারণে ঘরে চাল-ডালের সংকট। এক বেলা কোনো রকম খেয়ে দিনপার করতে হচ্ছে। সরকারি কোনো ত্রাণ পায়নি।

এমন কথাগুলো বলছিলেন, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ী গ্রামের চরাঞ্চল এলাকার বাসিন্দা করিম হোসেনের স্ত্রী ওই জরিনা বেগম। তিনি বলেন, এনিয়ে পাঁচ বার ঘর সরাতে হচ্ছে। যমুনার কালো থাবায় জীবন এখন অতিষ্ঠ। বসত-ভিটে হারাতে হচ্ছে এ বন্যায়। এখন থাকব কোথায় এমন দুশ্চিন্তায় পড়েছি। বসত-ভিটে ভাঙনের মুখে। পানি উঠেছে বাড়িতে। রাস্তার পাশে পলিথিনের ছাউনিতে থাকতে হবে।

জরিনা বেগমের স্বামী করিম হোসেন বলেন, চরাঞ্চলের মধ্যে কয়েক শতাংশ মাত্র বসত-ভিটে। আর কিছু জমি-জমা রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষেত-খামারে কৃষি কাজ করে সংসারের হাল ধরে আছি বৃদ্ধ বয়সেও। পাঁচ ছেলে সন্তান ও দুই মেয়ে। সবাইকেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাঁচ ছেলে সন্তান থাকলেও তারা পৃথক। কয়েক বছরে বন্যায় বাড়িতে শুধু পানি উঠেছে। তখন উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয়া হয়েছে এবং গত বছর জমিও ভেঙে গেছে যমুনায়।

তিনি বলেন, জমিগুলো ভাঙনেও শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন ফসল চাষবাস করেছি। লালন-পালন করা হয়েছে গবাদিপশু। কিন্তু এ বছর বন্যার পানির স্রোতের তীব্রতা বেশি। নদী ভাঙতে ভাঙতে বসত-ভিটা ধরেছে। এবার বন্যায় আর রক্ষা পাবে না। তাই ঘরের আসবাপত্র পানিতে ভেসে যাওয়ার আগেই নৌকা যোগে গোবিন্দাসী উঁচু কোন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছি পরিবারকে নিয়ে। চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানিরও তীব্র সংকট। গরু-ছাগল ও হাস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়ছি।

শুধু জরিনা বেগম বা তার স্বামী করিম হোসেন নন, তার মতো রহিম হোসেন ও ফরিদা বেগমসহ অনেকেই বলেন, গতবারের তুলনায় এবার অনেক ভাঙন। নদী তীরবর্তীর চেয়ে চরাঞ্চলের ফসলি জমি বেশি ভাঙছে। চরে থাকা ঘরবাড়িগুলো ভাঙনের মুখে পড়ছে। বাড়িতে পানি উঠছে। যার কারণে আমরাও পরিবার ও গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে চলে যাচ্ছি। এদিকে, গত কয়েক দিন ধরে বিশুদ্ধ পানিসহ খাবার সংকট দেখা দিলেও এখন পর্যস্ত কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা পাইনি। মানবেতর জীবনযাপন করে আসছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইশরাত জাহান জানিয়েছেন, উপজেলায় এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিত পরিবারদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাননি। তবে, ত্রাণ সহায়তার জন্য বরাদ্দ চেয়েছেন। বরাদ্দ পেলেই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করবেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়রাম্যান মোছা. নার্গিস আক্তার জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য এখনো ত্রাণ পাইনি। ত্রাণের জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত ত্রাণ পাওয়া যাবে।

(ঢাকাটাইমস/২২জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :