এবার কর গোয়েন্দাদের জালে পারটেক্স ও আম্বার গ্রুপের কর্ণধাররা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর গোয়েন্দাদের জালে এবার দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান পারটেক্স ও আম্বার গ্রুপের কর্ণধাররা। পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাশেমের পাঁচ ছেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পাঁচ বছরের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়েছে এনবিআর।
এ ছাড়া তাদের অ্যাকাউন্ট-সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র এবং বিনিয়োগ প্রকল্প সম্পর্কিত তথ্য দিতেও বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার এনবিআর সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকে দেশের ব্যাংকগুলোকে এ-সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে সাত দিনের মধ্যে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
দেশের অন্যতম এই শিল্পগ্রুপের অনেকে দেশের কয়েকটি অভিজাত সামাজিক ক্লাবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, এর আড়ালে তারা নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে মারা যান পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাশেম। তিনি আরও প্রতিষ্ঠা করেন স্টার গ্রুপ, অ্যাম্বার গ্রুপসহ আরও একাধিক প্রতিষ্ঠান। তার মৃত্যুর পর সন্তানরা এসব প্রতিষ্ঠান দেখভাল করছেন।
এনবিআরের দেওয়া চিঠিতে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধারদের ব্যাংক হিসাব চাওয়া হয়।
এই তালিকায় রয়েছেন—সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পারটেক্স স্টার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, তার স্ত্রী তাবাসসুম কায়সার, পারটেক্স পেপার পরিচালক আজিজ আল মাসুদ, তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, পারটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবেল আজিজ, তার স্ত্রী সায়েদা শাইরিন আজিজ, পারটেক্স গ্রুপের আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর শওকত আজিজ রাসেল, তার স্ত্রী ফারহানাজ চৌধুরী, পারটেক্স স্টার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আজিজ আল মাহমুদ ও তার স্ত্রী সাভেরা এইচ মাহমুদ।
চিঠিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক নিম্নোক্ত ছকে বর্ণিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি করদাতাগণ এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের একক বা যৌথ নামে অথবা তাঁদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে আপনার ব্যাংকে/ প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত/ রক্ষিত যেকোনো মেয়াদি আমানত হিসাব (এফডিআর ও এসটিডি হিসাবসহ যেকোনো ধরনের বা নামের মেয়াদি আমানত হিসাব), যেকোনো ধরনের বা মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভন্ট, সঞ্চয়পত্র বা অন্য যেকোনো ধরনের সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিম বা অন্য যেকোনো ধরনের বা নামের হিসাব পরিচালিত বা রক্ষিত হয়ে থাকলে উক্ত হিসাবের/ হিসাবসমূহের ১ জুলাই, ২০১৫ থেকে হালনাগাদ বিবরণী ও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের বিবরণী এই পত্র প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর বরাবরে প্রেরণের জন্য আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ১১৩ (এফ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আপনাকে অনুরোধ করা হলো।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘উক্ত সময়ের মধ্যে অথবা পূর্বে হিসাব আরম্ভ হয়ে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে হিসাব বন্ধ হয়ে গেলে অথবা শেষ হয়ে গেলে অথবা সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও চাহিদা মোতাবেক তথ্য পাঠাতে হবে।’
বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়া আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ। এরই অংশ হিসেবে তথ্য চাওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর শওকত আজিজ রাসেলের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদের মেয়ে মেহনাজ রশিদের সঙ্গে শওকত আজিজ রাসেল ও রুবেল আজিজের গভীর সখ্য রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২২জুন/এসএস/ইএস/মোআ)