ঢাবি শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হলছাড়া করল ছাত্রলীগ

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১৭:২৩ | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০২২, ১৬:৩৯
অভিযুক্ত সত্যজিৎ দেবনাথ (বাঁ পাশে) এবং হামলার শিকার শিক্ষার্থী উৎসব রায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রকে তার আবাসিক হলের নিজ কক্ষে ঢুকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের এক নেতা। ভবিষ্যতে হলে ঢুকলে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উৎসব রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র।

গত মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকালে জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৭০১২ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলের বাইরে আছেন। এ ঘটনায় জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

অভিযোগপত্রে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিখেছেন, ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে সত্যজিৎ দেবনাথের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ আমার ওপর হামলা করে। আমাকে ব্যাপক মারধর করা হয় এবং রুম থেকে টেনে হিঁচড়ে উত্তর গেট দিয়ে বের করে দেয়। পরবর্তীতে হলে এলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় হামলাকারীরা।

অভিযুক্তরা হলেন, ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সত্যজিৎ দেবনাথ, একই শিক্ষাবর্ষের বাঁধন (বিভাগ জানা যায়নি), ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সবুজ কুমার, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শুভ সাহা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের রাজিব বিশ্বাস, একই শিক্ষাবর্ষের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের গণেশ ঘোষ, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অমিত দে ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রিভু রিদম।

এছাড়াও অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্বাগতম বাড়ৈ, অর্থনীতি বিভাগের দীপ্ত রায়, উর্দু বিভাগের সবুজ শীল, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের অভিষেক ভাদুরী, পাপন বর্মণ (বিভাগ জানা যায়নি), ইতিহাস বিভাগের সৌরভ সাহা, একই বিভাগের জয় দাস, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অপূর্ব দাস, একই বিভাগের পুষ্পেন্দু মণ্ডল, ব্যাংকিং এন্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অমৃত মণ্ডল ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রিতম আনন্দ।

অভিযুক্ত সবাই জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণের অনুসারী। অতনু বর্মণ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী। প্রধান অভিযুক্ত সত্যজিৎ দেবনাথ জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।

হামলার পর ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নেন।

ভুক্তভোগী উৎসব রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, দুপুরে খাওয়ার পর আমি আমার কক্ষে বিশ্রাম নিতে আসি। বিকালের দিকে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার (সত্যজিৎ) নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন আমার কক্ষের দরজার ছিটকিনি ভেঙে ঢুকে পড়ে।

উৎসব রায়ের ভাষ্য, কক্ষে ঢুকেই তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাকে স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। সত্যজিৎ আমার মাথায় আঘাত করে। এরপর আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। মারার পর আমাকে হল থেকে বের করে দেয়। সে বলে দিয়েছে যদি আমি হলে আসি তাহলে আমাকে সে জীবন্ত মেরে ফেলবে। আমি এখনো পর্যন্ত হলে যেতে পারিনি। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিৎ দেবনাথ। তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, আমি এই কাজ করিনি। ঘটনার সময় আমি আমার কক্ষে ছিলাম। পুরো হলের ছেলেরা মিলে তাকে মারধর করে হল থেকে বের করে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোবাইল ছিনতাই, মাদক সেবনসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে হামলার বিষয়টি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ উল্লেখ করে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঘটনার সময়ে আমি সিলেট ত্রাণ বিতরণ কাজে ছিলাম। হলে ফিরে ঘটনা শুনেছি। মোবাইল চুরি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযোগকারীও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সম্ভবত সে ভয় পেয়ে হল ছেড়েছে। আমি তাকে হলে ফিরতে বলেছি।

ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু ঘটনাটি হলের অভ্যন্তরে ঘটেছে, সেজন্য আমরা হল প্রশাসনকে বিষয়টির প্রবিধান করতে বলেছি। আশা করছি হল প্রশাসন এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবে। প্রয়োজনে আমরা হল প্রশাসনকে সহযোগিতা করব।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :