প্রশ্নপত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফর ইকবাল’ প্রতীকী, বলছে ভিকারুননিসা

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ জুন ২০২২, ১৮:৩১

সপ্তম শ্রেণির একটি প্রশ্নপত্রে ‘মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফর ইকবাল’ নামটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকার নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

ওই প্রশ্নপত্রে বিশ্লেষণ করতে বলা ৮ নম্বর প্রশ্নটি ছিল— ড. জাফর ইকবাল একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। যুদ্ধ চলাকালীন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করত। শত্রুপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি যোগাতো। ড. জাফর ইকবালসহ বাঙালির ধারনা এই ‘জয় বাংলা’ শব্দটির মধ্যে এক ধরনের শক্তি লুকিয়ে আছে।

প্রশ্নপত্রটির কিছু অংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে চলছে আলোচনা। ‘ড. জাফর ইকবাল নামে’ সেখানে উল্লেখ হয়েছে তা দেশের অতিপরিচিত লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের নামের মতোই। তবে প্রশ্নপত্রে ‘মুহম্মদ’ নেই।

গত শুক্রবার (১৭ জুন) ‘অভিভাবক ফোরাম ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে’ এই প্রশ্নপত্রের কিছু অংশ পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘একজন অভিভাবক হিসেবে আমরা লজ্জিত। কিন্তু এই স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষর লজ্জা আছে কি? ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষায় ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ।’

এরপর শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। নানা ধরনের কমেন্ট আসতে থাকে সেখানে। মাহমুদুল হাসান আল মারজান নামের একজন লিখেছেন, ‘উদ্দীপকে উল্লিখিত নামটি ব্যবহার করতে পারেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

‘তবে জনাব ড. জাফর ইকবাল সাহেবকে মুক্তিযোদ্বা হিসেবে উপস্থাপন করা মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চরম অবক্ষয় রীতিমতো প্রতিভাত হয়। দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিকারিক যদি এহেন গর্হিত কাজ করেন তাহলে শিক্ষার্থীরা কিরূপে শিখবেন।’

জাহিদুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, এটা একটা উদ্দীপক, সম্পূর্ণই কাল্পনিক। এখানে নামের জায়গায় যদু, মধু, রাম, রহিম যে কেউ হতে পারে। মোট কথা হচ্ছে, উদ্দীপকের ঘটনার সাথে গল্প ও কবিতার ঘটনার মিল, অমিল তুলে ধরতে হবে।’

এর জবাবে আরিফ আসমির রাজিভ নামের একজন লিখেছেন, ‘যারা উদ্দীপক কল্পনা করেছেন তাদের কল্পনা মনে হয় এর বাইরে যেতে পারে না। এরকম যদি কল্পনার অবস্থা হয় তাহলে তো শিক্ষার বারোটা বাজবে।’

শাহদাত হুসাইন নামের একজন লিখেছেন, ‘ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষকে বলতে হবে জাফর ইকবাল যুদ্ধ করেছিল কত নাম্বার সেক্টরে, তাকে কেন মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেওয়া হয় নাই, ইতিহাস বিকৃতির একটা সীমা আছে।’

মুনমুন নামে একজন লিখেছেন, ‘ড. জাফর ইকবাল কী ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল? উদ্দীপ‌কের কোথাও কি লেখা আছে তি‌নি শিক্ষা‌বিদ, লেখক বা সা‌হি‌ত্যিক? বিজ্ঞান লেখক, ৯ম শ্রেণির পদার্থ বিজ্ঞান বই‌য়ের লেখক? নাম‌টি ব্যবহারে কিভা‌বে ইতিহাস বিকৃত হ‌য়ে‌ছে?’

প্রশ্নে উদ্দীপক হিসেবে আসা নামটির বিষয়ে জানতে ঢাকাটাইমস কথা বলেছে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ডে কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের সঙ্গে। তার ভাষ্য, এখানে নামটি প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।

ঢাকাটাইমসকে অধ্যক্ষ কামরুন বলেন, ‘এই নাম প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। জাফর ইকবাল নামে তো দেশে শুধু একজনই নয়, দেশে শত শত লোক আছে। এই নামটা প্রতীকী। প্রশ্নপত্রে তো মানুষ কাল্পনিক নাম দিয়েই করে।’

কিন্তু ড. (ডক্টর) কেন ব্যবহার করা হয়েছে প্রশ্নের জবাবে ভিকারুননিসা অধ্যক্ষ বলেন, ‘এখানে ডক্টরটা ডাক্তার হিসেবেও আপনি দেখতে পারেন। প্রশ্নপত্রে কোনো ব্যক্তি বিশেষকে ধরে করা হয় না। প্রশ্নগুলো করা হয় কাল্পনিক। আসলে উদ্দেশ্য ছাত্রদের পদ্ধতিটা শেখানো।’

এই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই সমালোচনার কারন যারা ভিকারুন নিসার সুবিধা পায় না তারা তাকিয়ে থাকে এই দিকে। না খেয়ে, চাকরি-বাকরি না করে তারা গেটের উল্টা দিকে বসে থাকে চা খায় আর বদনাম কোনদিক দিয়ে বের করবে তার খোঁজখবর করে।’

এদিকে গত ১৬ জুন শুরু হওয়া একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও ছিল বানান আর ভাষাগত ভুলের সমাহার।

প্রশ্নপত্রের প্রথম পাতাতেই বানান ভুল করা হয়েছে ২৩টি। এই ভুল নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক সমাজও।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, ‘এই প্রশ্নপত্রে ভুলের বিষয়ে যারা প্রশ্ন তৈরি করেছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। একজন শিক্ষক ৩০ বছর চাকরি করে অবসরে গেছেন তারা কি ভুল করবেন বাংলা ভাষার? এটা সম্ভবত প্রেসের ভুল হতে পারে বা টাইপিং মিসটেকও হতে পারে।’

শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরি করে দেওয়ার পর তা প্রেসে পাঠানো হয়, সেইক্ষেত্রে ছাপাখানা ভুল কিভাবে হতে পারে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কামরুন বলেন, ‘শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করেই দেন। তারপরেও তারা (প্রেসে) ভুল করেন। তবে বিষয়টা আমি খতিয়ে পদক্ষেপ নেবো।’

(ঢাকাটাইমস/২৩জুন/কেআর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :