বন্যার্তদের পাশে অকুতোভয় কে এই তাশরীফ?

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১২:২০ | প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০২২, ১১:১০

সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলের বন্যাদুর্গত জনগণের পাশে শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে তরুণ এক যুবককে। যে কিনা বন্যাদুর্গতদের জন্য সহায়তা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি লাইভ করেন। যা মূহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। তার এই মানবিক আহ্বানে সাড়া দেয় দিয়েছে অসংখ্য মানুষ। তাশরীফ এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন কোটি টাকার বেশি।

সেই টাকা দিয়ে জিনিসপত্র কিনে রাত-দিন এক করে গত কয়েকটা দিন ক্লান্তিহীন ভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন তাশরীফ। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, বন্যার পানিতে নেমে বিতরণ করছেন ত্রাণ। ফলে সবার চোখের মণি হয়ে উঠেছেন তাশরীফ। চারদিকে তার প্রশংসা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য তার এই উদ্যোগ এবং চেষ্টা অনুপ্রাণিত করছে হাজারো যুবককে।

কিন্তু কে এই তাশরীফ? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি একাধারে গায়ক, গীতিকার এবং সুরকার। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ ‘কুঁড়েঘর’ নামে একটি বাংলা ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৭ সালে ইউটিউবে ‘কুঁড়েঘর’ নামে একটি চ্যানেলও চালু করেন। যেখানে প্রকাশিত গানের সংখ্যা ৯০টির মতো। তরুণ এই কন্ঠশিল্পীর ‘আমি মানে তুমি’, ‘ব্যাচেলর আমি ব্যাচলর’, ‘তাইতো আইলাম সাগরে’, ‘ময়নারে’সহ বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সংগীতশিল্পীর পাশাপাশি নানারকম সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকেন তাশরীফ। সপ্তাহ খানেক আগে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যার্তদের ব্যক্তিগতভাবে সহায়তার উদ্দেশ্যে সেখানে যান তিনি। গিয়ে বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে তাশরীফ চিন্তা করেন, তার একার সহায়তা দিয়ে কিছুই হবে না। লড়তে হবে সম্মিলিতভাবে। এর পরই গত ১৬ জুন প্রথমবার নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক থেকে লাইভ করে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে অর্থ সহায়তার আহ্বান করেন তাশরীফ।

প্রথম পর্যায়েই খুব কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ১৬ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা পান। সবার এই অভাবনীয় সাড়ায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তাশরীফ। সিলেটের স্থানীয় তরুণদের সঙ্গে নিয়ে ওই টাকা দিয়ে কেনা খাবার বানভাসি মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। মানুষের কাছ থেকে যে ১৬ লাখ টাকা তিনি পেয়েছিলেন, ফেসবুক লাইভে এসে স্বচ্ছতার সঙ্গে তার সমস্ত বিবরণও দিতে দেখা যায় এই তরুণকে।

দ্বিতীয় ধাপে, গত ১৯ জুন আরও একটি লাইভে এসে বানভাসি মানুষের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তাশরীফ। এবার ঘটে আরও অভাবনীয় ঘটনা। তরুণ গায়কের আহ্বানে সাড়া দেন আরও বেশি সংখ্যক মানুষ। লাইভের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবার তাশরীফের তহবিলে জমা পড়ে কোটি টাকার বেশি।

বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুক লাইভে তাসরিফ জানান, ইতোমধ্যে আমরা প্রায় দেড় কোটি টাকা সংগ্রহ করেছি যা দিয়ে সামনের কয়েকদিনে পাঁচটি উপজেলার প্রত্যেকটি গ্রামে প্রায় ১২ হাজার পরিবারের কাছে ১২ থেকে ১৫ দিনের খাবার পৌঁছে দেব।’

তাসরীফের লক্ষ্য, সিলেট-সুনামগঞ্জ ছাড়াও অন্যান্য বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তিনি বলেন, ‘আপনাদের পরবর্তী সাহায্যের উপর নির্ভর করবে আমরা বন্যায় আক্রান্ত অন্য জেলায় কাজ করতে পারব কী না! যতদিন মানুষের ঘরে পানি আছে, ততদিন আমরা মাঠে থাকব এটা আমার ওয়াদা।’

তাশরীফের এলাকা নেত্রকোনায় তার গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই যুবকের বহু পুরনো অভ্যাস। কৈশোরকাল থেকেই তিনি মানুষের জন্য কাজ করে আসছেন। মানুষের ইচ্ছাপূরণেও এগিয়ে আসতেন। আশপাশের অসহায় মানুষদের বিপদে আপদে ছুটে যেতেন। চিকিৎসা, লেখাপড়া নানা কাজে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। সেই মানবিক গুণাবলী এখন আরও বিকশিত হয়েছে তাশরীফের মধ্যে।

সিলেটে তখন বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়নি। কিছু এলাকায় ছিল। সেই পরিস্থিতি দেখে মাসের শুরুতেই সিলেটের ভক্তদের কথা দিয়েছিলেন, বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াবেন। কথা রাখতে সিঙ্গাপুরে শো শেষে ১৪ জুন দল নিয়ে সিলেট ছুটে যান এই তরুণ সংগীতশিল্পী। এর পরই হঠাৎ বন্যার ভয়াবহতা বেড়ে যায়। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষ। তারপর থেকেই ঘরবাড়ি ডুবে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া হাজারো মানুষের পাশে রয়েছেন তিনি।

১৯৯৪ সালের ১৯ জুলাই নেত্রকোনা জেলায় জন্ম তাশরীফ খানের। এম এ হালিম খান ও আয়েশা পারভীন দম্পতির ছোট সন্তান তিনি। ছোটবেলা থেকে তাশরীফের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। স্বপ্ন দেখতেন দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবেন। নিজ জেলার আন্ডার সিক্সটিন দলে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু ছোটবেলায় তার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নামে একটি রোগের জন্য তাকে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হতো। যার কারণে তার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি।

পরবর্তীতে কলেজে পড়ার সময় তাশরীফ তার মধ্যে আরও একটি প্রতিভা আবিষ্কার করেন। ভালো গান করেন তিনি। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি দুই ভাই তানজিব খান ও তানভির সিদ্দিকীকে নিয়ে ‘কুঁড়েঘর’ ব্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা করেন। নিজেরা গান লিখে এবং সুর দিয়ে তা ইউটিউবের মাধ্যমে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। বর্তমানে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে তার অনেক জনপ্রিয়তা আছে।

তাশরীফের কিছু কথা

‘২০-২৫ দিন আগে সিলেটে প্রথম বন্যা হয়। তখন আমরা কথা দিয়েছিলাম, সিলেটের মানুষের পাশে থাকব। সেই সময় আমাদের সিঙ্গাপুরে একটি শো ছিল। আমরা চেয়েছিলাম, শো থেকে পাওয়া আয় নিয়ে সিলেট যাব। তখন পানি নেমে যাবে। মানুষের দুর্ভোগটা আরও বাড়বে। শো শেষে ১৩ জুন দেশে ফিরে ১৪ তারিখে সিলেট আসি কথা রক্ষার জন্য। আমরা এক লাখ টাকা নিয়ে আসি।’

‘কিন্তু সেদিন থেকেই কাকতালীয়ভাবে সিলেটে পানি ও বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই, পরিস্থিতি ভালো না, এক লাখ টাকায় হবে না। তখন ভাবছিলাম এক লাখ টাকায় কী করতে পারব? তখন একটি ছবি পোস্ট করে বলি, ‘এক-দুই লাখ টাকা পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না। আমি সিলেট থেকে কোনোভাবেই পালিয়ে যেতে চাই না। আপনারা পাশে দাঁড়ান।’ এর ঠিক ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টায় ১৪ লাখ টাকা দিয়ে মানুষ পাশে দাঁড়ায়।’

‘পরে আমাদের নম্বরগুলো লেনদেনের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে। এটাও পর্যাপ্ত ছিল না। পরবর্তীতে আমরা আবার তৃতীয়বারের মতো ফান্ড রাইজিং করি। সেখানে অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় দেড় কোটিরও বেশি টাকা মানুষ পাঠিয়েছে। মানুষের এই ভালোবাসা আমাকে ইমোশনাল করে দিয়েছে। ইচ্ছা করছে, অর্থসহায়তা দেওয়া প্রতিটি মানুষের পা ছুঁয়ে সালাম করি। তারা আমাদের মতো তরুণদের অনেক বড় একটা স্বপ্ন দেখাল।’

(ঢাকাটাইমস/২৪ জুন/এলএম/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

যেভাবে সালমান খানের বাড়িতে গুলি চালানোর ছক কষা হয়

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এফডিসিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় পরিচালকদের তীব্র ক্ষোভ

নির্বাচনে পীরজাদা হারুনকে বয়কট করলেন চিত্রনায়িকা শিল্পী

বাসার কেয়ারটেকারের কাছে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন নির্মাতা হিরণ

শিল্পী সমিতির নির্বাচন: ইশতেহার নিয়ে যা বললেন নিপুণ

তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী: মিনা পাল থেকে যেভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কবরী

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটার ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, থাকবে মোবাইল কোর্ট

নির্মাতা হিরণের আকস্মিক মৃত্যুতে অপমৃত্যু মামলা

বাইকে বসে গুলি চালানো হয় সালমান খানের বাড়িতে! ভিডিও প্রকাশ

নিউইয়র্কে প্রদর্শিত হবে ইভান মনোয়ারের শর্ট ফিল্ম ‘প্যাসেঞ্জার’

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :