‘লবণ’ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছিল: গবেষণা

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২২, ১৯:৪১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

সমুদ্রের পানিতে লবণের উপস্থিতি ছিল পৃথিবীতে প্রাথমিক বাসযোগ্যতার চাবিকাঠি। কারণ সমুদ্রের পানিতে লবণের উপস্থিতির ফলে সূর্য কম উজ্জ্বল হলেও উষ্ণ তাপমাত্রা পাওয়া যায়। সম্প্রতি একটি জলবায়ু মডেলের ওপর ভিত্তি করে করা এক গবেষণায় এমনটিই দাবি করছেন গবেষণার প্রধান লেখক এবং ইন্ডিয়ানার পারডু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টেফানি ওলসন। তিনি ভিন গ্রহে প্রাণের সন্ধান এবং বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করে আসছেন দীর্ঘ দিন ধরে।

নিউজ উইকের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অনুসন্ধানটি ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান পেতে সহায়তা করতে পারে বলে গবেষকদের দাবি।

স্টেফানি বলেন, বায়ুমন্ডলের গঠন—বিশেষ করে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রাচুর্য পৃথিবীর জলবায়ুকে প্রভাবিত করে৷ সমুদ্রের জলে লবণের উপস্থিতি পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহের বাসযোগ্যতার ওপরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

তার দল বিশেষভাবে কীভাবে মহাসাগরের লবণের উপাদান গ্রহের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে গবেষণা করেছে। জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালের ফলাফলগুলি বলছে, সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে জীবন সাধারণ হতে পারে।

ওলসন জানান, পৃথিবীর দূরবর্তী অতীতে যখন সূর্য কম উজ্জ্বল ছিল তখন সম্ভবত পৃথিবীর আদি বাসযোগ্যতার মূল উপাদান ছিল লবণ। এই আবিষ্কারটি অন্যান্য গ্রহের বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। সম্ভাব্যভাবে সৌরজগতের বাইরের জীবন নিয়ে এতদিন যে ধারণা ছিল আমাদের তার থেকেও অনেক বেশি কিছুর অস্তিত্ব থাকার ইঙ্গিত দেয়।

গবেষণায় সমুদ্রের গতিশীলতা পরিবর্তন করতে লবণের ব্যবহার দেখানো হয়েছিল। প্রতি কিলোতে ২০ থেকে ৫০ গ্রাম লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বর্তমান পৃথিবীতে বরফের যে আবরণ তা ৭১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

এই একই লবণাক্ততার পরিবর্তনের কারণে কার্বন ডাই অক্সাইড থ্রেশহোল্ডও অর্ধেক হয়ে গেছে, যেখানে বিলিয়ন বছর আগে গ্রহটি দেখতে 'স্নোবল' গ্রহের মতো ছিল।

ওলসন বলেছেন, উচ্চ স্তরের গ্রিনহাউস গ্যাসের সংমিশ্রণে একটি লবণাক্ত মহাসাগর সূর্য থেকে প্রায় ২০ শতাংশ কম শক্তি গ্রহণ করা সত্ত্বেও মেরুতে শুধুমাত্র মৌসুমী বরফসমৃদ্ধ একটি উষ্ণ আর্কিয়ান পৃথিবী গঠন করতে পারে। পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থা মহাসাগরের রাসায়নিক বিবর্তনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

তিনি আরো বলেছেন, লবণাক্ত মহাসাগরের কারণে জলবায়ু উষ্ণ হয় এবং বরফ হ্রাস পায়। উষ্ণতার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততাও দৃঢ়ভাবে সাগরের গতিশীলতার পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হয়। পৃথিবীতে যখন সূর্য কম উত্তাপ ছড়াত তখন লবণাক্ত মহাসাগরই প্রাথমিক পৃথিবীকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করেছিল। সে প্রভাব বর্তমানে কমলেও অতীত ইতিহাসে লবণ খুবই গুরত্বপূর্ণ ছিল।

ওলসন বলেছেন, আমাদের গবেষণার ফলাফর বলছে, পৃথিবীর শুরুর দিকে লবণাক্ত মহাসাগরই সূর্যের আলোর অভাব অনেকটা পূরণ করে দিত উষ্ণতার ক্ষেত্রে। সে হিসেবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, প্রাচীন পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করতে লবণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এমনকি লবণ অন্যান্য উষ্ণায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে একত্রিত হয়ে জলবায়ুতেও অবদান রেখেছিল যা বর্তমানের চেয়েও উষ্ণ ছিল।

সবশেষে ওলসন বলেন, গবেষণায় আমরা উল্লেখযোগ্য যে ফলাফল পেয়েছি তা হলো সমুদ্রের লবণাক্ততা পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/এসএটি)