পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলবে ২০২৩ সালের জুনে

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার। রবিবার থেকে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। তবে এই সেতুতে রেল চলাচলের জন্য অপেক্ষা করতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ এখন চলছে পুরোদমে। এই প্রকল্পের মোট গড় অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে রেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ঢাকা থেকে ভাঙা অংশ চালুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথ যাবে যশোরে। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৫৬ শতাংশ। এছাড়া মাওয়া-ভাঙ্গা ৭৮ দশমিক ৫ ও ভাঙ্গা থেকে যশোরের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন মাসে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে জানায়, এই প্রকল্পে রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২৩ কিলোমিটার হবে পুরোপুরি এলিভেটেড (উড়াল)। যশোর পর্যন্ত রেলপথের কোথাও থাকবে না কোনো লেভেল ক্রসিং। দেশে উড়াল ও লেভেল ক্রসিংবিহীন প্রথম রেলপথ হতে চলেছে এটি। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে চায়নার ঋণ ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ এবং সরকারি অর্থায়ন ১৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ওয়ে অ্যান্ড ওয়ার্ক) আবু ইউসুফ মোহাম্মদ শামীম বলেন, প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে। আমরা দুটি ভাগে বিভক্ত করে প্রকল্পটি উদ্বোধন করবো। ঢাকা থেকে ভাঙা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ ২০২৩ সালের জুন মাসে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এই অংশটুকু চালু করতে পারবো, কাজের অগ্রগতিও ভালো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। আশা করছি ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত এই মেয়াদে চালু করতে পারবো।’

প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। এই রেলপথে চলাচলের জন্য সংগ্রহ করা হবে ১০০টি ব্রডগেজ রেল কোচ। পদ্মা সেতু রেল সংযোগের উড়ালপথে কোনো পাথর থাকবে না। অত্যাধুনিক এই উড়াল রেলপথে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে ট্রেন।

কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত রুটে ২০টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১৪টি স্টেশনই হবে নতুন। পুরোনো ছয়টি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে। কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের নিমতলায় নতুন দুটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপর নির্মাণ করা হবে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ও মাওয়া স্টেশন। মাওয়া স্টেশনটি হবে তুলনামূলক বেশি নান্দনিক। প্রকল্প অনুযায়ী, দূর থেকে এটাকে দেখলে কোনো উন্নতমানের শপিংমল মনে হবে। এছাড়া রেলস্টেশনের স্টাফসহ অন্যদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ১০টি স্টেশনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত রেসিডেন্স বিল্ডিং বা আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হবে।

ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে থাকছে না কোনো লেভেল ক্রসিং। এতে একদিকে যেমন দুর্ঘটনা ঘটবে না, অন্যদিকে সড়কেও পড়বে না জটলা। ক্রসিং এড়াতে কোথাও কালভার্ট, আন্ডারপাস ও রেলওয়ে ওভারপাস নির্মিত হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুন/আরকেএইচ)