পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে

প্রকাশ | ২৫ জুন ২০২২, ১২:৪৬

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার স্বপ্ন নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তারই সুযোগ্য কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক নেতৃত্ব ও সাহসিকতায় পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে এক সময়ের অবহেলিত ঝালকাঠি তথা দক্ষিণাঞ্চলবাসী তাদের ভাগ্য উন্নয়নের আশায় বুক বেঁধেছেন।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে উন্মুক্ত হবে ঝালকাঠিসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ। সেই সঙ্গে খুলে যাবে সবকটি বাণিজ্যিক পথ। দক্ষিনাঞ্চলের বিনোদন কেন্দ্র ও পর্যটন কেন্দ্রগুলি মুখরিত হবে।

তেমনিভাবে ঝালকাঠির ব্যান্ড শীতলপাটি ও পেয়ারাসহ এবং আমড়া, লেবু, শুপারিসহ দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য খুব সহজেই দেশের চাহিদা পুরণ করে আমদানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। টাটকা শাক সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবে খুব সহজেই। পদ্মা সেতু হওয়ায় যোগাযোগের এক অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় এ অঞ্চলের অর্থনীতির অবদান রাখা পেয়ারা ও আমড়া বাগানেই নষ্ট হয় অর্ধেকের বেশি। ঝালকাঠির ভীমরুলী ও পার্শ্ববর্তী স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর-কুরিয়ানাসহ কয়েকটি ইউনিয়নজুড়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের বৃহৎ এই পেয়ারা ও আমড়া বাগানে থেকে পেরে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি খালে ভাসমান নৌকায় বাজার বসানো হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে কিনে ট্রলার ও ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যায়। সহজে পচনশীল হওয়ায় পেয়ারা ও এসব সবজি অনেকটা পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয় বাগান মালিকরা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় কম সময়ে সকল পণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাবে। এতে কৃষকরা সঠিক মুল্য পাবে বলে জানিয়েছেন তারা। পদ্মা সেতু হওয়ায় তারা অনেকটা ঈদের খুশি অনুভব করছেন।

অপর দিকে ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় বিষখালী নদী তীরে ছৈলার চরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পর্যটন কেন্দ্র ছৈলারচরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সকল পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। 

১৯৭৫ পরবর্তী সময়ের অবহেলিত ঝালকাঠিবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশসহ চিরঋণী হওয়ার কথা জানিয়েছেন ঝালকাঠির সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতারা।

ঝালকাঠির কৃতি সন্তান প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব-১ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব খাইরুল ইসলাম মান্নান বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে তাদের কাজ গুটিয়ে নিয়েছিল, তখন পদ্মা সেতু প্রকল্প অনিশ্চয়তার মেঘে ঢাকা পড়ে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে সেই মেঘ কেটে গেছে। আজ পদ্মা সেতু রঙিন কোনও স্বপ্ন নয়। বিশ্বের মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চ্যালেঞ্জের পদ্মা সেতু এখন একটি মাইলফলক।’ 

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ঝালকাঠির অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন হবে। ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের যাতায়াতে সময় অনেক কম লাগবে। ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রাখবে। পরিবহন খরচ হ্রাস পাবে। দ্রুত সময়ে গুরুতর রোগীদের নিয়ে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে। পদ্মা সেতুর কারণে ঝালকাঠিসহ এ অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও বিপ্লব ঘটবে। উদ্যোক্তারা এ জেলায় শিল্পকারখানা স্থাপনে আগ্রহী হবে। এতে জেলায় কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সহজে জেলার পেয়ারা ও আমড়াসহ কৃষিপণ্য ঢাকা চট্টগ্রামসহ অন্য জেলায় দ্রুত পরিবহনে কৃষকরা লাভবান হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে লোক সমাগম বৃদ্ধি পাবে। এতে জেলার মানুষের ভাগ্যের দুয়ার খুলে যাবে।

ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মো. শাফাউল করিম জানিয়েছেন, বিসিক মূলত সকল প্রকার শিল্পের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর ঝালকাঠি জেলায় এর প্রভাব পরবে। ফলে এখানে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। সৃষ্টি হবে নতুন কর্ম সংস্থানের। ইতোমধ্যেই আমাদের এ শিল্পনগরীর ৭৯ টি প্লটের মধ্যে ৭৫টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে শিল্পনগরীরর দ্রুত সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন হবে। 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির (নাসিব)  ঝাালকাঠি জেলা সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জামাল শরীফ বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় জৌলুস হারানো এক সময়ের দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাত ঝালকাঠি জেলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন ঘটবে। জেলায় বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে। পদ্মা সেতুর প্রভাব উদ্বোধনের পূর্বেই পরতে শুরু করেছে। ঝালকাঠি শিল্পনগরীর ৭৯ টি প্লটের ইতোমধ্যেই ৭৫টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সময় অনেক কম লাগায় দ্রব্য মূল্য ও পরিবহন খরচ কমে আসবে। এতে এ জেলার অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে

ঝালকাঠি জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে ঝালকাঠি পরিবহন জগতে যাত্রীদের সুবিধাসহ স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরাপদে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের নতুন দ্বার উম্মোচন হবে। এতে ঢাকা থেকে আরো অনেক নতুন বিলাসবহুল পরিবহন সরাসরি ঝালকাঠিতে চলাচলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে ঝালকাঠির পরিবহন জগতে যাত্রী সেবার মান আরো উন্নত হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার ঘটবে। অনেক বেকার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। বাস্তবেই রুপ নিয়েছে। এর ফলে ঝালকাঠি জেলার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য, স্বাস্থ্য সেবা, সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতের দ্রুত প্রসার ঘটবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/এসএ)