পদ্মা সেতু পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে আশীর্বাদ

খন্দকার আতাউর রহমান
 | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০২২, ১৮:১১

পদ্মা সেতু কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। যেকোনো অবকাঠামোর মূল লক্ষ্য থাকে দেশ কীভাবে এ থেকে উপকৃত হবে। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগে বড় একটা ব্যবধান ছিল। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এটি পূরণ হচ্ছে। বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা অঞ্চল অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ একটি জনপদ। এই জনপদের সঙ্গে যখন রাজধানীর যোগাযোগ শুরু হয়ে যাবে, তখন এর সুফল সারা দেশের মানুষই পাবে।

পটুয়াখালী অঞ্চলের কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের কথাই বলা যাক। পর্যটনে এখনো সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না এটি। শুধু যোগযোগের সমস্যার কারণে। বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় যেতে অনেকগুলো নদীতে ফেরি পার হতে হতো। এখন সেসব জায়গায় সেতু হয়ে গেছে। বাকি ছিল কেবল পদ্মা সেতু। এটিও হয়ে গেল। সেখানকার মানুষের ভাষায়, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে ৩-৪ ঘণ্টায় কুয়াকাটায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। অর্থাৎ কক্সবাজার থেকেও কম সময়ে কুয়াকাটায় যাওয়া যাবে। তার মানে ওই অঞ্চলের পর্যটন কতটা উন্নত হবে, কল্পনা করলেই বোঝা যায়।

আরেকটি দিক হলো কৃষিখাত। একসময় বলা হতো, ধান-নদী-খাল, এই তিনে বরিশাল। ফরিদপুর, মাগুরা, যশোর- এই অঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। এই অবদান আরও জোরালো হবে পদ্মা সেতুর কল্যাণে। ফলে জিডিপিতে সরাসরি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এটি পদ্মা সেতুর যুগান্তকারী ঘটনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও স্পষ্ট বলেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব কেবল দক্ষিণাঞ্চলে হওয়া উচিত না। সারা দেশেই যেন এই উৎসব হয়। কারণ এটি সারা দেশের মানুষের জন্য বড় প্রাপ্তি।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কথা যদি বলি, পল্লী উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে এই ব্যাংকটি বিশেষভাবে কাজ করছে। গ্রামের মানুষদের নিয়েই আমাদের কাজ। তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের শাখা আছে। বিশেষ করে প্রতিটি উপজেলায় আমাদের শাখা রয়েছে। ৪৯০টি উপজেলা, শাখাও ৪৯০টি। উপজেলার বাইরে কোথাও শাখা নেই। তবে তার কাজের ক্ষেত্র হচ্ছে ইউনিয়নগুলোতে। তার মানে সারা বাংলাদেশে যতগুলো ইউনিয়ন আছে সব ইউনিয়নে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। এটি কেবল এই ব্যাংকেরই রয়েছে। অন্য কোনো ব্যাংকের এ ধরনের কার্যক্রম নেই। সম্ভবও নয়।

আমাদের কৃষি উৎপাদন, গ্রামের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ছোট ছোট আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প যারা চালাচ্ছেন, তাদের উৎপাদিত পণ্য বা দ্রব্যসামগ্রীর ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য মার্কেটিং বড় একটি ফ্যাক্টর। পদ্মা সেতু এ দিক থেকে আমাদের কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে। যেসব এলাকার মানুষ গ্রামীণ পর্যায়ে ছোট বা মাঝারি উদ্যোগের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করছে, তারা পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সরাসরি ঢাকা ও অন্যান্য এলাকায় অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবে। এতে তাদের বাজারজাতকরণ সহজ হবে। পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে। এটি কেবল পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সুবিধাভোগীরাই নয়, সবার জন্য সুফল বয়ে আনবে। এটি সবার জন্যই আশীর্বাদ।

ঢাকার ওপর জনসংখ্যার চাপ কমিয়ে আনতেও সহায়ক হবে পদ্মা সেতু। অনেক চাকরিজীবী, যাদের বাড়ি শরীয়তপুর, মাদারীপুর অঞ্চলে, তাদের অনেকেই এখন বলছেন, সেতু চালু হলে তারা নিজ গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে অফিস করতে পারবেন। এখন যেমন নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের অনেকে বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে অফিস করেন। সেদিক থেকে ঢাকার জনসংখ্যাও কমে আসবে। সামগ্রিকভাবে পদ্মা সেতু কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, জিডিপিতে সরাসরি ভূমিকা রাখার পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়নের দুয়ারও খুলবে। যেকোনো শিল্পের জন্য প্রধানত অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উন্নয়ন যোগাযোগ ব্যবস্থা। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বা জ্বালানি শক্তি। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বড় ধরনের উন্নয়ন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। আগে ফেরি পার হয়ে অনেক সময় লাগতো আসতে। ধরা যাক কেউ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান করল, তাদের সময়ের অনেক বিষয় থাকে। জাহাজিকরণের বিষয় থাকে। চাইলেই পদ্মার ওপারে শিল্প গড়া সম্ভব ছিল না। এখন সেটি অনায়াসে করা যাবে। চোখের পলকে নদী পার হয়ে চলে আসবে। ঢাকা আর পদ্মার ওপারের জনপদের মধ্যে কোনো তফাত থাকবে না।

এ ছাড়া ঢাকা শহর বা এর আশপাশে যেসব শিল্প, কল-কারখানা আছে, সেগুলো পদ্মার ওপারে আরও বিস্তর জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কেউ যদি জায়গার অভাবে উদ্যোগ বড় করতে না পারেন, তাদের জন্য এটি বড় সুযোগ তৈরি করছে। এতে ঢাকার পরিবেশ আরও উন্নত হবে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় শিল্পায়ন হবে, সেসব এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানসহ জীবনমানেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। যারা স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের অভাবে ঢাকায় চলে আসত, তাদের আর ঢাকায় আসতে হবে না। সামগ্রিকভাবে ওই এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :