দেশে শিক্ষামূলক কন্টেন্ট তৈরিতে উদীয়মান চার তরুণ

আব্দুল্লাহ আল নোমান
| আপডেট : ২৬ জুন ২০২২, ১২:৪০ | প্রকাশিত : ২৫ জুন ২০২২, ১৯:৪৮

তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে জ্ঞান অর্জন এখনো আরো সহজ। স্মার্টফোন নামক আলাদিনের চেরাগে ইন্টারনেট নামক জিনিসটার সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যেকোনে বিষয়ের জ্ঞান চলে আসে এখন আমাদের হাতরে মুঠোয়। কিন্তু এই শিক্ষামূলক বা জ্ঞানমূলক কনন্টেন্ট কিন্তু এমনি এমনি আসে না। কেউ না কেউ দিনরাত পরিশ্রম করে নথিপত্র ঘেটে গবেষণা করে সেগুলো তৈরি করছে।

বাংলাদেশেরও রয়েছে এমন কয়েকজন কনন্টেন্ট ক্রিয়েটর যারা প্রতিনিয়তই অজানা সব জিনিসের জ্ঞানমূলক ব্যাখ্যা নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেগুলোকে ভিডিও, অ্যানিমেশন এবং লেখা আকারে ইউটিউব, ফেসবুকসহ নানান মাধ্যমে প্রচার করে যাচ্ছে। তেমনি কয়েকজন তরুণ এবং উদীয়মান কনন্টেন্ট নির্মাতাদের সম্পর্কে জানা যাক।

লাবিদ রাহাত

মানচিত্র-অ্যানিমেশনের মাধ্যমে কন্টেন্ট বানানো লাবিদ রাহাতের নেশা। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং (যন্ত্রকৌশল) নিয়ে শেষ বর্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি কন্টেন্ট নির্মাণ করছেন। বিশ্বমানের কন্টেন্টের অভাববোধ থেকে অ্যানিমেশন ব্যবহার করে ২০২১ সালের প্রথম দিকে কন্টেন্ট বানানো শুরু করেন।

মহামারি কোভিডের সময়টাতে অনলাইন ক্লাস বাদে বাকি সময়টাকে তিনি নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ হিসেবে বেছে নেন। ভিডিও এডিটিং আর ম্যাপ অ্যানিমেশন ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়েই যাত্র শুরু করেন কনন্টেন্ট তৈরির। মানচিত্র ও অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক যুদ্ধের পরিকল্পনা, ইতিহাস এবং ভূগোল বিষয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভিডিও বানিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে আরো নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে তার।

লাবিদ রাহাত সাধারণত প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার রাত ৮টায় ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করেন। নতুনদের কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে আসার ক্ষেত্রে উন্নত জীবনযাপন করার চেয়ে ভালো কন্টেন্ট ডেলিভারী দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

উদাহরণ হিসেবে বাংলাদশের এনায়েত চৌধুরীর একেবারে প্রথম দিকের ভিডিও দেখলে বুঝতে পারবেন। বেশিরভাগ কন্টেন্ট ক্রিয়েটরই ছাত্রজীবনে যখন ইনকাম করার চাপ কম অথবা অন্য কোনো আয়ের উৎস আছে তখন কন্টেন্ট ক্রিয়েশন শুরু করেছে। যেহেতু কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের স্ক্রিপ্ট লেখা, ভিডিও এডিটিং এগুলোর সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয় তাই সহজেই এসব দক্ষতা ফ্রিল্যান্সিং কিংবা কোনো এজেন্সির জন্য কাজে লাগাতে পারে।

যদিও টাকার চেয়ে শেখাটাই লাবিদ রাহাতের মূল উদ্দেশ্য ছিল। নিজের পছন্দের টপিকে নিজের মতো করে ভিডিও বানাতে ভালো লাগে তার। নিজে ভিডিও না বানালে অন্য কেউ হয়তো ঠিক এভাবে বানাবে না। এটাই তার সবথেকে বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ফেসবুকে লাবিদ রাহাতের বর্তমানে ২২ হাজার ফলোয়ার এবং ইউটিউবে ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।

আসাদুজ্জামান জয়

দশ কোটি মানুষের লাইফে ভ্যালু অ্যাড করার লক্ষ্য বই বিষয়ক কন্টেন্ট নির্মাতা আসাদুজ্জামান জয়ের। বই নিয়ে ভিডিও বানাতে গিয়ে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের যাত্রা শুরু করেন আসাদুজ্জামান জয়। নিজের বইয়ের ব্যবসায় সাহায্য করবে, নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ আছে তাছাড়া অনেক বই পড়া হবে, এমন চিন্তা থেকেই কন্টেন্ট বানানো শুরু করেন। আগে থেকে বই পড়ার অভ্যাস তার স্টোরিটেলিংয়ে কাজে দিয়েছে। কন্টেন্ট বানানোর পাশাপাশি ব্যবসা করার ইচ্ছা আছে তার।

এছাড়াও কন্টেন্ট তৈরি ব্যবসার কাজ অনেকটা এগিয়ে দেয়। ছাত্র জীবনে কোনোকিছুতে মনোযোগ ধরে রাখাটা কঠিন। তবে জয় চেষ্টা করছেন সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য রাখার। যদিও মাঝেমধ্যে শিডিউল ম্যানেজ করতে সমস্যা হয়, কিন্তু ভিডিও বানানো বেশ উপভোগ করেন তিনি। সবসময় সামনের অর্ধবছর কি কাজ করবেন সে পরিকল্পনা আগে থেকেই করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।

প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানতে ভালোবাসেন। ৬৪ জেলা ঘুরে ঘুরে মানুষের গল্প তুলে ধরার ইচ্ছা তার। নতুনদের জন্য তার পরামর্শ- ‘কিছুটা ভালো পারেন বা জানাশোনা ও আগ্রহ আছে, যে বিষয়ে ভ্যালু অ্যাড করতে পারবে এমন কিছু দিয়ে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন শুরু করা উচিত।’ কন্টেন্ট বানিয়ে দশ কোটি মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি নিজেও। যেহেতু মোটামুটি সবার হাতে স্মার্টফোন আছে, ধারণা করা হচ্ছে আরো ৫/১০ কোটি মানুষ অনলাইনে যুক্ত হবে। যার ফলে এটা সহজ হবে। ফেসবুকে বর্তমানে প্রায় ৮৭ হাজার ফলোয়ার এবং ইউটিউবে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।

ইমতিয়াজ অর্নব

বিজ্ঞানভিত্তিক কন্টেন্ট নির্মাতা ইমতিয়াজ অর্নব। ২০১৬ সালে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে অনিয়মিত ভিডিও আপলোড করলেও ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নিয়মিত কাজ শুরু করেন অর্নব। ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রনিক্স শেষ করার পরে নিজের ভালো লাগা থেকেই কন্টেন্ট বানানো শুরু করেছিলেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরেক কন্টেন্ট নির্মাতা এনায়েত চৌধুরী তার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

ভালো সাড়া না পাওয়ায় ৭-৮ মাস বিরতি দিয়ে অনুসন্ধান করে আবার কন্টেন্ট বানানো শুরু করেন। স্টোরিটেলিং করা পছন্দ করেন তাই তিনি ফেসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেলের নাম হিসেবে ‘স্টোরিহেড’ বেছে নিয়েছেন। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষণীয় কন্টেন্ট মেইক করলেও সামনে দাবা নিয়ে কন্টেন্ট বানানোর ইচ্ছে আছে তার।

কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হওয়ায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ফেসবুকের কমেন্ট সেকশান নিয়ে তার সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা। তার মতে কন্টেন্ট বানানোর ভালো দিক হলো—আইডিয়া কার্যকর করার মাধ্যমে মানুষকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করা যায়। তার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে কন্টেন্ট মেকিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করা। সিনেমার মতো বিজ্ঞান শেখাকে আনন্দদায়ক করা। ফেসবুকে ইমতিয়াজ অর্নবের বর্তমানে ৮৫ হাজারের বেশি ফলোয়ার এবং ইউটিউবে প্রায় ৩৬ হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।

সিনজয় সাহা

করোনার সময়ে অবসরকে কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করতে হবে এবং শিখতে হবে এমন উদ্দ্যেশ্য নিয়ে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে আসেন সিনজয় সাহা। ইউটিউবের সাহায্য নিয়ে ২০২১ সালের আগস্টে ফুটবল রিলেটেড কন্টেন্ট বানানো শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে এভারগ্রীণ ইনফোটেইনমেন্ট (নরমাল ইনফরমেশনকে এন্টারটেইনমেন্টের মাধ্যমে তুলে ধরা) কন্টেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন।

বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন। স্টোরিটেলিং এর জন্য অন্তিক মাহমুদ তার পছন্দের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। স্কুল-কলেজে এমনকি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সফলতার সহিত সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত আছেন তিনি। কন্টেন্ট ক্রিয়েশনকে আয়ের উৎস হিসেবে নয় বরং শখ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে এখান থেকে আয় হচ্ছে যেটা তার জন্য ইতিবাচক। তিনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনকে এখনই ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়াটা বোকামি মনে করেন। তাই অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পার্টটাইম কন্টেন্ট তৈরি করে যাচ্ছেন।

দ্রুত উন্নতির ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিত্ব, উপস্থাপনা, গবেষণার অভিজ্ঞতা তাকে সাহায্য করেছে। তাছাড়া দর্শকের গঠনমূলক সমালোচনা তাকে কন্টেন্ট প্রতিনিয়ত ভালো করতে সহায়তা করছে। নিজের সঙ্গে নিজেকে প্রতিনিয়ত তুলনা করে সামনে এগোতে চেষ্টা করেন সবসময়।

তবে তিনি কন্টেন্ট বানানো বেশ উপভোগ করেন তাছাড়া অনেক নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। ফেসবুকে সিনজয় সাহার বর্তমানে ৫৩ হাজার ফলোয়ার এবং ইউটিউবে প্রায় ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৫জুন/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :