পদ্মা সেতু: শেখ হাসিনার সততা, আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতার অনন্য বিজয়গাথা

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২২, ০৮:৪৯

শ ম রেজাউল করিম

পদ্মা সেতু। বাংলাদেশ নামক ছোট্ট ব-দ্বীপ রাষ্ট্রের দূরদর্শী এক রাষ্ট্রনায়কের অসীম সাহসিকতা ও পর্বতসম আত্মবিশ্বাসের অবিশ্বাস্য এক রূপকথা। এই রাষ্ট্রনায়ক আর কেউ নন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যিনি দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের ব্যূহ ভেদ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের সক্ষমতা আরও একবার চিনিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। তাই পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের অনন্য গৌরব, মর্যাদা আর অহংকারের প্রতীক। দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণের অনবদ্য উপাখ্যান। মাথা না নোয়ানো বাংলাদেশের দিকে অবাক বিস্ময়ে বিশ্ববাসীর তাকিয়ে থাকার প্রোজ্জ্বল উপলক্ষ। এ সেতুর প্রতিটি পরতে পরতে বিম্বিত জাতির পিতার উত্তরসূরি শেখ হাসিনার প্রত্যয় আর দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিষ্কার বক্তব্য, ‘দেশ স্বাধীন করেছি, পদ্মা সেতুর ব্যাপারে মাথা নত করবো না’ (পদ্মা সেতু, সম্পাদনা: মাহবুব রেজা)।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেনই বা এতটা সুতীব্র আকাক্সক্ষা আর সবটুকু প্রত্যয় নিয়ে এ সেতু নির্মাণ করলেন এ দেশের আপামর জনসাধারণের স্বপ্নসারথী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? এর উত্তর খোঁজা মোটেই কঠিন নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা যে এ দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ আর ভালোবাসায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা ধ্রুপদী এক সঙ্গী। তিনি জানেন কীভাবে এ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে, কীভাবে এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। তিনি জানেন কীভাবে একটি অঞ্চলকে গুরুত্বপূর্ণ জনপদে রূপান্তর করতে হবে। কীভাবে একটি জাতিকে আত্মমর্যাদায় শীর্ষে পৌঁছে দেওয়া যাবে। পদ্মা সেতুর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ব্যাপক। একটি দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নে অঞ্চলগুলোর জন্য একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অনস্বীকার্য। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে দেওয়া ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ (মূল সেতু) (দুই প্রান্তের উড়ালপথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার) এ সেতু পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ফরিদপুর জেলাসমূহের উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশের দক্ষিণে বসবাসরত জনজীবনের জীবনমান উন্নয়নসহ স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও বাজার সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত কাঁচামাল দ্রুততার সাথে সরবরাহের সুযোগ তৈরি ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এ সেতু। সেতুটির কারণে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা চট্টগ্রাম বন্দরের ন্যায় যথাযথভাবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আরেকটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পদ্মা সেতু ও সংযোগ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে রুট এএইচ-১ (অঐ-১) এর অংশ হওয়ায় তা যথাযথ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হবে। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে এবং যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। এ সেতু দেশের ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এছাড়া দেশের সার্বিক জিডিপির পাশাপাশি পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটির কাজ সমাপ্ত হলে অতিরিক্ত ১.২৩% জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। সেতুটি যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত হলেই দেশের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সরাসরি সারা দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে। ঢাকা থেকে খুলনা, মোংলা, বরিশাল, কুয়াকাটা অর্থনৈতিক করিডোর খুলে যাবে। এ সেতুকে কেন্দ্র করে বিশদ অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। সেতু ঘিরে পদ্মার দু পারে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

২৫ জুন সকাল ১০টায় বহু আকাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নির্মাণের এ বিরাট অর্জনকে মানুষ যাতে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে সেজন্য বিভিন্ন মহলের জোরালো দাবি থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের নামে এর নামকরণ করেননি। উদ্বোধনের খবরে পদ্মার দু পারের মানুষের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে। এ আনন্দ বিজয়ের, এই আনন্দ অসাধারণ এক প্রাপ্তির। উদ্বোধনের অপেক্ষার প্রহর যেন সইছে না। এটি প্রমাণ করে এ সেতু কতটা কাক্সিক্ষত পদ্মার উভয় পারের মানুষের জন্য। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবর শুনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাওয়ার কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা আরিফুর রহমান খুশিতে আত্মহারা হয়ে জানান, বাপ-দাদার ভিটেমাটি পদ্মা সেতুতে দিয়ে আমরা এখন গর্ববোধ করছি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের খবরে মাওয়া ঘাটে খুলনাগামী রোমানা বেগম ও সুজানা আক্তার নামে দুই নারী জানান, প্রতিনিয়ত শিমুলিয়া ও বাংলাবাজার ঘাটে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে আমাদের ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সময় কমে আসবে, এতে আমরা দিনে দিনে ঢাকায় জরুরি কাজ শেষে আবার বাড়িতে ফিরে আসতে পারব। মাদারীপুরের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া জানান, দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খবরে আমাদের জেলাজুড়ে আনন্দের জোয়ার বইছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। (দৈনিক যুগান্তর, ২৬ মে ২০২২)।

অথচ স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। একদিকে প্রমত্তা পদ্মার বুকে সেতু নির্মাণের জটিল প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ, অপরদিকে দেশের একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র, বিশ্বব্যাংকের তথ্য-উপাত্তবিহীন ও অনুমাননির্ভর ভ্রান্ত অভিযোগ ও তার ফলশ্রুতিতে অর্থায়নের অনিশ্চয়তা পদ্মা সেতু নির্মাণের পদক্ষেপে জগদ্দল পাথরের ন্যায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। খরস্রোতা পদ্মার বুকে প্রায় ৪০ তলার সমান পাইলিং, দেশের একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ষড়যন্ত্র, অর্থায়নে সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের কল্পনানির্ভর দুর্নীতির অভিযোগ ও ক্রমাগত অনাকাক্সিক্ষত চাপ এ সেতু নির্মাণকে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত করেছিল।  এর কিছুটা অনুমান করা যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইনটেগ্রিটি অ্যাডভাইজার মসিউর রহমানের লেখা থেকে। তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার সাথে একটি উন্নত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়। জাপান সরকার সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রাথমিক পর্যায়ে অক্ষমতা জানিয়েছিল; পূর্বের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তার সহযোগী হিসাবে জাপান সরকারের সাথে যোগ দেয়। ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক প্রকল্পের নির্দিষ্ট প্যাকেজে পৃথকভাবে অর্থসংস্থানের পদক্ষেপ নেয়। চুক্তি বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির সন্দেহে প্রকল্প সহযোগিতা স্থগিত রাখে এবং অন্য সহযোগীদের অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে রাজি করে। পদ্মা সেতুর সাথে সম্পৃক্ত মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক অতিমাত্রায় আগ্রহী হয়। তারা আভাস দেন যে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের শাস্তি দিলে সহযোগিতা কার্যকর হবে। দুর্নীতির প্রতি জিরো টলারেন্স বাংলাদেশ সরকারের নীতি। বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি রোধ প্রচেষ্টায় সরকার সর্বপ্রকার সহযোগিতা করে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বিশ্বব্যাংকের অভিযোগগুলো অনুসন্ধান করে কোনো সত্যতা পায়নি। কানাডার সুপিরিয়র আদালতও শুনানির পর গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে মোকদ্দমা খারিজ করে দেয় (পদ্মা সেতু: সততা ও আত্মবিশ্বাসের বিজয়, মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া)। 

১৯৯৯ সালে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষের দিকে ৪ জুলাই ২০০১ তারিখে মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অসাড় ও কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ আর চূড়ান্ত অহযোগিতার সমুচিত জবাব দেন এদেশের মানুষের অবিচল আস্থার প্রতীক, আশা-আকাক্সক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের ভ্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগের জবাবে বাংলাদেশ বলে দেয়, এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কোনো অর্থ ছাড় হয়নি। অন্য কেউ অর্থ দেয়নি। দুর্নীতি হবে কীভাবে? তখন বিশ্বব্যাংক বলেছিল দুর্নীতির গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে। তারা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ না করেই ২০১২ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশের সাথে চুক্তি বাতিল করে দেয়। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফেরার জন্য বিশ্বব্যাংককে ২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রত্যাখ্যান করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০১২ সালের জুলাইয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি মূল সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন এদেশের মানুষের প্রতি। তাঁর চ্যালেঞ্জ আর ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তার বিজয় হয়। বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অহমিকার পরাজয় ঘটে। পরে বিশ্বব্যাংক স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, পদ্মা সেতু নির্মাণে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে তারা ভুল করেছিল। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কৌশিক বসু ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের যে ইতিহাস তাতে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে যথেষ্ট তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থে কাজ করেছে। ১০ বছর আগেও কেউ ভাবতে পারেনি বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে এত বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে। বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরতা ছাড়াই তারা এটা করতে পারছে।’ ২০১৭ সালে কানাডার আদালত পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি মামলায় বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্যকে অনুমানভিত্তিক, গালগল্প এবং গুজবের বেশি কিছু নয় বলে রায় দেয়। বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়।

পদ্মা সেতু নিতান্তই একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু নয়। বিশ্বের সেরা প্রকৌশল বিদ্যা আর প্রযুক্তিতে নির্মিত দ্বিস্তরের এ দৃষ্টিনন্দন সেতুটি একটি দেশের জনগণের হৃদয়মথিত আবেগের নাম। স্বপ্ন পূরণে একটি বিশ্বাস ও আস্থার সার্থক রূপায়ণের নাম। এ সেতুতে জ্বলে ওঠা আলো এদেশের কোটি মানুষের হৃদয় থেকে উৎসারিত আলো। চোখে-মুখে অপার্থিব আনন্দের বন্যা। গোটা জাতি প্রস্তুত হচ্ছে এ ইতিহাসের সাক্ষী হতে, এক অনন্য গৌরবের অংশীদার হতে। পদ্মা সেতু নামক এ উপাখ্যানের রচয়িতা জাতির পিতার আদর্শের কাণ্ডারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর মতো একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের সততা, দেশপ্রেম, দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার সাক্ষী হয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে যুগ থেকে যুগান্তরে দাঁড়িয়ে থাকবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। 

লেখক: মাননীয় মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়