গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২২, ১৫:১৫ | আপডেট: ২৬ জুন ২০২২, ২০:০৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গাজীপুর সিটি করপোরশেনের পদ হারানো মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন রবিবার সাংবাদিকদের কাছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদকের উপপরিচালক নারগিস সুলতানাকে প্রধান করে দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠনের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাহবুব হোসেন বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও ব্যাংকে অস্বাভাবিক অর্থ লেনদেনের অভিযোগ আসে। দুদকের যাচাই বাছাইয়ের পর কমিশন তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ পুনরায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।

অভিযোগটি অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, আমাদের যেকোনো অভিযোগ ১০৬ বা লিখিতভাবে আসে। প্রাথমিক যাচাই বাছাই হয়। যাচাই বাছাইয়ের পর যদি মনে করা হয় ক্রাইম অফেন্স আছে তখন মামলা করা হয়। অনুসন্ধান শুরু হলে তা পরবর্তীতে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেও জানান দুদক সচিব।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতসহ ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।

এছাড়া গত ২০২১ সালে ২৫ নভেম্বর সরকারি কাজে বিভিন্ন অনিয়ম ‍ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে মেয়র জাহাঙ্গীরকে বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দেওয়া প্রজ্ঞাপনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়া, দরপত্রে অনিয়ম, ভুয়া বিল–ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন।

দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে গাজীপুরে বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা হয় ঢাকাটাইমসের। তিনি বলেন, আমি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম আমার অনিয়মের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে। তারা (দুদক) যেন সত্য অনুসন্ধান করে। সত্য অনুসন্ধান করলে কেউ হয়রানির শিকার হবে না। সরকার অনিয়মের বিরুদ্ধে, অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরাও।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি জনপ্রতিনিধি ছিলাম, জনগণের সব কিছু আমাদের কাছে আমানত ছিল। আমি আমার জায়গা থেকে সঠিক কাজটাই করেছি। তবে সত্যটা কী সেটা জনগণেরও জানার অধিকার আছে। আমি বলবো অনুসন্ধান যেহেতু শুরু হয়েছে, যারা দুদককে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে তাদেরও যেন আইনের আওতায় আনা হয়।

জাহাঙ্গীর বলেন, অনুসন্ধানতো করতেই পারে। অনুসন্ধান করলে মানুষ সত্যটা জানতে পারবে। যারা ষড়যন্ত্র করে তারা মানুষের নামে উড়ো চিঠি দিয়ে এসব করে। দুদক যদি সঠিক অনুসন্ধান করে, তবে আমাকে যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলো তারা সঠিকটা জানতে পারবে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ওই অডিওতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা মেয়র জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। সেসময় গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের কয়েক দফা সংঘর্ষও ঘটে।

ওই বছরের ৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়। তিনি জবাবও দেন। ভাইরাল হওয়া অডিওটি ‘সুপার এডিট’ করা বলে বারবার দাবি করেন জাহাঙ্গীর। পরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৬জুন/কেএম)