বিশ্ব দেখলো আমরাও পারি

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২২, ১৮:৪৬

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নির্মিত হলো দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। জটিল-কঠিন ধাপ পেরিয়ে দীর্ঘ সময়ের এই নির্মাণ যাত্রার পুরোটা জুড়ে ছিল সাধারণ মানুষের আশা, আকাঙ্ক্ষা, ব্যাকুলতা ও সংশ্রয়।

২৫ জুন দু-হাজার বাইশের শনিবারের সকালটা ছিল অন্যরকম। দিনটি প্রতিদিনের মতো মনে হলেও এই দিনটি একটি সাফল্যের বার্তা নিয়ে আসে। যে সাফল্যের সঙ্গে আমাদের আত্মসম্মান, আত্নমর্যাদা ও আমাদের পেরে ওঠার গল্প জড়িত। যে কারণে সকালটি ছিল অন্য রকমের। এমন একটি ভোরের অপেক্ষায় ছিল দক্ষিণাঞ্চলবাসী'সহ গোটা দেশ। সব শেষে এখন শুধুই বাস্তব সম্ভাবনা ও উৎসব।

সব প্রতীক্ষার অবসান ঘুচিয়ে স্বপ্ন ছুঁয়েছে পদ্মার বুক চিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সেতু। জমকালো আয়োজনে উদ্বোধনও করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবমিলিয়ে বহু বাধা পেরিয়ে শনিবার (২৫ জুন) বিশ্বের ইতিহাসে অদম্য জয়ের নতুন এক গল্প লিখেছে বাংলাদেশ। আজ মোদের বড়ই খুশির দিন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার খুলেছে। আনন্দে ভাসছে দেশের মানুষ। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল মানুষদের জন্য এ যেন ঈদের আগে ঈদ। স্বপ্ন আজ সত্যি। এই সেতুর আনন্দ ভুলিয়ে দিয়েছে শত মাইল পেরিয়ে যাওয়া সব কষ্ট। সবার মনে এই একটিই চাওয়াই ছিল। চোখের সামনে এখন পদ্মা সেতু তাতে এখন চলছে গাড়ি। দক্ষিণবঙ্গের সোনালী অধ্যায়ের সূচনা হলো; বিশ্ব দেখলো আমরাও পারি।

বর্ষাকালে খরস্রোতা নদী পার হতে গিয়ে আর কারও সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বোনকে হারাতে হবে না। নির্বিঘ্নে চলতে পারবে সবাই। আর সহ্য করতে হবে না স্পীড বোট চালকদের পশুর মতো ব্যবহার। এই সেতুর ফলে উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে জীবন ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পরাপারের প্রবণতা কমে আসবে। সেই সঙ্গে দূর হবে লঞ্চডুবির মতো বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা।

আমার মতো যাদের বাড়ি পদ্মার ওপারে তাদের সকলেরই বাড়িতে যাওয়ার আগে চিন্তা করতে হতো কখন ফেরিঘাট খালি থাকবে? ফেরি ঘাটে জ্যাম কেমন? আবহাওয়া ভালো কিনা? ফেরি চলবে কিনা? মায়ের পথ চেয়ে থাকা। এ রকম অনেক চিন্তাই করতে হতো। গত বছর রোজার ঈদে মাঝ রাতে ভীড়ের মধ্যে ফেরিতে ওঠার সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি অল্পের জন্য। সে বার কি যে, কষ্ট করে বাড়ি ফিরেছিলাম তা দু-চারটি শব্দে বর্ণনা করা যাবে না।

রাত ১২ টায় ফেরি ঘাটে পৌছে পরের দিন সকাল ১০টায় ফেরি পার না হলে এই ব্রিজের মর্ম আপনি বুঝবেন না। কিংবা অ্যাম্বুলেন্সে আপনার প্রিয় মানুষটি শেষ নিঃশ্বাসের অপেক্ষায় আছে অথচ কুয়াশার কারণে ফেরি বন্ধ এই পরিস্থিতিতে না পড়লেও আপনি এই ব্রিজের মর্ম বুঝবেন না। এটা শুধু রড, কনক্রিটের স্থাপনা না। এটা তার চেয়েও অনেক বড় কিছু। তবে সব চিন্তার অবসান ঘটলো। সব কষ্ট দূর করে দিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

ইচ্ছে ছিল শনিবারের সকালটি সবার মতো আমারও উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হওয়ার। তবে অসুস্থতা কাবু করে দিয়েছে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেটি সম্ভব হলো না। তবে ঠিকই ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছি অন্তর্জালে থেকে। এই অনুভূতি বোঝানো যাবে না।

শুধু এটুকুই বলব- বর্ণিল উৎসব আর বাতাসে রঙিন আবীর ছিটানোসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দেশের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা। এই সেতুর হওয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনেছি আমি, আমরা। এবার সেই স্বপ্ন পূরণের পালা।

আসছে ঈদে বাড়ি যাওয়ার মধ্যে দিয়ে প্রথমবার সেতুতে উঠবো। এখন শুধুই স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার অপেক্ষা। সেই সঙ্গে ভাষাহীন অনুভূতি। পদ্মা সেতুর ফলে কম সময়ে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্র। রাতের ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে আলো ঝলমলে পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলবাসীর চোখে বইয়ে দেয় আনন্দ অশ্রু।

আমরা স্বপ্ন দেখি আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। এই সমৃদ্ধির মেরুদণ্ড হিসেবে পদ্মার ওপর দিয়ে গড়ে উঠেছে সেতু। এই সেতু এখন গোটা বাংলাদেশের অহংকার। ‘আমার টাকায় আমার সেতু, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু’। আমাদের স্বনির্ভরতা, সাহস, দৃঢ়তা, সক্ষমতা, আত্মবিশ্বাসের প্রতীক পদ্মা সেতু।

আমাদের পদ্মা সেতু, আমাদের অহংকার...

 লেখক: সাংবাদিক