২৪ লাখ মানুষকে কলেরার টিকা খাওয়াচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২২, ২২:১৬

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আগে যেসব এলাকায় কলেরা রোগের টিকা দেওয়া হয়েছিল, ওইসব এলাকায় ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক। রবিবার রাজধানীতে আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালকের পক্ষে  স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মু. শফিকুল ইসলাম। স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক তাঁর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইসিডিডিআর,বি-সহ সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে দ্রুততার সঙ্গে এই টিকাদান কর্মসূচি নেওয়ার প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, " আগে যেসব এলাকায় কলেরার টিকা দেয়া হয়েছিল সেসব এলাকায় আমরা খুব ভালো ফল পেয়েছি। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে মানুষের জীবন রক্ষার একটা কার্যক্রম শুরু করতে পারছি। আমি আহ্বান জানাবো সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা যেন এই কার্যক্রমে অংশ নেন এবং এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকেন।"

ঢাকার পাঁচটি এলাকায় প্রায় ২৪ লাখ বাসিন্দাকে ২৬ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত মুখে খাওয়ার কলেরার টিকা দেয়ার কর্মসূচি  নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রবিবার আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সাধারণত বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে মে এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর, বছরে এই দুই বার তীব্র ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ বছর ঢাকায় মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক গুণ বেশি ছিল। আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগীর বসবাস ঢাকার যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, সবুজবাগ, মোহাম্মদপুর এবং মিরপুর এলাকায়। এ সময়ে, কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) শাখার অধীন ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নানাবিধ উদ্যোগ নেয়।  এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খুব দ্রুততার সাথে ইন্টারসেক্টোরাল কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের  (আইসিজি) কাছে ‘প্রতিক্রিয়া-ভিত্তিক (রিঅ্যাক্টিভ) কলেরা টিকাদান কর্মসূচির’ জন্য টিকার সংস্থান করতে আহ্বান জানায়।

আইসিজি প্রায় ৪৭ লাখ ৫০ হাজার মুখে খাওয়ার কলেরা টিকা দিতে রাজি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহায়তায় আইসিডিডিআরবি ২৬ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত কলেরার টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করবে। এই কর্মসূচিতে আরও সহায়তা করছে জাতীয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও এমএসএফ। দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স, গ্যাভি-র আর্থিক সহায়তায় এই টিকাদান উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে।  

কমপক্ষে ১৪ দিন অন্তর প্রদেয় দুই ডোজের দক্ষিণ কোরিয়ার ইউবায়োলোজিক্স কো. লিমিটেডের তৈরি ইউভিকল প্লাস নামের কলেরার টিকা এক বছর থেকে তদূর্ধ্ব বয়সীদেরকে দেওয়া হবে। এই টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। গর্ভবতী মহিলা এবং যারা বিগত ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোনো টিকা নিয়েছে । তারা ছাড়া সকলেই এই টিকা নিতে পারবেন। এই টিকা নেয়ার ১৪ দিনের মধ্যে অন্য কোনো টিকা নেয়া যাবে না।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার (তিনি অনলাইনে যুক্ত ছিলেন), অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, এবং ড. তাহমিদ আহমেদ। ড. ফেরদৌসী কাদরী টিকাদান কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম, যেমন নিরাপদ পানির ব্যবহার, নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। 

২৬ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত প্রথম ডোজ কলেরা টিকাদান কর্মসূচি চলবে। যাত্রাবাড়ীর প্রায়  পাঁচ লাখ, সবুজবাগের প্রায় চার লাখ ২০ হাজার, দক্ষিণখানের প্রায় দুই লাখ  ৮০ হাজার, মিরপুরের প্রায় সাত লাখ  ৮০ হাজার এবং মোহাম্মদপুরের প্রায় চার লাখ অধিবাসীকে কলেরার টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রায় ৭০০টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করে এসব এলাকার অধিবাসীকে কলেরার টিকা গ্রহণ করে এ রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আহ্বান করা যাচ্ছে এবং টিকাদান কার্যক্রমকে সহায়তা করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।  

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মু. শফিকুল ইসলাম, আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ, সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিরেক্টর ড. ফেরদৌসী কাদরী, এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, আইসিডিডিআরবি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-সহ অন্যান্য দেশি ও বিদেশী সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।

(ঢাকাটাইমস/২৬ জুন/এএ)