হাতিরঝিলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কতদূর?

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২২, ০৯:১৩ | আপডেট: ২৭ জুন ২০২২, ০৯:৩১

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস

হাতিরঝিল রাজধানী ঢাকার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুন। নান্দনিক এই প্রকল্প থেকে ৬০ দিনের মধ্যে সব বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ আছে হাইকোর্টের। তবে এখন পর্যন্ত স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে কোনো প্রস্তুতি নেই।

গত বছরের ৩০ জুন হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টকে পাবলিক ট্রাস্ট (জনগণের সম্পত্তি) ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। আর গত ২৪ মে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের স্বাক্ষরে ৫৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে।

রায়ের লিখিত অনুলিপি পাওয়ার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে হাতিরঝিলের সব বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রায়ে চার দফা নির্দেশনাসহ ৯টি পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।

হাতিরঝিল এলাকায় পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরির পাশাপাশি পানির জন্য ক্ষতিকর লেকে এরকম সব যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে পরামর্শে।

হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—রাজউক। ১৯ জুন এই আবেদনের শুনানি হলেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম কোনো আদেশ দেননি। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন চেম্বার বিচারপতি।

রাজউক সূত্রে জানা যায়, হাতিরঝিলে মোবাইল দোকান এবং রেষ্টুরেন্টসহ মোট ৩১টি স্থাপনা তৈরির জন্য জায়গা লিজ দিয়েছে রাজউক। বরাদ্দ বাবদ প্রতিষ্ঠান ভেদে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম নেওয়া হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ এক থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত। পাশাপাশি মাসিক ভাড়া দিতে হয় ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

রবিবার হাতিরঝিলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত আগের মতোই সব স্থাপনা ঠিকঠাক আছে। রেষ্টুরেন্টগুলোতে বেচাবিক্রি ওয়াটার ট্যাক্সিগুলোও যাত্রী পরিবহন করছে।

জানা গেছে, নকশার বাইরে গিয়ে ৩১টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য ইজারা দিয়েছে রাজউক। হাতিরঝিলের মূল নকশায় এই স্থাপনাগুলো নেই। এসব স্থাপনা দ্রুত সরিয়ে নিলে হাতিরঝিল নিজস্ব স্বকীয়তা ফিরে পাবে মনে করেন নগরবিদরা।

নকশার বাইরে গিয়ে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে রাজউক হাতিরঝিল প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিমাসেই খরচ আছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বরাদ্দ দেওয়ার পেছনে কিছুটা খরচ উঠানোর চেষ্টা আছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মাস শেষে কিছুটা খরচ উঠলেও রাজউকের ওপর চাপ কমে। তবে এখন আমরা আমাদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আপিল করেছি। সামনে শুনানি আছে। আমরা আমাদের যুক্তি উপস্থাপন করবো। সবশেষ আদালত যা রায় দেবে তাই হবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, হাতিরঝিলকে মূল চরিত্রে ফিরিয়ে আনতে যা কিছু করা দরকার সেটাই করা উচিত। এছাড়া মূল্যবান পানিও দূষিত হচ্ছে। তাই এ পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টের মালিক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদেরকে বরাদ্দ দিয়েছে বলেই নিয়েছি। তখন রাজউকের চিন্তাভাবনা করে সবকিছু করা দরকার ছিলো। বরাদ্দ নেওয়াসহ সবমিলে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন উচ্ছেদ করলে তো পথে বসে যাবো।’

(ঢাকাটাইমস/২৭জুন/ডিএম)