লোকসানের শঙ্কায় বিদেশি সিনেমা আমদানি কতটা যৌক্তিক?

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ জুন ২০২২, ১০:২২ | প্রকাশিত : ২৭ জুন ২০২২, ০৯:২৭
ছবির বাঁ থেকে প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ, শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান,

দেশের সিনেমা মানসম্মত নয়। প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে ব্যর্থ। লোকসানে পড়তে হচ্ছে প্রযোজক ও হল মালিকদের। এমন শঙ্কা দেখিয়ে ভারতীয় সিনেমা আমদানির তোড়জোড় চলছে। এই উদ্যোগে সবুজ সংকেত রয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের। তবে শিল্পীদের অনেকে বলছেন, দেশীয় চলচ্চিত্রের অবস্থা এমনিতেই শোচনীয়। এর মধ্যে আবার বিদেশি সিনেমা আমদানি করে চালালে ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস হয়ে যাবে।

তাহলে জেনেশুনে কেন বিদেশি সিনেমা আমদানির দাবি তুলছেন হল মালিকরা? এটি কতটা যুক্তিসঙ্গত? এ সম্পর্কে জানতে কথা হয় চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বলের সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোর সিনেমা আমদানি করতে চাই। এতে আমাদের সিনেমা তাদের দেশগুলোতে মুক্তি পাবে এবং তাদের সিনেমা আসবে আমাদের দেশে।’

বিদেশি সিনেমা আমদানির পেছনে কারণ কী? এ প্রশ্নের জবাবে আওলাদ বলেন, একসময় আমাদের দেশে ১৪ শো’র বেশি সিনেমা হল ছিল। মানসম্মত সিনেমার অভাবে সেই সংখ্যা এখন একশোর ঘরে নেমেছে। হলগুলো তো বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশে ভালো সিনেমা নির্মিত হলে সেটা অবশ্যই প্রেক্ষাগৃহে চলবে। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে চালানোর মতো মানসম্মত সিনেমা তো দেশে হচ্ছে না।’

প্রদর্শক সমিতির এই নেতা আরও বলেন, ‘হল চালু রাখতে বছরে ১৩২টি সিনেমা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে এখন বছরে বড়জোর ৫০টি সিনেমা মুক্তি পায়। তাহলে হলগুলো সারা বছর কী চালাবে? তাই এই সংকটময় মুহূর্তে হলগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সিনেমা আমদানি করে চালাতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করছি।’

বিদেশি সিনেমা আমদানির পক্ষে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান এবং শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনও।

সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলো চাচ্ছে ভারতীয় সিনেমা আসুক। সেই পরিবেশ আমরা তৈরি করে দিতে চাই। তা না হলে দর্শক সিনেমা হলে আসবে না। তারা অনভ্যস্ত হয়ে পড়বে। শুধু পরিচালক সমিতিই নয়, চলচ্চিত্র পরিবারের সকল সংগঠন এখন চাচ্ছে, ভারতীয় সিনেমা আসুক। সংগঠনগুলো একসঙ্গে বসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

সালমান শাহ-মৌসুমীর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে আগামী দুই-তিন বছরের জন্য আমাদের দেশে ভারতীয় সিনেমা চালানো হোক। তবে নিয়ম হতে হবে, বছরে ১০টির বেশি ভারতীয় সিনেমা যেন আমদানি করা না হয়। ইতোমধ্যে আমরা এ বিষয়টি তথ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। আশা করি, ইতিবাচক সাড়া পাবো।’

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমরা সিনেমার সংখ্যা বাড়াতে পারিনি। তাই ভারতীয় সিনেমা আমদানির প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। একটা সময় বেঁধে দিয়ে আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। সিনেমা আমদানির মাধ্যমে যদি বন্ধ সিনেমা হলগুলো খুলতে পারি, তাহলে এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র লাভবান হবে বলে মনে করি।’

‘বেদের মেয়ে জোছনা’র নায়ক আরও বলেন, ‘সরকার সবকিছু করে দেবে না। আমরা যদি এক সুরে কথা বলি, তাহলে সরকার কিছু করবে। সবাইকে এক হতে হবে। সিনেমা হল চালু না রাখলে ব্যবসা হবে না। ব্যবসা না হলে প্রযোজক আরেকটা সিনেমা বানাতে পারবেন না। একটি সিনেমা বানাতে অনেক টাকা লগ্নি করতে হয়। তাই, আমি চাই বেশি বেশি সিনেমা নির্মিত হোক। শিল্পীরা যেন কাজ করতে পারেন।’

এর আগে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ভারতীয় সিনেমা আমদানির প্রতিবাদে এফডিসির সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলেন ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। সে সময় তিনি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ছিলেন। সেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন চিত্রনায়ক অমিত হাসান এবং ওমর সানী। আরও ছিলেন নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। এখন তিনিই ভারতীয় সিনেমা আমদানির পক্ষে।

তারও আগে ২০১৫ সালে দেশে হিন্দি সিনেমা চালানোর প্রতিবাদ করায় শাকিব খানকে নিষিদ্ধ করেছিল হল মালিকরা। কিং খানের কোনো সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে চালানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল তারা। সে সময়ও হল মালিকদের যুক্তি ছিল, দেশীয় সিনেমার টিকেট বিক্রি না হওয়ায় তাদের ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। এ জন্য তারা হিন্দি সিনেমা চালিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চান।

১৯৬৫ সাল থেকে বাংলাদেশে হিন্দি সিনেমার প্রদর্শন নিষিদ্ধ ছিল। চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে এবং প্রেক্ষাগৃহে আগের মতো দর্শক ফেরানোর উদ্যোগ হিসেবে সরকার ভারতীয় সিনেমা আমদানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ২০১০ সালে। পরে দেশীয় শিল্পী ও নির্মাতাদের চাপে সরকার আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৫ সালে পুনরায় হিন্দি সিনেমা দেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এর প্রতিবাদে ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছিল চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। দাবি ছিল, ভারতীয় সিনেমা আমদানি ও প্রদর্শন বন্ধ করা। ওই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন নায়ক রুবেল, ওমর সানী, পরিচালক আমজাদ হোসেন, সোহানুর রহমান সোহান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুসহ চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এর পরের বছর শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানান সুপারস্টার শাকিব খান। তারপর থেকে গত কয়েক বছর বিদেশি সিনেমা আমদানি বন্ধ রেখেছিল হল মালিকরা। ফের তারা বিদেশি সিনেমা আমদানির দাবি তুলেছেন। সম্প্রতি তথ্য ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি তোলেন সিনেমা হল মালিকরা।

সভায় প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘হল মালিকরা ঋণ নিতে খুবই আগ্রহী। তবে এখন দেশে যে সিনেমা হচ্ছে, তা চালিয়ে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণেই ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে হল মালিকরা দোদুল্যমান অবস্থায় আছেন। সংকট নিরসনে তিনি সীমিত সময়ের জন্য ভারতীয় সিনেমা দেশের সিনেমা হলে মুক্তির অনুমতি দেওয়ার দাবি তোলেন।

একই দাবি তোলেন সাথী সিনেমা হলের কর্ণধার মিয়া আলাউদ্দিন এবং অভিসার সিনেমা হলের মালিক সফর আলী ভুঁইয়াসহ আরও অনেকে।

এই দাবির ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি অনুদানে দেশে বাণিজ্যিক সিনেমার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সীমিত সময়ের জন্য ভারতীয় সিনেমাও আমদানি করা যেতে পারে।’ তার আগে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনকে ঐক্যমতে পৌঁছানোর তাগিদ দেন মন্ত্রী। জানা গেছে, বিদেশি সিনেমা আমদানি নিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রায় সব সংগঠনের নেতারাই একমত হয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুন/এলএম/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :