একজন সিনিয়র সচিবের সাহসী মানবিকতা

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২২, ০৭:৪৫ | আপডেট: ২৮ জুন ২০২২, ১২:৪৮

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন কাঁঠালবাড়ির একটি জনসভায় যোগদান শেষে ট্রলারে করে বাড়ি ফিরছিলেন একদল লোক। একপর্যায়ে উত্তাল ঢেউয়ে নিচের অংশ ফেটে ডুবে যায় ট্রলারটি। ডুবন্ত যাত্রীরা তখন বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের উদ্ধার করার মতো কেউ ছিল না আশপাশে।

এ সময় স্পিডবোটযোগে নদী পার হচ্ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। দূর থেকে ভাসতে থাকা মানুষদের দেখে স্পিডবোট নিয়ে সেখানে ছুটে যান তিনি। অসীম সাহসিকতায় উদ্ধার করেন ২১ জন যাত্রীকে। রোমাঞ্চকর সে অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করলেন ঢাকাটাইমসের সঙ্গে। কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আমি স্পিডবোট সহযোগে পদ্মা পার হচ্ছিলাম। হঠাৎ দূরে মাঝনদীতে দেখি কিছু মানুষ। প্রথমে ভেবেছিলাম জেলে বা এমন কিছু। কিন্তু পরে দেখি তারা হাত উচিঁয়ে সাহায্য চাইছে। সঙ্গে সঙ্গে স্পিডবোট নিয়ে ছুটে গেলাম। সেখান থেকে বোটে উঠালাম ১০ জনকে। কিন্তু ছোট বোটে আর জায়গা ছিল না।’

কিন্তু আরও কিছু মানুষ তখনও পানিতে ভাসছে। তাদেরও বাঁচাতে হবে। এরই মধ্যে ফোনে যোগাযোগ করে দ্রুতই আরও একটি স্পিডবোট আনালেন তিনি।
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘ফোন দিয়ে পানিসম্পদের একটা স্পিডবোট আনালাম। সে বোটে উঠালাম ১১ জনকে। এর মধ্যে তিনজন অজ্ঞান ছিল। দ্রুতই তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজন কান্নাকাটি করছিল। পরে শুনলাম একজন মিসিং। আজ (সোমবার) সকালে তার লাশ ভেসে এসেছে। সাঁতার না জানায় আগেই প্রবল ঢেউয়ে সে ডুবে গিয়েছিল।’

ভাসতে থাকা ২১ জনকে উদ্ধার করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ও তার সঙ্গীরা। এ ঘটনায় ভাগ্যের সহায়তার কথাও জানান সচিব।

কবির বিন আনোয়ার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আল্লাহর রহমত ছিল বলেই হয়তো তাদের উদ্ধার করতে পেরেছি। আমি ১০ মিনিট আগে বা পিছনে থাকলে হয়তো খুব খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারত।’

সচিবের এমন মানবিকতায় প্রশংসায় ভাসছেন সবাই। দুর্ঘটনার শিকার ডুবন্ত যাত্রীদের উদ্ধার করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বস্তরের মানুষ সচিবের এমন সাহসী মানবিক কাজের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একজন সিনিয়র সচিবের এমন কাজ দৃষ্টান্তযোগ্য উদাহরণ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তাকে কবির বিন আনোয়ারের পদাঙ্ক অনুসরণ করা উচিত।’
(ঢাকাটাইমস/২৭জুন/মোআ)