হুমায়ূন আহমেদের নাটকের শিল্পীরা কে কোথায়? (পর্ব-১)

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুন ২০২২, ১৪:৩২ | প্রকাশিত : ২৮ জুন ২০২২, ১৪:০৭

হুমায়ূন আহমেদ। একজন কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক। অসাধারণ প্রতিভাধর একজন নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। প্রয়াত এই লেখকের হাতেই একসময় তৈরি হয়েছেন অসংখ্য প্রতিভাধর অভিনয়শিল্পী। যারা তার নাটক ও চলচ্চিত্রের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর সেই শিল্পীদের অনেকেই হারিয়ে গেছেন। অনেকে আবার এখনো অভিনয় করছেন সদর্পে।

চলুন তবে জেনে আসি হুমায়ূন আহমেদের সেই অভিনয়শিল্পীরা কে কোথায় কী করছেন-

আসাদুজ্জামান নূর: হুমায়ূন আহমেদের নাটক হোক বা সিনেমা- এসব নিয়ে আলোচনায় প্রথমেই যে নামটি চলে আসে, তিনি আসাদুজ্জামান নূর। ১৯৯০ সালে বিটিভিতে প্রচারিত ‘কোথাও কেউ নেই নাটকটির বাকের ভাইকে কার না মনে আছে? সেই বাকের ভাই ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর।

পাড়ার মাস্তান বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় হয়েছিল নাটকে। অথচ সেই ফাঁসি ঠেকাতে মিছিল বেরিয়েছিল ঢাকার রাস্তায়। বুঝুন তবে, দর্শকের মনে কী পরিমান জায়গা করে নিয়েছিলেন বাকের ভাই ওরফে আসাদুজ্জামান নূর। এই বাকের ভাইয়ের স্রষ্টা তো হুমায়ূন আহমেদই।

‘কোথাও কেউ নেই’ ছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের ‘বহুব্রীহি’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘প্রিয় পদরেখা’, ‘হিমু’, ‘ঘটনা সামান্য’, ‘সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড’, ‘আজ রবিবার’ নাটকগুলোতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর।

এছাড়া প্রয়াত নির্মাতার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’ এবং ‘চন্দ্রকথা’তেও তাকে দেখা গেছে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ, শহীদ মুনির চৌধুরী পুরস্কারসহ আরও অনেক সম্মাননা।

হুমায়ূন আহমেদ নেই বহু বছর। তাই অভিনয়ে সেভাবে নেই ‘বাকের ভাই’ খ্যাত আসাদুজ্জামান নূরও। তিনি যেমন মস্ত বড় একজন অভিনেতা, তেমন বড় রাজনীতিকও। ১৯৭১ সালে অংশ নিয়েছিলেন মহা মুক্তিযুদ্ধে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

২০০১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আসাদুজ্জামান নূর। শেখ হাসিনা সরকারের তৃতীয় মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। বর্তমানে অভিনয় করেন কালেভদ্রে। ব্যস্ত থাকেন রাজনীতির মাঠেই।

আবুল হায়াত: হুমায়ূন আহমেদের নাটক-সিনেমার আরেক নিয়মিত অভিনেতা প্রবীণ এই তারকা। প্রয়াত কথাসাহিত্যিকের প্রচুর নাটকে নানা চরিত্রে তাকে দেখা গেছে। তার মধ্যে ‘মিসির আলী’ একটি স্বরণীয় চরিত্র। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আবুল হায়াতের প্রথম কাজ ‘এই সব দিন রাত্রি’। ১৯৮৫ সালে বিটিভিতে প্রচারিত হয় নাটকটি।

পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের নির্দেশনায় ‘দ্বিতীয় জন্ম’, ‘বহুব্রীহি’, ‘হিমু’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার’, ‘নিমফুল’, ‘ঘটনা সামান্য’সহ বহু নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। এছাড়া ১৯৯৪ সালে হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’তেও গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেন আবুল হায়াত।

বয়সের শেষ প্রান্তে এসে এই অভিনেতাও লাইট-ক্যামেরা থেকে অনেকটা দূরে এখন। গত বছরের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন আবুল হায়াত। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন প্রায় দুই সপ্তাহ। পরে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন। বর্তমানে নিজ বাসায় পরিবারের সঙ্গেই সময় কাটে এই প্রবীণ অভিনেতার।

চ্যালেঞ্জার: হুমায়ূন আহমেদের হাতেগড়া শিল্পীদের মধ্যে এই অভিনেতা ছিলেন রীতিমতো একটা বিস্ময়। তার কোনো অভিনয় ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। অথচ পরবর্তীতে চ্যালেঞ্জারই হয়ে উঠেছিলেন হুমায়ূন আহমেদের নাটকের প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মুখ। একসঙ্গে বহু নাটকে কাজ করেছেন তারা।

হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত হাবলঙ্গের বাজার টেলিভিশন নাটকের মাধ্যমে ২০০০ সালে তিনি অভিনয়ে অভিষেক ঘটান। পরবর্তীতে ২০০১ সালে দুই দুয়ারী চলচ্চিত্রে একটি গৌন চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন।

এই অভিনেতার জন্মনাম এএসএম তোফাজ্জল হোসেন। নাটকের অভিনয়ের জন্য হুমায়ূন আহমেদ তার নাম দিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জার। এই নামেই তাকে সারা দেশের মানুষ চেনে। হুমায়ূন আহমেদের ‘হাবলঙ্গের বাজার’ নাটকটির মাধ্যমে ২০০০ সালে অভিনয়ে অভিষেক হয় চ্যালেঞ্জারের।

সেই শুরু। এরপর হুমায়ূন আহমেদের কত নাটকে যে তিনি অভিনয় করেছেন, সেটা না গুণে বলা মুশকিল। নাটকে চ্যালেঞ্জারের চরিত্রগুলো যেমন ছিল মজার, তেমনি তার অভিনয়ে আসার গল্পটাও মজার। হুমায়ূন আহমেদ তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘ফাউন্টেন পেন’-এ লিখেছেন সেই গল্প।

ওই বইয়ের কথাগুলো এমন- ‘তাকে (চ্যালেঞ্জার) আমি প্রথম যে নাটকে নিলাম তার নাম ‘হাবলঙের বাজার’। নাটকের কাহিনি হচ্ছে গরমের সময় ডাক্তার এজাজের মাথা এলোমেলো হয়। তার বিয়ের দিন মাথা খুব এলোমেলো হলো। ঠিক করা হলো, মাথা কামিয়ে সেখানে এলাজ দেওয়া হবে।’

‘শর্ট নেওয়ার আগে আগে দেখা গেল নাপিত আনা হয়নি। এমন সময় দেখা মেলে চ্যালেঞ্জারের। কীভাবে নাটক বানানো হয় তা দেখার জন্য সে তার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে শুটিংস্পটে। দুজনই আগ্রহ নিয়ে নাটক বানানো দেখছে। আমি চ্যালেঞ্জারের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুমি তো সব কিছুকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নাও। এসো নাপিতের ভূমিকায় অভিনয় করো।’

চ্যালেঞ্জার বলল, ‘স্যার আপনি যা বলবেন তা-ই করব। মাটি খেতে বললে মাটি খাব। নাটক পারব না।’ আমি বললাম, ‘তুমি পারবে। নাও ক্ষুর হাতে নাও।’ চ্যালেঞ্জার ছোট্ট একটা ভূমিকায় অভিনয় করল। আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম, তার ভেতর সহজাত অভিনয়ের আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। তাকে এক ঘণ্টার একটি নাটকে প্রধান চরিত্র করতে বললাম, নাটকের নাম ‘খোয়াবনগর’।

‘সেখানে আমার মেঝো মেয়ে শীলা অভিনয় করেছিল। নাটকের শেষে আমি মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাবা! চ্যালেঞ্জার নামের এই নতুন অভিনেতার অভিনয় তোমার কেমন লাগল?’ শীলা বলল, ‘আসাদুজ্জামান নূর চাচাকে আমার এ দেশের সবচেয়ে বড় অভিনেতা বলে মনে হয়। আমি আজ যাঁর সঙ্গে অভিনয় করলাম, তিনি নূর চাচার চেয়ে কোনো অংশে কম না।’

আমি বললাম- ‘বাবা! তোমার কী মনে হয় সুপারস্টার হিসেবে তার পরিচয় হবে?’ শীলা বলল, ‘অবশ্যই’। আমার ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’তে পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করে সে (চ্যালেঞ্জার) নিজেকে সুপারস্টার প্রমাণিত করলো।’

তবে হুমায়ূন আহমেদও নেই, তার হাতেগড়া চ্যালেঞ্জারও নেই। ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর ৫১ বছর বয়সে তিনি ঢাকার আদাবরের শেখেরটেকের নিজ বাসভবনে মারা যান।২০০৯ সালের জুলাই মাসে তিনি মস্তিষ্কের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। সিঙ্গাপুর গিয়ে পাঁচ মাস চিকিৎসাও করিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরানো যায়নি।

.....(চলবে)।

(ঢাকাটাইমস/২৮ জুন/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :