নৌকা দেখলেই ত্রাণের জন্য দলবেঁধে ছুটে আসে ক্ষুধার্ত মানুষ!
বন্যার পানি কমলেও যমুনার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এখনো চারদিকে থৈ-থৈ করছে পানি। চরাঞ্চলবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে গেছে আরও বহুগুণে। বানভাসি মানুষগুলোর ঘরে নেই প্রয়োজনীয় খাবার। শিশু খাদ্যের সংকট। বেড়েছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগবালাই। হাতে টাকা-পয়সাও তেমন নেই। পানিবন্দি থাকায় রোজগারের পথও বন্ধ।
বন্যায় প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আটকে রয়েছে পানিবন্দি মানুষ। তারা নৌকা ছাড়া কোথাও যেতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে নৌকাযোগে কেউ পরিদর্শন বা ঘুরতে গেলেও ত্রাণের আশায় দলবেঁধে ছুটে আসে ক্ষুধার্ত মানুষগুলো!
পানিবন্দি থাকায় যারা নৌকার কাছে আসতে পারেন না তারা নৌকাকে হাঁক-ডাক বা হাতের ইশারা দিচ্ছেন। আবার অনেকে ভেলা ও ছোট নৌকা নিয়ে ঘিরে ধরে ত্রাণের জন্য আকুতি জানান।
সরেজমিনে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলের গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, রবি ফসল জেগে ওঠলেও সেগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
গোবিন্দাসীর কোনাবাড়ী এলাকার বানভাসি জোয়াদ্দার হোসেন বলেন, আমাদের এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় ত্রাণ নিয়ে কোনো সংগঠন বা এনজিও আসে না। তারা রাস্তার আশপাশে দিয়েই চলে যায়। তাই খাবারের খুব সংকটে আছি। এ পর্যন্ত আমরা সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহযোগিতা পাইনি।
বেলটিয়াপাড়া গ্রামের বানভাসি বিমলা বেগম অভিযোগ করে বলেন, একরাতে পানির প্রবল স্রোতে নিমিষেই বসতভিটা নদী গর্ভে চলে যায়। ঘরে থাকা চাল-ডালসহ প্রয়োজনী কোন কিছু সরাতে পারেনি। আমরা বেঁচে আছি কি না তা কেউ খোঁজও নিচ্ছে না কেউ। কিন্তু শিশুদের নিয়ে খুব সমস্যায় আছি।
বানভাসি করিম হোসেন বলেন, রাস্তায় পলিথিনের ছাপড়া ঘর তুলে আছি। কৃষি কাজ করতাম, বন্যার কারণে তাও বন্ধ হয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। আবার গরুর গো-খাদ্য সংকট। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ডাকাত আতঙ্কে রাতে জেগে থাকতে হচ্ছে।
কষ্টাপাড়া গ্রামের অভিজিৎ জানায়, চারদিকে পানি, কোথাও যাবার জায়গা নেই। এখন সব কাজ বন্ধ। খুব কষ্টে দিন কাটছে। টিউবওয়েল ও টয়লেট পানিতে ডুবে যাওয়ায় গোসল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া পোকা-মাকড় ও সাপের ভয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না।
অর্জুনা ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। এখন পর্যন্ত কাউকে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দিতে পারেননি। এদিকে, বাসুদেবকোল এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি, বেশ কয়েকটি মসজিদ ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা এবার ভেঙে গেছে। বন্যার সময় তাদের জন্য নৌকাও প্রদান করা হয়েছে। বুধবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ছোট মনিরকে নিয়ে পরিদর্শনে যাব এবং এমপি ত্রাণ সহায়তা প্রদান করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ জানান, প্রায় ৩০-৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছিল তার ইউনিয়নে। এসময়ে বানভাসিদের চলাচলের জন্য ইউএনও’র পরামর্শে ডিঙি নৌকা প্রদান করেছেন। এছাড়াও যেসব এলাকার রাস্তা-ঘাট ভেঙেছে সেগুলোতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন। তবে, সরকারিভাবে কোন কিছু না পাওয়ায় কাউকে এ পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী দিতে পারেননি।
নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও ইউপি সদস্য করিম মেম্বার জানান, এখনো কাউকে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা দেয়া যায়নি। তবে, ছোট মনির এমপি মহোদয়ের নির্দেশনায় পানিবন্দিদের যাতায়াতে সুবিধার লক্ষ্যে ১০-১২টি ডিঙি নৌকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সাধ্যমতো বানভাসিদের নগদ অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি।
গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার জানান, আমার ইউনিয়নের খানুবাড়ী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রায় ২০০ পরিবারের বসতভিটাসহ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি ছিল। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বানভাসিদের শুকনো খাবার বিতরণ, কয়েকটি নৌকা ও বাঁশের সাঁকো করে দিয়েছি।
গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ আলম আকন্দ শাপলা জানান, যদিও পানি অনেকটা কমেছে গেছে। কিন্তু দুর্ভোগ বেড়েছে। এখনো সরকারিভাবে কোনো ধরণের ত্রাণ সহায়তা পাইনি। কবে নাগাত পাব সেটাও জানি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. ইশরাত জাহান জানান, এখনো ত্রাণ পায়নি। ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ত্রাণের ব্যবস্থা করব।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মোছা. নার্গিস আক্তার জানান, দু’একদিনের মধ্যেই ত্রাণ সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৮জুন/এআর)