ঢাবিতে প্রথম হওয়া নুয়েলের কোনো স্মার্ট ফোন নেই

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ জুন ২০২২, ২২:০৫ | প্রকাশিত : ২৮ জুন ২০২২, ২২:০৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের অধীনে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র নাহনুল কবির নুয়েল। ভর্তি পরীক্ষায় ৯৮ নম্বরের উত্তর লিখে ৯৬.৫ পেয়ে ১ম হন তিনি। যদিও তিনি পরীক্ষার পর রেজাল্ট আশানুরূপ হবে কিনা সে আশঙ্কাও করেছিলেন।

নুয়েলের বাবা চাঁদপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির। তার মা মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাজমুন নাহারের একমাত্র সন্তান।

কর্মসূত্রে মা-বাবা দুজনেই থাকতেন ফরিদপুরের বাইরে। ২০১৯ সাল হতে ফরিদপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন নুয়েল। সামর্থ্যবান মা-বাবার স্বাবলম্বী পরিবারের সন্তান হলেও খুবই ছিমছাম পরিচ্ছন্ন ও সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত সে। নিয়মানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই নিজেকে দেশসেরা হিসেবে গড়ে তুলেছে নিজেকে।

নাহনুল কবির নুয়েলের বাবা প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির জানান এই প্রতিবেদককে জানান, ২০০২ সালে জন্ম নুয়েলের। প্রাথমিকের পাঠ শেষ করেছে খুলনার রোটারী স্কুলে। ২০১২ সালে তিনি খুলনা থেকে ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। নুয়েল ভর্তি হন ফরিদপুর জিলা স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মানবিক বিভাগে।

‘‘আমাদের ভাইবোনের মধ্যে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে কিন্তু কেউ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কেউ নেই। এজন্য আমাদের মতো নুয়েলেরও ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে সে এই লাইনে পড়াশোনা করবে। সে যেন বড় হয়ে জজ হতে পারে এটিই আমরা চেয়ে আসছি। একারণেই বিজ্ঞান বিভাগ ছেড়ে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি। এইচএসসি পাস করার পর সে পিইউবিতে (দ্য পিপল্স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ) পরীক্ষা দিয়েও সে ফার্স্ট হয়। এখনও সে বিইউপিতে (ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস) ভর্তি আছে’’ জানান প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির।

তিনি বলেন, ফরিদপুরে থাকাকালে স্কুলের বাইরে নুয়েলকে বাসায় আমিই পড়াতাম। তবে আমি চলে আসার পর ওর ডিপার্টমেন্টের একজন হেডের কাছে পড়তো। পড়াশুনার বাইরে নুয়েলের অন্য কোনো আকর্ষণ ছিল না। ওর ব্যক্তিগত কোনো চাহিদা ছিল না। দশ টাকার একটি পাঞ্জাবি দিলে তাতেই খুশি। শহরের চাঁদমারিতে একটি চারতলা ভবনের ৩য় তলায় ভাড়া বাসায় থাকতেন নুয়েলের পরিবার।

মাবাবা দুজনেই চাকরিসূত্রে বাইরে থাকায় ২০১৮ সালের পর একাই থাকতে হতো থাকে। করোনার কারণে ও ফরিদপুর ছাড়তেও পারছিল না। পরীক্ষা আজকে হবে, কালকে হবে।

নুয়েলের প্রতিদিনের রুটিন কেমন ছিল এর জবাবে প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির বলেন, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ আদায়ের পর কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হতো তার দিন। আমরা ওকে সেভাবেই গড়ে তুলেছি।

অবশ্য মাঝেমাঝে উঠতে পারে না জানিয়ে তিনি বলেন, আজ ভোরেও আমি ওকে ফোন করে ঘুম থেকে তুলে দিয়েছি। অবশ্য আগেরদিন ঢাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ইন্টারভিউ শেষে তার বাড়ি ফিরতে রাত দুটো-তিনটে বেজে যায়। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ভর্তি পরীক্ষার জন্য নুয়েল তিন-চারমাস কোচিং করেছে ঢাকার একটি কোচিং সেন্টারে। তবে স্কুলজীবনে তার কোনো টিউটর ছিল না।

নুয়েলের বাবা বলেন, ছুটির দিনে আমরা ফরিদপুরে যেতাম তখনই কেবল আমাদের স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতো। তবে কোনো গেমস বা অন্য কিছু করতো না। শিক্ষামূলক ইংলিশ ইংলিশ মুভি দেখতো। ‘‘সময় নষ্ট হবে এজন্য তাকে আমরা কোন স্মার্ট ফোন কিনে দেইনি। পুরনো একটি বাটন ফোনই ব্যবহার করে। আমরা গেলে আমাদের ফোনটি নিতো। তবে কোনো গেমস খেলত না। শিক্ষামূলক মুভি দেখত। ওর রুটিন ছিল ভোরে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করে কোরআন তেলাওয়াতের পর লেখাপড়া শুরু করা। পড়াশোনার বাইরে সে ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করে। অনেক সময় বাসায় কাজের বুয়া না আসলে নিজের জন্য খাবার রান্না থেকে গৃহস্থালির কাজও করতে হয়েছে তাকে।

করোনার মধ্যে একবছর ফরিদপুরের বাসায় একাই থেকেছে। এসময় খুবই কষ্ট করেছে ছেলেটা।’’ ছেলের সম্বন্ধে জানতে চাইলে এভাবেই বলতে থাকেন প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কলা অনুষদভুক্ত 'খ' ইউনিটের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া নাহনুল কবির নুয়েল জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হবেন। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুবই খুশি। আমার বন্ধুদের একেক জনের একেক রকমের আশা ছিলো। তবে বাবা সবমসময় চাইতেন আমি যেনো পড়ালেখা করে জজ হই। সেই থেকে জজ হওয়ার ইচ্ছা আমার।

নাহানুল কবির নুয়েলের মা নাজমুন নাহার বলেন, আমার ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই খুব শান্তশিষ্ট। পড়ালেখার প্রতিই ওর সব থেকে বেশি আগ্রহ। ওর বাবার ইচ্ছা ও আইন বিষয়ে পড়ালেখা করবে। তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার, আমি কৃষিবিদ। তাই চেয়েছি, ছেলে আইন ও বিচার বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হোক।

জানা গেছে, মেধাবী নাহানুল কবির নুয়েল ২০০২ সালে ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন নাহানুল। তার বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের ভাবোখালী ইউনিয়নের ঘাঘড়া গ্রামে।

ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী নাহনুল কবির নুয়েলের সাফল্যে গর্বিত রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা বলেন, নুয়েল খুবই মেধাবী একজন ছাত্র। এজন্য তাকে আলাদাভাবে চিনতাম। আমরা তার সাফল্যে খুবই আনন্দিত। সে শুধু নিজেরই নয়, আমাদের কলেজের জন্যও গৌরব এনে দিয়েছে। ঢাকার বাইরের কলেজগুলোতেও যে সেরা ছাত্র থাকতে পারে সেটি তার মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে। তার এ সাফল্যের খবর শুনে আমি ফোন করে তার মা-বাবাকেও অভিনন্দন জানিয়েছি। (ঢাকাটাইমস/২৮জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :