করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর হচ্ছে সরকার

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২২, ০৮:২২ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২২, ০৯:০৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। বেশ কিছু দিন মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ অবস্থায় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়েছে সরকার ও বিশেষজ্ঞরা।

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক আদেশে ছয় দফা নির্দেশনা দেয়। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গতকাল মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

চিঠিতে বলা হয়, সারাদেশে করোনায় আক্রান্তের হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনগণের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে যথেষ্ট শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে মর্মে সরকারের উচ্চমহলে আলোচনা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির গত ১৪ জুনের সভায় গৃহীত সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য এবং কোভিড প্রতিরোধে ছয়টি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারদের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।

১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সব গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে। ২. সবক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। ৩. ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানগুলোতে (যেমন- মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৪. জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোডিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ৫. দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। ৬. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ৪৮৯টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে আরও ২ হাজার ৮৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। নতুন শনাক্তের মধ্যে ১ হাজার ৭৯৫ জনই ঢাকা জেলার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬১ জন। নতুন করে করোনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের নিয়ে সরকারি হিসাবে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু দাঁড়াল ২৯ হাজার ১৪৫ জনে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে। বেশ কয়েকদিন ধরে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যহত আছে। আসন্ন কোরবানি ঈদে বাড়ি ফেরা, পশুর হাট, পর্যটনকেন্দ্রিক জমায়েত হবে। ফলে দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এ অববস্থায় সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আমাদের রেস্তরাঁ, কমিউনিটি সেন্টার, মসজিদ এবং বিভিন্ন সেবাদান কেন্দ্রে যেন বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। বদ্ধ ঘরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে অনেক বেশি। তাই মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সংক্রমণ বাড়ছে, প্রাণহানি শূন্য থেকে এখন নিয়মিত ঘটছে। তাই টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। অফিস আদালতে যারা যান তাদের মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে অনুরোধ করছি।’

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেল্টা ধরনের করোনায় আসে দ্বিতীয় ঢেউ। এ পর্যায়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। এক পর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন। তৃতীয় ঢেউয়ের সময় ২৮ জানুয়ারি করোনা শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাঁড়ায়, যা দেশে করোনা সংক্রমণ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।

তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত বেশি হলেও মৃত্যু ছিল তুলনামূলক কম। এই ঢেউ দ্রুত নিয়ন্ত্রণেও আসে। গত ১১ মার্চ তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর মাস্ক পরা ছাড়া করোনাসংক্রান্ত সব বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। তবে জনগণের মধ্যে মাস্ক পরা নিয়ে অনীহার বিষয়টি আবার দেখা যায়। করোনা সংক্রমণ ক্রমেই বাড়তে থাকলেও এ বিষয়ে সচেতনতার অভাবের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট।

করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে সব সরকারি চাকরিজীবীর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/ডিএম)