সিলেটে ফের বাড়ছে নদ-নদীর পানি, জনমনে আতঙ্ক

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২২, ১৫:৩৩ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২২, ১৫:৪৮

সিলেট ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

পানি কমার পর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এখনো সামাল দিতে পারেনি সিলেটবাসী। এর মাঝেই ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেটে ফের বাড়ছে নদ-নদীর পানি। আগামী তিন দিন বৃষ্টিপাত চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এতে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, আগামী কয়েক দিন সিলেটে বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও ভারতে বৃষ্টি হলে সিলেটের দিকে পাহাড়ি ঢল নামবে। এতে আবারও পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।

পাউবো সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ২৯ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বেড়েছে। বেড়েছে লোভা নদীর পানিও।

এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মঙ্গলবার রাত থেকে নগরের বেশিরভাগ এলাকা আবারও জলমগ্ন হয়ে পরে। উপশহর, তালতালা, তেররতণসহ, মির্জাজাঙ্গালসহ কিছু এলাকার ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পরেছে। এতে ফের দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। পানি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে অনেকের।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, পানি কমা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভারি বর্ষণে আবারও সিলেটের সবকয়টি নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুরমা নদীর একটি ও কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

মঙ্গলবার রাতে পানি ঢুকে জামতলা এলাকার বাসিন্দা সাগর চৌধুরীর বাসায়। তিনি বলেন, বারবার এভাবে পানি ঢুকে পড়ছে। আমরা কি করবে, কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে বুধবার সকালে ঘর থেকে পানি নেমেছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পরে নগরের উপশহর এলাকা। এই এলাকার বাসিন্দা মাসুক আমিন বলেন, গতরাতে আতঙ্কে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি। রাত জেগে পানি পাহারা দিয়েছি। রাতে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়েছিলো।

তিনি বলেন, টানা ১০দিন পর মাত্র দুইদিন আগে ঘর থেকে পানি নেমেছে। এখন আবার ঘরে পানি উঠলে দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকবে না।

আগামী তিন দিন সিলেটে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি জানান, বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
 

মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৬টা অবধি সিলেট অঞ্চলে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
 

সিলেটে গত দেড় মাসের ব্যবধানে দুই দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ১২ মে থেকে সিলেট শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছিল। সে দফায় প্রায় ১০ দিন পর পানি নেমে যায়। কিন্তু ১৪ জুন থেকে টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলা প্রায় তিন দিন সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। এমন অবস্থায় জরুরিভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে উদ্ধার তৎপরতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেয় বাহিনীটি। এর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে মঙ্গলবার রাত বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বানভাসিদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

ঢাকাটাইমস/২৯জুন/ইএস