এক সফল বাবার গল্প

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ জুন ২০২২, ২১:২৩

একই পরিবারে ৫ ভাই-বোন দেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়ার নজির খুব একটা দেখা যায় না। তেমন ঘটনাই ঘটেছে লক্ষ্মীপুরে। শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহর পাঁচ ছেলে-মেয়ের সবাই একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন।আর ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার পেছনে নিজের সব সম্পত্তি ব্যয় করে সার্থক হলেন শিক্ষক ছায়েদ ও তার স্ত্রী শামীমা ।

সর্বশেষ ওই শিক্ষকের একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়েছে। এ নিয়ে একে একে শিক্ষক বাবার মোট পাঁচ ছেলে-মেয়েই মেধার জোরে দেশের শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে আলোচনায় এসেছেন।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া গ্রামের অবসর প্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ ও শামীমা আক্তার দম্পতি এখন পাঁচ মেধাবী সন্তানের গর্বিত পিতা-মাতা। এমন মেধাবী সন্তানদের নিয়ে গ্রামবাসীরাও খুশি। শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ নোয়াখালীর সুবর্ণচরের দক্ষিণ ওয়াপদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা করে বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।

নিজের মেধাবী সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘ প্রচেষ্টার বিষয়ে বলেন, শুরুটা হয় ২০০৭ সালে। আমার বড় ছেলে শামসুল আলম দিপু ২০০৭-০৮ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে ভালো ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে ৩৫তম বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। পরে সে চাকরি ছেড়ে যোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। বর্তমানে সে সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছে।

এরপর তার ২য় ছেলে শাজাহান সিরাজ আল মামুন ২০১০-১১ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়। ২০১৬ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে ছেলে মামুন। বর্তমানে শাজাহান সিরাজ আল মামুন কর্মসংস্থান ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছে।

৩য় ছেলে আশরাফুল ইসলাম শহীদ ২০১১- ১২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সহিত প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে। আশরাফুল ইসলাম শহীদ বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছে।

চতুর্থ ছেলে শরীফুল ইসলাম বিজয় ২০১৬-১৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছে।

আর এ বছর আমার এক মাত্র মেয়ে ২০২১-২২ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৫৯৯ তম হয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ে জজ হতে চায়। আমি দীর্ঘ ৩০ বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছি। আমি অন্যের ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। একই সঙ্গে নিজের সন্তানদেরকেও সুশিক্ষিত করার জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিলাম।

উদয়ন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল আমিন জানান, তাদের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসসহ ছায়েদ স্যারের সব ছেলে-মেয়ে অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র। এমন শিক্ষার্থী পাওয়া বর্তমানে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তারা এলাকাবাসীর গর্ব।

অন্যদিকে একই পরিবারের সব ছেলে-মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার খবর ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে। শিক্ষক ছায়েদ উল্লাহ পরিবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র।

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :