মনে আছে পরীমনিকাণ্ডে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা এডিসি গোলাম সাকলাইনকে? এখন কোথায় তিনি?

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২২, ০৮:৪৩ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২২, ০৯:২১

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস

সুদর্শন পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ সাকলাইন। পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি)। ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনির এক মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে যান। তারপর সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস, দেশজুড়ে আলোড়ন। এসব খবর অনেকেরই জানা।

এরপর কেটে গেছে ১০ মাস। কিন্তু পরীমনির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ও বাহিনীর শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজের অভিযোগে এডিসি সাকলায়েনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি।

এখন কোথায় আছেন এডিসি সাকলাইন? তারা বিরুদ্ধে আদতে তদন্ত কি হয়েছিল? কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন কি জমা দেওয়া হয়েছিল?

ঢাকাটাইমস তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, তদন্ত প্রতিবেদন যথাসময়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তে কী উঠে এসেছে সে ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি তারা।

৩০তম বিসিএসের কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েন পরিমনি-কাণ্ডের সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। এখন তিনি মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) পশ্চিম বিভাগে কর্মরত।

যেভাবে ঘনিষ্ঠতা

পরীমনির সঙ্গে এডিসি গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েনের সম্পর্কের উপলক্ষ এক মামলার তদন্ত। ২০২১ সালের জুনে।

১৩ জুন উত্তরা বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। পরদিন উত্তরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।

ওই সময় পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয় গোয়েন্দা কার্যালয়ে। তখনই পরীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় সাকলায়েনের। এরপর দ্রুতই সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে।

পরীমনি-কাণ্ডের পর খবর বেরোয়- এই নায়িকার সঙ্গে প্রায়ই রাতে বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত এডিসি সাকলায়েনকে। রাত গভীর হলে গাড়ি নিয়ে বের হতেন তারা। মাঝেমধ্যে পরীমনির বাসায়ও যেতেন সাকলায়েন। সর্বশেষ পরীমনি সাকলায়েনের বাসায় গিয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় কাটান। এরপর জনসমক্ষে তাদের ঘনিষ্ঠতার চিত্র।

সিসিটিভির ফাঁস হওয়া দৃশ্য

২০২১ সালের ১ আগস্ট রাত আটটার দিকে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নিয়ে নিজ বাসায় অবস্থান করেন গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম মোহাম্মদ সাকলায়েন।

সিসি ফুটেজে দেখা যায়, রাত আটটার দিকে রাজারবাগের মধুমতি ভবনের সামনে থামে পরীমনির হ্যারিয়ার গাড়ি। ওই ভবনের ১০ তলায় সাকলায়েনের সরকারি বাসা। সাকলায়েন নিজে নেমে এসে রিসিভ করেন পরীমনিকে।

এর কিছুক্ষণ পর সাকলায়েনের বাসায় প্রবেশ করেন পরীমনির খালাতো বোন ও তার স্বামী। পরে রাত দুইটার দিকে পরীমনিসহ তিনজনই বের হয়ে যান বাসা থেকে।

ঘটনার বেশ কিছু দিন পর ফাঁস হয় এই ফুটেজ। এর আগে বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে বিপুল পরিমাণ মাদকদসহ গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আটক পরীমনি

২০২১ সালের ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। পরীমনির নানা নাটকীয়তা শেষে সেখান থেকে তাকে ও তার ঘনিষ্ঠ প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে কথিত মডেল পিয়াসা ও মৌকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, তারা একটি চক্র। সমাজের উচ্চবিত্ত ও ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইলিং করতেন তারা।

ওই সময় গণমাধ্যমে খবর আসে, পরীমনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অনেক ব্যবসায়ী, আমলা, ব্যাংকারের। পরীমনি তার ঘনিষ্ঠ মডেলদের মাধ্যমে একটি চক্র গড়ে তোলেন। তার মাধ্যমে অনেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন।

পরীর ঘনিষ্ঠদের তালিকায় পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদসহ অনেক প্রভাবশালীর নাম ছিল বলে তখন খবর প্রচারিত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।

বিব্রত পুলিশ বাহিনী

পরীমনি ও গোলাম সাকলায়েন কাণ্ডে বিব্রত হয় পুলিশ বাহিনী। তাকে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) থেকে বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয় তখন।

অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ট্রেনিং) মিয়া মাসুদ করিমের নেতৃত্বে কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) হামিদা পারভীন ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) রুমানা আক্তার। কমিটিকে  ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

কী তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই ঘটনার আপডেট সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।

তবে ওই কমিটিতে ছিলেন এমন একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা অনেক আগে তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে জমা দিয়েছি।’

কী সুপারিশ কিংবা পরামর্শ ছিল প্রতিবেদনে- এমন প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা অনেক দিন আগের কথা আমার মনে নেই। ’

(ঢাকাটাইমস/২৯জুন/এএ/মোআ)