আমাদের সময় ছাড়লেন মিজান মালিক

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২২, ১৬:৫৬ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২২, ১৭:২০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দৈনিক আমাদের সময় থেকে পদত্যাগ করেছেন খ্যাতিমান অনুসন্ধানী সাংবাদিক মিজান মালিক। তিনি জাতীয় দৈনিকটির উপ সম্পাদক ছিলেন। আমাদের সময়ে যোগ দেওয়ার আগে মিজান মালিক দৈনিক যুগান্তরের এডিটর (ইনভেস্টিগেশন) ও বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন।

বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ফেসবুক ওয়ালে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আমাদের সময় থেকে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মিজান মালিক। কেন তিনি আমাদের সময় ছাড়লেন না লিখলেও পরবর্তী কোনো এক সময়ে সেটি জানাবেন বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন।

১৯৭৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করা মিজান মালিক পড়াশুনা সম্পন্ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। দৈনিক ভোরের কাগজের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরুর পর বাংলাবাজার পত্রিকা, মুক্তকণ্ঠ, মানবজমিনসহ কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করেন।

এছাড়াও তিনি যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন টিমের প্রধান ছিলেন। সাংবাদিকতায় রাষ্ট্রীয় পুরস্কারসহ তার রয়েছে অসংখ্য অর্জন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যকর্মেও উজ্জ্বল পদচারণা মিজান মালিকের। লিখেন ছোটগল্প, কবিতা। গীতিকবি হিসেবেও রয়েছে তার পরিচিতি। তার লেখা বেশ কিছু গান প্রশংশিত হয়েছে শ্রোতামহলে। গানের জন্য ২০০৬ সালে পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কারও।

ঢাকা টাইমস পাঠকদের জন্য মিজান মালিকের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

আমার সহকর্মী, সহযোদ্ধা, শুভানুধ্যায়ী, বন্ধুবান্ধব, অগ্রজ-অনুজপ্রতিম, ভালোবাসে আগলে রাখা মানুষ এবং আমার সঙ্গে যুক্ত কাছের ও দূরের সকল প্রিয় মানুষদের জানাচ্ছি যে, এখন থেকে আমি দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে নেই। আমি এই পত্রিকা থেকে পদত্যাগ করেছি।

যুগান্তর ছেড়ে আসার কয়েক মাসের মাথায় কেন আমাদের সময় থেকে পদত্যাগ করলাম—আমি পরে একসময় বলব। আপাতত, এইটুকু বলতে পারি, পেশাদারিত্বের সঙ্গে এ পর্যন্ত আপস করতে শিখিনি। ভালো কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই। সেই বাধা অতিক্রম করেই দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কথা বলতে হবে। দেশ দশের কথা বলতে হবে। দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।

যতদিন পেশায় থাকবো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে চাই। যারা আমাকে ভালোবাসেন, সাথে ছিলেন আমার নতুন অভিযাত্রায়ও তাদের পাশে পাবো বলে আশা রাখি।

আমরা জানি, কখনো কখনো কোনো প্রতিষ্ঠান যেমন ব্রান্ড আবার ব্যক্তিও ব্রান্ডভ্যালু তৈরি করে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে পত্রিকা ও টেলিভিশনে কাজ করে যেটুকু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তার বাস্তবায়ন করা গেলে যে কোনো পরিস্থিতিতে ভালো কিছু করা সম্ভব।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। এরপরও আমি বহু অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছি। গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট করেছি। কিন্তু আইন আমার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি। বস্তনিষ্ঠ ও তথ্য নির্ভর সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নেয়া গেলে আইন কোনো বাধা নয়। যদিও এই আইনে অনেক সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। আমি সেই সাংবাদিকদের পাশে ছিলাম। আছি। অন্যায়ভাবে কেউ হয়রানির শিকার হলে গণমাধ্যম তা মেনে নেবে না।

যাই হোক, সাংবাদিকতার পাশাপাশি আমি আমার লেখালেখি চালিয়ে যেতে চাই। আমি সবসময় ইতিবাচক মানুষ। নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকতে চাই। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই।

আমি আরেকটি পোস্টে বলেছিলাম, সিগনেচার কাজ বলতে যা বোঝায় আমি যখন যেখানে কাজ করেছি, হাত দিয়েছি, কিছুটা হলেও ছাপ রেখেছি। আমাদের সময়েও ব্যতিক্রম কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তিতে একটি বিশেষ সংখ্যা বের করার যে পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।

একজন প্রিয় সম্পাদক বলেছিলেন, ‘আমরা ঈদ সংখ্যা করতেই হিমশিম খাই, কিভাবে বিশেষ সংখ্যা করার চিন্তা মাথায় এলো’।  আমি বললাম, উদ্যোগ নিলে সবার সহযোগিতা থাকলে অসম্ভব না ভাই।

এছাড়াও রিপোর্টিংসহ অন্যান্য বিশেষ আয়োজননে কতটুকু ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছি, পাঠকরা নিশ্চয়ই ধারণা পেয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে পত্রিকার রিপোর্টারসহ সবার যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি। আমার জন্য অনেক রিপোর্টার অশ্রু ফেলেছেন। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

আমি সবসময় শুভ্রতার সাথে কাজ করতে চাই। জটিল বিষয়কে সহজ করে জানাতে চাই। হোক সাংবাদিকতা, হোক কবিতা গান কিংবা সৃজনশীল লেখালেখি। দেশের খ্যাতিমান কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা আমার ‘গল্প ছাড়া মলাট’ কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি পড়ে যে মতামত দিয়েছেন—আমি তাই।

তিনি বলেছেন, ‘মিজান মালিক একজন একজন তীক্ষ্ণ শব্দধানুকী স্রষ্টা। সেই সঙ্গে একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। সমাজের নানা বৈপরীত্য ও সমিল-অমিল ঘটনাপঞ্জি তার বিশ্লেষণে অন্যরকম মাত্রা পায়। ফলে তার কাব্যিক উচ্চারণও ভিন্ন মাত্রা পায়, বলা যায়। স্বাতন্দ্রোৎসন্ধানী।....চলমান সমাজের নানা সংকট, টানাপড়েন ও বৈপরীত্য শনাক্তকরণ করতে গিয়ে তার কবিতা হেগেলীয় দ্বান্ধিকতাকেও উন্মোচন করতে চায়।’

আমি অগ্রজদের কাছ থেকে এভাবেই অনুপ্রেরণা পাই। দৃঢ়তার সাথে কাজ করার শক্তি পাই। আমার জন্য দোয়া করবেন। পাশে থাকবেন। কাছে রাখবেন। ভালোবাসার বন্ধনে। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন। সুস্থ রাখুন।

(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/ডিএম)