১০২ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি

ঢাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ২২:২৯ | প্রকাশিত : ৩০ জুন ২০২২, ২০:৫৫

শতবছর পেরিয়ে শক্রবার (০১ জুলাই) ১০২ বছরে পদার্পণ করবে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যাপিঠ। বাংলাদেশের সোনালি অর্জন আর ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায় সূচিত হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে গবেষণা ও উদ্ভাবন: ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শুক্রবার (০১ জুলাই) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টার পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রা সহকারে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের খেলার মাঠে সমবেত হবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে থিম সং পরিবেশিত হবে।

এছাড়াও সকাল ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে গবেষণা ও উদ্ভাবন: ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া সহযোগিতা' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে নলেজ জেনারেশন করা এবং নলেজকে কাজে লাগানো। বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে এসে এ বিষয়গুলো উপর জোর দিয়েই আমরা আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে গবেষণা, রিচার্স এন্ড পাবলিকেশন ফেয়ারের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং বিদেশি কূটনীতিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সবার একটা সেতুবন্ধন তৈরী হবে। ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবরেশান আরো জোরদার হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নতুন ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ গণতান্ত্রিক বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের লক্ষ্য বৃথা যায়নি। তবে আবাসিক সংকট, খাদ্য সমস্যাসহ আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অতীত ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারলেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবো।

যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ এবং পূর্ব বাংলার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী বিকাশের লক্ষ্যে ২০ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর আগে ভাইস রয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতা।

ওই বছরের ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি. আর. কুচলার, ড. রাসবিহারী ঘোষ, নবাব সৈয়দ আলী চৌধুরী, নবাব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দচন্দ্র রায়, ঢাকা মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি. আর্চিবল্ড, জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, প্রেসিডেন্সি কলেজের (কলকাতা) অধ্যক্ষ এইচ. এইচ. আর. জেম্স্, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ. পিক এবং সংস্কৃত কলেজের (কলকাতা) অধ্যক্ষ সতীশ্চন্দ্র আচার্যকে সদস্য করে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়।

১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাস করে ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০’।

ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ সরকারের পরিত্যক্ত ভবনগুলো ও ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনগুলোর সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলো ছিল— সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন।

প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। যেসব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তারা হলেন— হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ. সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, জি এইচ ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ এফ রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সর্বক্ষেত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীসহ শহীদ হয়েছেন অনেকে।

বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩টি অনুষদ, ১৬টি ইনস্টিটিউট, ৮৩টি বিভাগ, ৫৮টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ২০টি আবাসিক হল, ৪টি হোস্টেল ও ১৩৮টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার ৯০৯ জন। পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৯শ ৮০ জন শিক্ষক।

(ঢাকাটাইমস/৩০জুন/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :