ভাই আবরারকে হারিয়েছেন বুয়েটে, তাই সুযোগ পেয়েও দ্বিধায় ফাইয়াজ, ঈদে সিদ্ধান্ত নেবে পরিবার

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২২, ০৯:১৩ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২২, ১৫:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
আবরার ফাইয়াজ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাইয়াজ। মেধাতালিকায় ৪৫০তম স্থানে রয়েছে তার নাম। তিনি যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হতে পারবেন। তবে দেশের এই শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হবেন কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীন ফাইয়াজ। 

কিন্তু কেন?

আবরার ফাইয়াজের বড়ভাই আবরার ফাহাদ ছিলেন বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী, যাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের একটি হলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আবরারকে ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় সাত অক্টোবর তার বাবা ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন। এরপর তদন্ত করে পুলিশ ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়, যাদের সবাই বুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত।

আবরার ফাহাদের মা মোসাম্মৎ রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘আবরার ফাইয়াজ  মেধাতালিকায় ৪৫০তম স্থান অধিকার করেছে। মেকানিক্যাল বিষয়ে সে ভর্তি হতে পারবে।’ 

ভর্তি হবেন কিনা এমন প্রশ্নে রোকেয়া বলেন, ‘ঈদে পরিবারের সবাই একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।

কান্না জড়িত কণ্ঠে মা রোকেয়া খাতুন আরও বলেন, ‘আবরার না থাকার কারণে যে ক্ষতিটা হয়েছে তা কিছুতেই পুষিয়ে নেওয়া যাবে না।’

ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে খুশি আবরার ফাইয়াজ। কিন্তু ভর্তি হবেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আছে ভর্তি হওয়ার। তারপরও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

সেদিন যা ঘটেছিল

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর। ছুটি কাটিয়ে কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফেরেন আবরার। ওই দিন বিকেলে শেরেবাংলা হলে নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষে পৌঁছে ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।

এর পর রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান ২০১১ নম্বর কক্ষে। সেখানে নিয়ে তাকে শিবিরের নেতা হিসেবে উল্লেখ করে মারধর শুরু করেন। আবরারকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। ‘শিবির ধরা হয়েছে’- এমন খবর পেয়ে সেখানে আরও সাত থেকে আটজন নেতা জড়ো হন। তারাও এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে যায় আবরারের দেহ। রাত ২টার পর তাকে ওই কক্ষ থেকে বের করে হলের সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।

এরপর শিক্ষার্থীরা হলের চিকিৎসকদের খবর দিলে  চিকিৎসক এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন অ্যাম্বুলেন্স ডাকার এক পর্যায়ে জানান, আবরার আর নেই। 

সেই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড আজও ভুলতে পারেনি আবরারের পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ফাইয়াজের নাম আসার পর আবরার ফাহাদের স্মৃতি মনে পড়ে মায়ের, কেঁপে ওঠে তার বুক।

(ঢাকাটাইমস/১জুলাই/এসএ/এফএ)