বঙ্গবন্ধু থাকলে উৎসব বাদ দিয়ে ত্রাণ দিতে যেতেন: মন্টু

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২২, ১৭:০৪

নিজস্ব প্রতি‌বেদক, ঢাকাটাইমস

বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সমালোচনা করে গণফোরামের একাংশের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেছেন, ‘আমরা বিবৃতি দিয়েছিলাম এই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনন্দ উৎসবে যে খরচটা হবে সেই খরচটা বন্যা দুর্গতদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সেটা করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু থাকলে বলতেন সমস্ত আনন্দ উৎসব বাদ দাও এবং সবাইকে নিয়ে তিনি ত্রাণ দিতে ভিড়ে যেতেন। আজকের সেই জিনিসগুলি, এই যে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতি, এগুলো সব বিলীন হয়ে গেছে।’

শুক্রবার রাজধানীর কাকরাই‌লে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের গণফোরামের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত হয়। সেখা‌নে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্টু এসব কথা ব‌লেন।

বাংলাদেশের রাজনীতি এখন হয়ে গেছে পুলিশের খাতায়, এটা হীরক রাজার দেশ ছাড়া আর কিছুই নয় মন্তব্য করে মন্টু ব‌লেন, ‘কোনো কিছুর শুরুতেই পুলিশ এসে জিজ্ঞাসা করবে সভাপতি কে, সাধারণ সম্পাদক কে, কতজন লোক হবে, কে কে বক্তৃতা দেবে? এই এই মানুষজন থাকলে আপনাদের সম্মেলন হবে না।’

মোস্তফা মোহসীন মন্টু ব‌লেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্ববোধ করি। কিন্তু গর্বিত হই তাদের কথা ভেবে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, খাবার দিয়েছেন এবং তার ছেলেকে মুক্তিযোদ্ধার হাতে তুলে দিয়ে দেশ স্বাধীন করতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।’

‘সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক সব হরিলুট হয়ে গেছে। কই এটা নিয়ে তো কোনো কথা হয় না। আজকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে এই যে পি কে হালদার হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে নিয়ে গেছে। আরে ভাই হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে নিয়ে গেল, কীভাবে বর্ডার পার হলো? তাহলে প্রশাসন কী করলো, তারা কোথায় ছিল।’ প্রশ্ন রাখেন মন্টু।  

গণফোরামের সভাপতি বলেন, আমাদের দেশে হচ্ছেটা কি? এই যে টাকা পাচারের একটা লাইন সরকার করে ফেলেছেন, এই দেশকে হীরক রাজার দেশ বললেও ভুল হবে। হীরক রাজার দেশেও একটা সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু আমাদের দেশে তাও নাই।’

মন্টু বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে ভাসিয়ে দিচ্ছে সরকার। আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানো দরকার দেশের কৃষকের কাছে, ওই সব মানুষের কাছে যারা ভিটে মাটি বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে অর্থ পাঠাচ্ছে, যেসব মা-বোন শ্রম দিয়ে দেশের গার্মেন্টস চালু রেখেছে তাদের প্রতি। এতে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।’

এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের সুগার মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেল। পৃথিবীর সব থেকে বড় আদমজী মিল বন্ধ হয়ে গেল, টেক্সটাইল বন্ধ হয়ে গেল। আর আমরা বড় বড় গল্প দিচ্ছি আমরা ফ্লাইওভার করছি, আমরা ব্রিজ করছি। আমার শিল্প কোথায়? আমার বড় বড় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাগুলো কেন ধ্বংস হয়ে গেল? সেখানে লুটপাট হয়ে গেল।‘

মন্টু বলেন, ‘একটা ব্যবসায়ী ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ট্যাক্স দেয়। আর যে লোকটা টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে বিদেশে সে যদি টাকাটা ফেরত আনে তাহলে ৭ শতাংশ টেক্সট দিতে হবে। তাহলে আমি কোন লেভেলের চোর, চোরকে আমি সাত শতাংশ ট্যাক্স করলাম, কিন্তু যারা এদেশেই কষ্ট করে উপার্জন করছেন তাদের ৩০ শতাংশ ট্যাক্স বসাই দিলাম।’

গণফোরামের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ।  সভাপতিত্ব করেন গণফোরাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমনা বুলু। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের, সভাপতি পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা খান সিদ্দিকুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব খান ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লতিফুল বারী হামীম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানীসহ গণফোরাম ঢাকা মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা।

সঞ্চালক ছিলেন গণফোরাম ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব মো. তাজুল ইসলাম।

(ঢাকাটাইমস/০১জুলাই/কেআর/কেএম)