যেসব কারণে জবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২২, ২১:৫৩ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২২, ২১:৫৮

জবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার পেছনে বেশ কিছু কারণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষারের ব্যক্তিগত গাড়িচালককে মারধরের ঘটনা।

শুক্রবার ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।’

বিজ্ঞপ্তিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের কোনো কারণ বর্ণনা করা হয়নি। এ বিষয়ে সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলের গাড়ি চালককে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের লোকজনই মারধর করেছে। তাই আপাতত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।

গত রবিবার ওয়ারিতে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম হলের কাছে কৌশিক সরকার সাম্য নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়ি চালককে মারধর করে। সোমবার সন্ধ্যায় ওয়ারি থানায় অভিযুক্তসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী চালক নজরুল ইসলাম।

পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কর্মীদের দিয়ে চাঁদাবাজির করার ঘটনার সিসি টিভির ফুটেজ বের হওয়ার ঘটনাও সামনে আসছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আরেক সহসভাপতি। ঢাকাটাইমসকে এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ইব্রাহীম ও আকতারকে সভাপতি সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পুরান ঢাকায় লুকিয়ে তারা বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করেছেন। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সিসি টিভির ফুটেজ তো সবার কাছেই আছে।’

সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, জবি ছাত্রলীগের সভাপতির কর্মী সাইদুল ইসলাম সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী মো. মাসুদ রানা প্রতি মাসে চাঁদা দেওয়ার রফাদফা করতে মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে হুমকি-ধমকির পর বের হয়ে আসে। নাভানা টাওয়ারেও একই ঘটনা ঘটেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট ক্যাম্পাস জগন্নাথের আশেপাশে ফুটপাতের প্রতিটি দোকান থেকেই প্রতিদিন চাঁদা নিচ্ছেন তারা। এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা নারী হেনস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে থাপ্পড় মেরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ সত্য প্রতীয়মান হওয়ায় একই শিক্ষাবর্ষের ওই বিভাগেরই দুই শিক্ষার্থী মো. খায়রুল ইসলাম ও মফিজুল্লা রনিকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে রনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজির অনুসারী।

গত ১৯ জুন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান একই বিভাগের এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও প্রশাসন এবং ওই ছাত্রীকে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি-ধামকি দিয়ে  ঘটনাটির রফাদফা করা হয়।

এছাড়া সদরঘাট থেকে একমাত্র এসি বাস হিমাচল পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগের উৎপাতে। আড়াই লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় এফ.আর হিমাচল পরিবহনের একটি এসি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব; ১৫৭১-২২) গত ৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার এলাকা থেকে এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আটকে রাখা হয়।

এফ.আর. পরিবহনের এমডি নোমান বলেন, ‘তাঁতিবাজার মোড় থেকে কোনো কারণ ছাড়াই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী আমার গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় গেইটে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সেক্রেটারি গ্রুপের একজন আমার কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবি করে।

ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই জবি ছাত্রলীগের সভাপতি সেক্রেটারি গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিজ দলে ভিড়ানোকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছিল গত ১২ মার্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের টিএসসিতে এ ঘটনা ঘটে। এতে দুই গ্রুপের অসংখ্য ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়েছিল। তখন ক্যাম্পাস এবং মালিটোলা পার্ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

তিন বছর পর গত ২ জানুয়ারি ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগামী এক বছরের জন্য ইব্রাহিম ফরাজীকে সভাপতি এবং আকতার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

রাষ্ট্রপতির ছেলের গাড়ি চালককে মারধরে অভিযুক্ত কৌশিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের গ্রুপের কর্মী বলে পরিচিত। কৌশিক ফেসবুক প্রোফাইলেও নিজেকে শাখা ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফেসবুক ওয়ালে সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের সঙ্গে তার ছবি ছাড়াও নিয়মিত ছাত্রলীগ-কেন্দ্রিক পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায়।

এর আগেও ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘প্রেমঘটিত’ কারণে মারামারির জেরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। সেই কমিটিও চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল।

(ঢাকাটাইমস/০১জুলাই/কেএম)