দুর্যোগকালে জরুরি ডিজিটাল সংযোগব্যবস্থা প্রবর্তণের উদ্যোগ

প্রকাশ | ০১ জুলাই ২০২২, ২৩:১৭ | আপডেট: ০১ জুলাই ২০২২, ২৩:১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

যেকোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে জাতীয় জরুরি ডিজিটাল সংযোগ ব্যবস্থা প্রবর্তণের জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণে কাজ করছে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নির্দেশে সচিব মো. খলিলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে দুর্যোগকালে ব্যবহারের জন্য কমার্শিয়াল সেলুলার নেটওয়ার্কের সক্ষমতা বৃদ্ধি, দুর্যোগকালীন সময়ে ব্যবহারের জন্য আপদকালীন পৃথক সেলুলার নেটওয়ার্ক স্থাপন, পোর্টেবল আইএমটি সলিউশন, স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবহার এবং প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য দুর্যোগ কবলিত এলাকায় ড্রোন ব্যবহার এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্তকরণ ইত্যাদি বাস্তবায়ণ কর্মপরিকল্পনার মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক বন্যায় ইন্টারনেটসহ টেলিযোগাযোগের ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ২৫টি সাইটের মধ্যে় এক হাজার ৯৩৩টি সাইট সচল করা হয়েছে। বাকি  ৯২টি সাইট দ্রুত সচল করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারে অচল  ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সচল রাখতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ১২টি এবং বিএসসিএল নিজস্ব ব্যস্থাপনায় আরও ২৯ টি ভিস্যাট হাব স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

২৯ জুন পর্যন্ত সেনাবাহিনী  ৯টি স্থানে এবং বিএসসিএল ২৩টি স্থানে ভিস্যাট হাব স্থাপন সম্পন্ন করেছে। আরও ৮টি ভিস্যাট হাব স্থাপনের জন্য কাজ চলছে। বিটিসিএল‘র ল্যান্ডিফোন সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা বাদে সিলেটসদরসহ জেলার সবকটি উপজেলায় সচল রয়েছে। এছাড়া হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা ও সুনামগঞ্জ জেলার ল্যান্ডফোন সংযোগ সচল করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলায় গ্রামীণফোনের ৩০৩টি সাইটের মধ্যে মধ্যে ২৭৭টি সচল করা হয়েছে। রবির ১৫১টি সাইটের মধ্যেো ১৪৭টি ডাউন হয়। এর মধ্যে ১৩৬টি সচল করা হয়েছে। বাংলালিংকের ৭৭টির মধ্যে্ ৭১টি সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৭০টি সচল করা হয়েছে। রাষ্ট্র্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের ৯৮টি সাইটের মধ্যে ৬৩টি সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ৫৫টি সাইট সচল করা হয়েছে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিলেটে গ্রামীণফোনের ৬১২টি সাইটের মধ্যে ৬৯০ টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬৯টি সাইট সচল করা হয়েছে। রবির ৪০৭টির মধ্যে ৩৩৪টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৯টি সচল করা হয়েছে। বাংলালিংকের ১৯৩ টির মধ্যে ১৬৯টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে  ১৬৬টি সচল করা হয়েছে। টেলিটকের ১২৭টি সাইটের মধ্যে ৬৮ টি সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৬৩টি সাইট সচল করা হয়েছে।

নেত্রকোণায় গ্রামীণের ১৮৫টির মধ্যে ৮৫ টি সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৭৯ টি সাইট সচল করা হয়েছে। রবির ১১৯টি সাইটের মধ্যে ৮৮টি সাইট  ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৮৭টি সাইট সচল করা হয়েছে। বাংলালিংকের ১৬৮ টি সাইটের মধ্যে ১২৫টি সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ১২৪টি সাইট সচল করা হয়েছে। টেলিটকের ৮৮টির মধ্যেই ৮২টি সাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ৭৮ টি সাইট সচল করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোণা এই তিন জেলায় ৪টি মোবাইল অপারেটরের মোট ২৫২৮ টি সাইটের মধ্যে বিদ্যুৎ –বিচ্ছিন্ন হয়ে বন্ধ হওয়া সাইটের সংখ্যাট ২৭৩টি। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এই দুটি জেলায় ৪টি মোবাইল অপারেটরের ১০৮৯ সাইটের মধ্যে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বন্ধ সাইটের  সংখ্যা ২৭৩ টি। বন্যার কারণে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায়  সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিটিসিএলের নেটওয়ার্ক ডাউন হয়। সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ সিলেট বিভাগের অন্যা্ন্য এলাকাসমূহে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ১০৫টি আইএসপির ৩৭৫ টি পপ এর মধ্যে ৩৩৯টি পপ কার্যকর রয়েছে। এছাড়া এনটিটিএন বাহন লিমিটেডের ২৯টি, ফাইভার এট হোম-এর ১৩৭ টি পপ কার্যকর আছে। সামিটের ২৬২টি পপের মধ্যে কার্য়কর আছে ২০৫টি।

বন্যাদূর্গত এলাকায় টেলিযোযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগ পুণরায় চালু করার লক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ মোবাইল নেটওয়ার্ক, অপটিক্যাল ফাইভার ট্রান্সমিশন ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ও ব্যানন্ডউইথ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সেল গঠন করে। বন্যাদুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং বিজিবির কার্যক্রমকে সহজতর করার লক্ষ্যে  বিটিআরসি‘র উদ্যোগে মোট ১৮টি টোল ফ্রি নাম্বার চালু করা হয়। এছাড়াও টেলিটক সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের বন্যার্তদের জন্য ফ্রি ১৫মিনিট টকটাইম, ২০টি এসএমএস ও ৫০০এমবি‘র একটি প্যাকেজ প্রদান করে।

(ঢাকাটাইমস/০১জুলাই/এমএইচ)