দ্যুতি ছড়িয়ে ‘হারিয়ে গেছেন’ যে নায়িকারা

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ জুলাই ২০২২, ১০:০৭

আকাশে কত তারা ওঠে, কত তারা ঝরে যায়। হঠাৎ আলোর ঝলকানি দিয়ে হারিয়ে যায় ধ্রুবতারা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের আকাশেও এমন কিছু ধ্রুবতারা ছিলেন, যারা দর্শক হৃদয়ে জেগে উঠেই হারিয়ে গেছেন। এখন বাস করছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। কেউ আবার চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তেমনি কয়েকজন হারিয়ে যাওয়া নায়িকাকে খুঁজে আনা হলো-

এক ছবির নায়িকা জেবা

১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয়ের আয়না’ সিনেমাটির কথা হয়তো অনেকেরই মনে নেই। সিনেমাটিতে তখনকার হিট নায়ক রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করেন নবাগত জেবা। মিষ্টি প্রেমের ওই সিনেমায় ‘হৃদয়’ চরিত্রে রিয়াজ এবং ‘আয়না’ চরিত্রে অভিনয় করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন জেবা। ওই এক সিনেমা করেই হারিয়ে যান এই সম্ভাবনাময়ী নায়িকা। আর কোনো সিনেমাতে তাকে দেখা যায়নি।

‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ নেই রাভিনা

নায়ক রিয়াজের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ধরা হয় ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ সিনেমাটিকে। ১৯৯৭ সালে মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ব্লকবাস্টার এ সিনেমায় রিয়াজের বিপরীতে অভিনয় করে নজর কেড়েছিলেন নবাগত রাভিনা। পরবর্তীতে রিয়াজের সঙ্গে আরও একটি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু সেটি ফ্লপ হয়। এরপর আর দেখা মেলেনি রাভিনার। এই নায়িকা কোথায় আছেন, তাও কেউ জানে না।

শিমলার পরিচয় এখনো ‘ম্যাডাম ফুলি’

বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক সম্ভাবনাময় নায়িকা ছিলেন শিমলা। যিনি অভিষেক সিনেমাতেই ‘ফুলি’ এবং ‘শিমলা’ নামের দুটি চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নিয়েছিলেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকনের ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ওই সিনেমা শিমলার অভিনয় দেখে অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধাই তাকে নিয়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর আলো ছড়াতে পারেননি এ নায়িকা। বরং ছড়িয়েছেন সমালোচনা।

২০১৫ সালে ‘নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প’ নামের একটি ছবিতে ১৫ বছরের এক বালকের নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচিত হন শিমলা। সিনেমাতে ওই বালকের সঙ্গে একাধিক যৌনদৃশ্যে দেখা গেছে তাকে। ‘ম্যাডাম ফুলি’র পর আর কোনো সিনেমাতেই সাফল্য পাননি এই নায়িকা। বহুদিন ধরে তার কোনো সিনেমা মুক্তিও পায়নি।

আলো ছড়িয়ে পৃথিবীই ছাড়েন অন্তরা

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে এসেছিলেন অন্তরা। ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর নির্মিত ‘সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমায় প্রবীর মিত্রের মেয়ের ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করেন তিনি। বড় হয়ে ‘পাগল মন’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেও ব্যাপক আলোচনায় আসেন অন্তরা। এরপর তিনি আরও বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেন। ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হঠাৎ তার মৃত্যু হয়। তবে অন্তরাকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেন তার পরিবার। চোখের আড়াল হলেও মনের আড়াল হননি অন্তরা। আজও অন্তরা রয়ে গেছেন বহু দর্শকের অন্তরে।

সব ছেড়ে সুইডেনে তামান্না

১৯৯৫ সালে আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় স্টারশিপের একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়ে মিডিয়াতে অভিষেক ঘটে চিত্রনায়িকা তামান্নার। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সাইফুল আজম কাশেম পরিচালিত ‘ত্যাজ্যপুত্র। এতে তার নায়ক ছিলেন বাপ্পারাজ। প্রথম সিনেমাতেই নজর কেড়েছিল তার অভিনয়। এরপর শহিদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভন্ড’তে কুংফু হিরো রুবেলের বিপরীতে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তামান্না। তার অভিনীত শেষ সিনেমা ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পাগল তোর জন্য রে’। এরপর হঠাৎই দেশ ছেড়ে, অভিনয় ছেড়ে সুইডেনে পাড়ি জমান নায়িকা। স্বামী নিয়ে স্থায়ীভাবে সেখানেই বসবাস করছেন।

সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি রত্না

২০০২ সালে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ‘কেন ভালোবাসলাম’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান রত্না। নায়ক ছিলেন ফেরদৌস। একই বছর কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’ সিনেমায় কাজী মারুফের বিপরীতে অভিনয় করে নজরে আসেন এই নায়িকা। প্রায় ৫০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে হঠাৎই ধস নামে রত্নার ক্যারিয়ারে। সেই ধসেই হারিয়ে যান সম্ভাবনাময় এই নায়িকা। এরপর ছোট পর্দায় অভিনয় করে টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। সেটাও পারেননি।

মান্নার মৃত্যুতে হারিয়ে যান নায়িকা একা

অভিনয় দিয়ে একসময় বেশ সাড়া ফেলেছিলেন চিত্রনায়িকা একা। নামী পরিচালক কাজী হায়াতের ‘তেজী’ এবং ‘ধর’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় প্রয়াত নায়ক মান্নার বিপরীতে তাকে দেখা গিয়েছিল। সে সময় এ জুটিকে বেশ গ্রহণ করেছিল দর্শক। কিন্তু মান্না মারা যাওয়ার পর একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করলেও নিজেকে আর মেলে ধরতে পারেননি একা। দীর্ঘ দিন তিনি অভিনয় থেকে দূরে। ছোট-বড় কোনো পর্দাতেই তার দেখা নেই।

সব ছেড়ে প্রবাসী ইরিন জামান

অভিনেত্রী ইরিন জামান অভিনয় জগতে আসেন ১৯৯৯ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমার মাধ্যমে। নায়ক ছিলেন বর্তমান সুপারস্টার শাকিব খান। দুজনেরই প্রথম সিনেমা ছিল এটি। ওই সিনেমাতেই যা একটু নজর কেড়েছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমীর ছোট বোন ইরিন জামান। এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমায় তাকে দেখা গেলেও সফলতা পাননি। প্রথম সিনেমার নায়ক শাকিব চলচ্চিত্রে রাজ করলেও হারিয়ে গেছেন ইরিন। স্বামী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে তিনি বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায়।

‘আয়নাবাজি’ করে আড়ালে মাসুমা রহমান নাবিলাও

এই তালিকার সবশেষ সংযোজন মডেল ও অভিনেত্রী নাবিলা রহমান। ২০১৬ সালে তার অভিনীত ‘আয়নাবাজি’ সুপারডুপার হিট হয়েছিল। সেটির প্রধান চরিত্রে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। তবে নাবিলার অভিনয়ও বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু প্রথম সিনেমার আকাশছোঁয়া সাফল্যের পরও গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি নাবিলাকে।

(ঢাকাটাইমস/০২ জুলাই/এএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :