শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘নিষিদ্ধ মোবাইল’, ব্যবহারে শাস্তি কী?

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৫ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২২, ২০:১৬

মো. মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম, ঢাকাটাইমস

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দেওয়া এ নিষেধাজ্ঞা নড়াইলের এক ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর জারি করা মাউশির এ নির্দেশনা নতুন করে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মনে করিয়ে দিয়েছে নড়াইলের শিক্ষা অফিস। অনেক শিক্ষার্থী গোপনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করায় তাদের সতর্ক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমানের দেওয়া সেই নির্দেশনায় শাস্তির কথা উল্লেখ থাকলেও কি ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে তা বলা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এস এম ছায়েদুর রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘অপরাধের মাত্রা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রথমে তার মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হবে। পরে অভিভাবকদের জানানো হবে। মুচলেকা নেওয়া হতে পারে।’

‘এমনকি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে অপরাধের মাত্রা বুঝে টিসিও দেওয়া হতে পারে। মোট কথা তার অপরাধের মাত্রা বুঝে বিভিন্নভাবে শাস্তি হতে পারে’—যোগ করেন নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রবীর কুমার রায় ঢাকা টাইমকে বলেন, ‘এটি যেহেতু শিক্ষা অফিস থেকে জারি করা নির্দেশনা তাই তারাই এ বিষয়ে বলতে পারবেন।’

এদিকে এই ধরনের শাস্তি কতোটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি এই সিদ্ধান্তকে ‘খামখেয়ালি’ বলেই মনে করছেন।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনজিল মোরশেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই ধরনের সিদ্ধান্ত যারা নেন তারা মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতো ব্যবস্থা নেন। ব্যথা সারাতে কিন্তু মাথা তো কাটা যাবে না।’

এই ধরনের সিদ্ধান্ত সরকারের পলিসি, ডিজিটাল পলিসি, ডিজিটালাইজেশনের বিপরীতে যায় মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, ‘এটা কোন ধরণের সিদ্ধান্ত আমি জানি না। আমি এটাকে সুচিন্তিত বলবো না হুইমজিক্যাল সিদ্ধান্ত বলবো।’

এভাবে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলেও মনে করেন মনিজল মোরশেদ। বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত টিকবে বলেও আমার মনে হয় না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত আরও কমপ্লিকেশন (জটিলতা) সৃষ্টি করবে।’

সম্প্রতি নড়াইলে ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে। এরপরই মাউশির জারি করা নির্দেশনা নতুনভাবে মনে করিয়ে দিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস।

তাদের নির্দেশনায় বলা হয়েছে—

>>মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ ও মাদরাসার দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন আনতে পারবে না।

>>মোবাইল না আনার নির্দেশনাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের তৎপর থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ চেক করা যেতে পারে।

>>কোনো শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে তা জব্দ করাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

>>মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ঈদের ছুটির পর নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর শ্রেণিকক্ষে কার্যকরী পাঠদান ও শিখন-শেখানো কার্যক্রম ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ও গতিশীল করতে’ মোবাইল ফোনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাউশি।

সেই আদেশে বলা হয়েছিল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করছেন বা শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। এতে শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানো কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শ্রেণির কার্যক্রমে মনোযোগী হতে পারছে না। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।’

(ঢাকাটাইমস/০২জুলাই/ডিএম)